পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতার জন্য সারাদেশে এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অংশ হিসেবে প্রায় লকডাউনের মতোই চলছে। এমতাবস্থায় জনসমাগম খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে নিয়ম দিয়েছেন তা আমাদের মেনে চলতে হবে। কোরআন-সুন্নাহও আমাদের এসব সতর্কতা মেনে চলার বাধ্যতামূলক বিধান দিয়েছে।
তাই আজ জুমার জায়গায় নিজ নিজ অবস্থানে জোহর পড়ে নিব। সাধারণভাবে জুমা এ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নামাজির জন্য ওয়াজিব নয়। জামে মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও নিকটস্থ গুটিকয়েক মুসল্লি স্বাস্থ্যসুরক্ষার নীতি মেনে অতি সংক্ষেপে শুধু খুৎবা ও জুমা সেরে নেবেন।এভাবেই দারুল উলুম দেওবন্দ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অনুরোধে দেশবরেণ্য মুফতিগণ, সর্বভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড, মুফতি খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি, আল্লামা মুফতি তাকি উসমানীসহ উপমহাদেশের বিশিষ্ট ফিকাহবিদগণ নির্দেশনা দিয়েছেন। যেসবের ফতোয়া ও নির্দেশনার বিভিন্ন ভাষার কপি অনলাইনে দেওয়া আছে। দৈনিক ইনকিলাবকে টেলিফোনে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সচেতন নাগরিক, সমাজের বিশিষ্টজন ও মসজিদের খতিবগণ যেসব বিষয়ে লেখার জন্য বলেছেন এর দু’একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো:
১. যেখানে জুমা হবে প্রত্যেকেই ঘর থেকে অজু-ইস্তেঞ্জা করে সুন্নত, নফল ঘরে পড়ে শুধু খুৎবা ও জুমার জন্য যতদূর সম্ভব কম সময়ের জন্য মসজিদে আসবেন। সবাই স্বাস্থ্যসুরক্ষা নীতি কঠোরভাবে মেনে চলবেন। হাতে হাত বা বুকে বুক মেলাবেন না। হাঁচি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা থাকলে অবশ্যই মসজিদে আসবেন না। কারো হাঁচি এসে গেলে তা রুমাল, টিস্যু বা নিজের হাতায় নেবেন। কাতারের দূরত্ব ও মুসল্লিদের মধ্যকার ফাঁকা জায়গা নির্দেশনা মতো বাড়িয়ে নেবেন।
২.
২. বেশি বয়স্ক মুসল্লি ও শিশুরা জুমার দিনে আবেগে মসজিদে আসতে চান। কিন্তু এ ভাইরাস যাদের বয়স বেশি, রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি রয়েছে তাদের সহজে ঘায়েল করে। অতএব, ছোট্ট শিশু ও বয়স্ক মুসল্লিরা জুমায় আসবেন না। বাসায় জোহর পড়বেন।
৩. জুমার নামাজ যতদূর সম্ভব সীমিত মুসল্লি কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ করে সোজা ঘরে ফিরে যাবেন। বাংলা বয়ান দু’চার মিনিটে শেষ করে অতি সংক্ষিপ্ত খুৎবা দু’টি প্রদান করবেন। ছোট সূরা দিয়ে সংক্ষেপে জুমার দু’ রাকাত নামাজ পড়ে মুসল্লিদের ছেড়ে দেবেন। খুৎবায় আল্লাহর প্রশংসা, রাসুল সা. এর উপর দুরুদ, সালাম, কিছু নসিহত ও দোয়া থাকাই যথেষ্ট। এ জন্য হামদ-সানা দুরুদের পর নসিহত ও দোয়ার জন্য এক দু’খানা আয়াত ও হাদিস এবং মসনুন দু’একটি যিকর-দোয়া এবং তাসবীহ-ইস্তেগফার করে দেয়াই সংক্ষিপ্ত খুৎবার রূপরেখা। জরুরি অবস্থায় খুব ছোট সূরা ও কিছু আয়াত দিয়ে নামাজের কেরাত শেষ করতে হয়। যেখানে জুমা হবে সেখানে সুস্থ ও যুবক কিছু মুসল্লি সব নিয়ম মেনে এভাবেই জুমা পড়বেন। পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে লকডাউন উঠে গেলে সবাই ইনশাআল্লাহ প্রাণ খুলে দীর্ঘ সময় নিয়ে জুমা ও পাঞ্জেগানা জামাত আমরা পড়তে পারব।
৪. বাড়িতে বসে দোয়া-দুরুদের চেয়েও অধিক গুরুত্ব রাখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। নামাজগুলো পড়তে হবে। এর দ্বারা মানুষ আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়। হায়াত, দৌলত, রিজিক, রহমত, বরকতের জিম্মা তখন আল্লাহ নিয়ে নেন। বাড়িতে সবাই নামাজ পড়ার পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার, দোয়া, দুরুদ, জিকির ও তেলাওয়াতে সময় কাটাই।
৫. হাদিস শরীফে আছে, ‘আস ছাদকাতু তারুদ্দুল বালা’ অর্থাৎ দান-সদকা বালা মুসিবত রোধ করে। অতএব, নিজের চেনাজানা কাছে দূরের কিংবা যে কোনো অভাবী মানুষকে এ সময়ে সাহায্য সহযোগিতা করা সর্বোত্তম এবাদত। হাদিস শরীফে আছে, ঈমান ও ফরজ ইবাদতের পর সবচেয়ে বেশি সওয়াবের কাজ হলো কোনো মানুষের অন্তরকে খুশি করা। (কানজুল উম্মাল) এখানে অভাব দূর করা, জরুরি বস্তু কিনে দেয়া, ঋণমুক্ত করা, দুশ্চিন্তা দূর করার দ্বারা অন্তরকে খুশি করতে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের এ বিপদকে সামনে রেখে পশ্চিমা জগতের ধনকুবেররা কল্পনাতীত অংকের দান করছেন। চ্যারিটিতে তারা অনেক এগিয়ে। বহু তারকা নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন। নিজের হোটেলকে আশ্রয়স্থল বা হাসপাতাল বানিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই বিশ্ব মিডিয়ায় এসব খবর আসছে। বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষ দানের ইবাদত কম-বেশি করে যাচ্ছেন। এখানে বিখ্যাত ধনবান, বিত্তশালী ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, নেতা-সমাজপতিসহ পয়সাওয়ালা পেশাজীবীদের এখনই এগিয়ে আসার সময়। মানবতার সেবা মানুষকে বিবেকের কাছে ভারমুক্ত করে। হায়াত, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি, সর্বোপরি আখেরাতে মুক্তি নিশ্চিত করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।