পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
করোনাভাইসের প্রভাবে ২০২০ সালে ১ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গবেষণা সংস্থাটি বলছে এ সময় বৈশ্বিক সাপ্লাইচেইনে ব্যাঘাত ঘটবে, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়বে এবং প্রবৃদ্ধি হ্রাসের শঙ্কা রয়েছে। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। করোনায় সচেতন থাকতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটি। বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে পুঁজিবাজারে সাময়িকভাবে কয়েকদিন লেনদেন বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের পূর্বাভাস প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়া এ ভাইরাসের কারণে কমবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ছাড়াও ভাটার টান দেখা যাবে, প্রবাসী আয় ও রাজস্ব আদায়ে। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি কমার শঙ্কা বাড়ছে উন্নত দেশগুলোতেও।
‘করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, যেসব দেশে আমদানি-রফতানি করা হয় তার সবগুলোই করোনায় আক্রান্ত। ফলে সামগ্রিকভাবে বহির্খাতে যে পারফরম্যান্স তাতে সামনের দিনগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসের প্রতিবেদন তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে এখনই নেতিবাচক প্রভাব দেখছি। এটা সামনে আরও নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিটওয়ারে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ ঋণাত্মক, ওভেনওয়ারের ক্ষেত্রে পাঁচ দশমিক নয় শতাংশ ঋণাত্মক, হোম টেক্সটাইলে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ ঋণাত্মক। এ থেকে সহজেই বুঝতে পারছি আগামী কয়েক মাসে এটা আরও ঋণাত্মক হতে পারে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালেরেমিটেন্স ভালো ছিল। কিন্তু আগামীতে রেমিটেন্সেও নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরবরাহের সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশে সাপ্লাই চেইনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দামে মোটামুটিভাবে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব দেখছি। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে। টিসিবির ডাটা থেকে আমরা দেখছি- ডাল, মাছ, মুরগি, তেল, রসুন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রেও সরবরাহজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বারবার নিম্নমুখী রিভার্স করছে বিশ্ব অর্থনীতির। এখন তারা বলছে ২০১৯ সালে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল তার চেয়ে শূন্য দশমিক এক পয়েন্ট কম হবে ২০২০ সালে। ২০২১ সালে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ কম হবে। আইএমএফ বলছে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা জিডিপিতে এক দশমিক ছয় শতাংশ প্রভাব ফেলবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তারা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। তাদের প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া নিম্নআয়ের মানুষদের প্রতিও সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সিপিডির সিনিয়র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজরের সমস্যা অনেক আগে থেকেই। তবে করোনাভাইরাসের কারণে অবস্থা আরও খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোলনে সরকার দুটো উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন। আর একটি হচ্ছে নতুন করে সর্বনিন্ম দামের ওপর সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে বড় পতন ঠেকানো। তিনি বলেন, এই দুটি উদ্যোগের কারণে আপতত পুঁজিবাজার নিন্মপর্যায়ে এসে থেমে আছে। কিন্তু পুঁজিবাজারের জন্য যে মূল সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ না নেয়া হলে পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো হবে না। বাজারকে ভালো করতে প্রাথমকি গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার করতে বিও অ্যাকাউন্টগুলো সংস্কার, ফিন্যানন্সিয়াল রিপোটিং ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সংস্কার এবং সেকেন্ডরি মার্টেকে লেনদেনে ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ফলে সরকার চলতি অর্থবছরের ৮ দশমিক ২ শতাংশের যে প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা নিয়েছে তা না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।