বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার কারণে পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্র নিয়ে বসবাস করে। আর এরকম অবস্থায় মানুষের জীবন বিধান কিরূপ হবে তা আল্লাহ তায়ালা কোরআন এবং রাসূল (সা.)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
তবে অধিকাংশ মানুষ তা জেনেও গাফেল থাকে আর বাকী অংশ কখনো জানার চেষ্টা করে না। ফলে অজ্ঞতা আর নাফরমানী গোটা মানব জাতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনে বিপদাপদ : পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ তায়ালা ফরয করেছেন। যখন কেউ নিয়মিতভাবে ফরয নামায আদায় করে তখন সে আল্লাহ তায়ালার জিম্মায় চলে যায়। অপরদিকে বান্দা যখন ইচ্ছাকৃত ও জেনে বুঝে ফরয নামায ছেড়ে দেয় তখন সে আল্লাহর জিম্মা তথা দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে যায় এবং তখন সে নিজের ও সৃষ্টির দায়িত্বে থেকে যায়। ফলে এই অবস্থায় তার যেকোনো দুরবস্থা ঘটতে পারে। হাদিসে এসেছে, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফরয নামায ছেড়ে দিলে তার ওপর থেকে আল্লাহ তায়ালার দায়িত্ব উঠে যায়। (ইবনে মাজাহ)। সুতরাং বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মতো আদায় করতে হবে।
নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি : হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যে জাতি-স¤প্রদায়ে (তথা সমাজে) প্রকাশ্যে অশ্লীল কর্ম সম্পাদিত হতে থাকবে, তাদের মাঝে অবশ্যেই প্লেগ বিস্তার লাভ করবে এবং এমন ধরনের রোগ-ব্যাধি ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে, যা তাদের বাপ দাদাদের মাঝেও কখনো হয়নি। (ইবনে মাজাহ)। বর্তমান পৃথিবী তার অন্যতম উদাহরণ। আমাদের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে চাল-চলন, জীবন-যাপন সব কিছুতে অশ্লীলতা। অশ্লীলতা এখন আর গোপনে নয় বরং প্রকাশ্যে বিলবোর্ডে, টেলিভিশনে, পার্টিতে সব জায়গায়। নগ্ন হওয়াকে বলা হয় সাহসিকতা, যিনাকে বলা হয় স্বাধীনতা আর নিজেকে অন্যের কাছে বিলিয়ে দেয়াকে বলা হয় সৌন্দর্য চর্চা। আর এত কিছুর ফলাফল কি হচ্ছে তা আমাদের চোখের সামনেই দৃশ্যমান। সুতরাং কঠিন এবং মহামারী রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনাকে দূর করতে হবে।
দুর্ভিক্ষ এবং আতঙ্ক : হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে জাতির মাঝে ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, তাদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে পাকড়াও করা হয়, আর যাদের মাঝে উৎকোচ (ঘুষ) বিস্তার লাভ করে, তাদেরকে পাকড়াও করা হয় ভীতি ও আতঙ্কের মাধ্যমে। (মুসনাদে আহমদ)। এই হাদিসটি দ্বারা একসাথে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। অর্থাৎ দুর্ভিক্ষের কারণ ব্যভিচার, আর আতঙ্কের কারণ ঘুষ। সুতরাং এসব বিপদ থেকে মুক্তি পেতে হলে এসব খারাপ কাজ পরিহার করতে হবে।
বিপদাপদের কারণ এবং মুক্তির উপায় : আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি দয়া এবং অনুগ্রহ করেন। আমাদের জীবনে বিপদাপদ আসার অন্যতম কারণ আল্লাহর অবাধ্যতা। তবে কিছু কিছু বিপদাপদ আসে মুমিন বান্দাকে পরীক্ষা করার জন্য। যাই হোক একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই বিপদাপদ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করে। আর এসব বিপদাপদ মুমিনের জন্য রহমত স্বরূপ।
বিপদাপদ থেকে মুক্তির জন্য করণীয় : বেশি বেশি দান-সদকা এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত আদায় করা। নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা। নিয়মিত তওবা-ইস্তেগফার করা। আল্লাহর জিকির করা। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। ফরয হুকুম পালনের পাশাপাশি নফল আদায়ে গুরুত্ব দেয়া। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা। দোয়া কান্না-কাটি করা। ইসলামের সকল হুকুম পালন করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।