বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই সবকিছু আল্লাহর পক্ষ হতে আপতিত হয়ে থাকে। মানুষের আল্লাহ দ্রোহিতা ও নাফরমানির কারণে আসমানি ও জমিনি বালা-মুসিবত এসে থাকে।
এগুলোকে বলা হয় আল্লাহর পরীক্ষা। মানুষের পাপাচারের কারণে আগেকার নবী-রসূলগণও নানা রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করেন। উম্মতে মোহাম্মদীর ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা কয়েক ক্ষেত্রে পরীক্ষার আগাম বার্তা দিয়েছেন এবং এগুলোতে উত্তীর্ণ হতে পারলে তাদের জন্য সুসংবাদও দিয়েছেন এবং এ সফলকামদেরকে ‘ছাবেরীন’ বা ধৈর্যশীল বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিপদে যারা ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস করে বিপদের মোকাবেলা করে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কার রয়েছে। এ সম্পর্কে কোরআনের সূরা বাকারা’য় বর্ণিত একটি আয়াতের আলোকে আমাদের পরবর্তী আলোচনা।
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। আর সুসংবাদ দাও সবরকারীদের, যখন তারা বিপদে পতিত হয় তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। (আয়াত: ১৫৫-১৫৬)। প্রথম আয়াতে যে পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে; (১) ভয়, (২) ক্ষুধা, (৩) মালের ক্ষতি, (৪) জানের ক্ষতি (প্রাণ হানি), (৫) ফল-ফসলের ক্ষতি। নিম্নে বিষয়গুলো আলাদা ভাবে দেখানো হলো:
ভয়ভীতি: প্রথম বিষয়টি ‘খওফ’ অর্থাৎ ভয়ভীতি, আতঙ্ক ইত্যাদি এ শব্দের অন্তর্ভুক্ত। পরীক্ষা করার অর্থ কিভাবে এ অবস্থা বা পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায়। ভয় বলতে বহু প্রকারের ভয়াতঙ্ক হতে পারে। ভয়ের যত প্রকারভেদ আছে, সবগুলোর দ্বারা একসঙ্গে পরীক্ষা করা আল্লাহর ‘আদত’ বা নিয়ম নয়। যে কোনো ধরনের ভয়ভীতির সঞ্চার করা কিংবা কিছু কিছুর দ্বারা পরীক্ষা করা।
আয়াতে যে ‘খওফ’ বা ভয়ের কথা বলা হয়েছে, কোরআনের ভাষ্যকারগণ-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর মতে ‘খওফ’ অর্থ শত্রুর ভয়। এ অর্থ অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য শত্রুর ভয় সব সময়ই লেগে আছে। শত্রুতা বহু প্রকারের হতে পারে। শত্রুদের থেকে সাবধানে থাকার ব্যাপারেও নানা প্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে হলে প্রস্তুতি আবশ্যক। হজরত ইবনে আব্বাস (রা:)-এর ব্যাখ্যাটি সুদূরপ্রসারী, অর্থবোধক ও তাৎপর্যময়। কেননা সে যুগে যেমন ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু কম ছিল না, তেমনি পরবর্তী কালেও যুগে যুগে এ শত্রুপক্ষ মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে সর্বদা এবং সর্বত্র বিদ্যমান। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে যে, এ শত্রুরা কিভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের সর্বনাশ করার তৎপরতায় লিপ্ত। তাই আল্লাহতাআলা মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়েছেন। অনস্বীকার্য যে, ইসলামের ক্ষতি সাধনে মুসলমানদের শত্রুরা সর্বত্র সর্বদা ওঁৎ পেতে আছে, তাদের মধ্যে প্রকাশ্য শত্রু যেমন রয়েছে, খোদাদ্রোহী, মোনাফেক, মোশরেক, ছদ্মবেশী ইত্যাদি সব রকমের শত্রুই রয়েছে। তাদের ব্যাপারে মুসলমানদের সর্বদা সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিষয়টি বিষদ ব্যাখ্যার দাবি রাখে, তবে এক কথায় বলা যায়: শত্রুভীতি আল্লাহর পক্ষ হতে একটি পরীক্ষা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।