পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের নদীগুলোতে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে এক দিকে যেমন শুকিয়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে পানি দূষিত হওয়ার কারণেও নদী মরে যাচ্ছে। অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে ৪৭টি নদীর গতিপথে ছোট-বড় ৫শতাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। ভারতের দেয়া বাঁধের কারণে নদীর প্রবাহ চরমভাবে ব্যহত হয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের ১৫৮টি নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। প্রাকৃতিক ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। অনেক নদ-নদীতে পানির প্রবাহ ঠিকই থাকলেও, দূষিত হয়ে নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগী নেই। এসব নদীর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী এবং বালু নদী। বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে দেশ।
নদী রক্ষার নানা পদক্ষেপ নিতে আদালত থেকেও সরকারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নদী খনন ও রক্ষায় বছরজুড়েই নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। কিন্তু ক্ষমতার আশীর্বাদে দখল ও দূষণ শেষ পর্যন্ত প্রায় অপ্রতিরোধ্যই থেকে যায়। নদী রক্ষার কাজটি প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। যার পরিণতি ধীরে ধীরে নদী শুকিয়ে যাওয়া। দেশে গত ৫৭ বছরে ১৫৮টি নদী শুকিয়ে গেছে। ১৯৬৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত কমল, সেই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষা ২০১০ সালে প্রকাশ করে বাংলাদেশ দুর্যোগ ফোরাম।
পানি সম্পদ উপ-প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ইনকিলাবকে বলেন, দেশের নদী রক্ষায় বর্তমান সরকার যে পরিমান কাজ করছে তা দেশ স্বাধীন হওযার পরে কোনো সরকার করেনি। দেশের নদী গুলোর প্রাণ ফিরে পাক আমরা সেভাবে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেশের কোন নদী যে শুকে না যায় সে জন্য খনন কাজ শুরু করা হয়েছে।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ইনকিলাবকে বলেছেন, তিস্তা-গঙ্গা নদীর পানি আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তিস্তা নদীর পানির অভাবে উত্তরবঙ্গ মরুভ‚মিতে পরিণত হতে চলেছে। কোটি কোটি মানুষ পানি থেকে বঞ্চিত। কৃষকরা হাহাকার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি বা প্রবাহ না থাকায় বিলীন হওয়ার পথে দেশের এক-তৃতীয়াংশ নদী। বর্ষাকালে প্রবাহমান থাকা অর্ধেকের বেশি নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। সারা বছরই চলে চাষাবাদ। বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে এগুলোকে আর নদী বলে মনে হয় না। আবার অনেক নদী বিলুপ্ত হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে গেছে। মৃত্যুর প্রহরও গুনছে অনেক নদী। এর মধ্যে রয়েছে, বগুড়ার করতোয়া, কুমিল্লার গোমতি, পিরোজপুরের বলেশ্বর, রাজবাড়ির হড়াই, কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা ব্রক্ষপুত্র ,গাইবান্ধার ঘাঘট, বান্দারবানের সাঙ্গু, খাগড়াছড়ির চেঙ্গী, নওগাঁর আত্রাজ এবং জামালপুরের ঝিনাই নদী। যে নদীগুলোকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই বুড়িগঙ্গাসহ এর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা এবং ধলেশ্বীর নদী দখল দ‚ষণের করুণ অবস্থার শিকার। এগুলোর অস্তিত্বও হুমকির মুখে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী মৃত্যুর পেছনে যেমন প্রাকৃতিক কিছু কারণ রয়েছে পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে এসব নদী আজ অস্তিত্বহীন হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। ফারাক্কা বাঁধ এবং তিস্তা ব্যারাজ এবং উজানে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার কারণে অনেক নদীর মৃত্যু ঘটছে। দেশের মধ্যে থাকা নদীগুলোতে চলছে সীমাহীন দখল উৎসব। তারা বলছেন মানুষ তার লোভ বা মুনাফার কারণে শুধু নদীর গতিপথই বদলে দিচ্ছে না। আঘাত করছে নদীগুলোর প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর। বুড়িগঙ্গা তুরাগ বংশী, বালু লৌহজঙ্গ এবং শীতলক্ষ্যা নদীর দুধারে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য গিয়ে পড়ছে এসব নদীতে। ফলে বিষক্রিয়ায় এসব নদী প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।
শুধু ফারাক্কার প্রভাবই নয়, উজানে বিভিন্ন নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া, প্রতি বছর বর্ষায় বিলিয়ন টন পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণেও ভরাট হয়ে প্রবাহ শ‚ন্য হয়ে পড়ছে নদীগুলো। স্বাধীনতার পর গত তিন দশকের বেশি সময়ে নদীগুলো বেশি করুণ অবস্থার শিকার হয়েছে। তবে মূলত ফারাক্কা বাঁধের কারণেই নদীগুলো এত তাড়াতাড়ি মরতে বসেছে। এছাড়া নদীতে প্রতি বছর এত পরিমাণ পলি জমছে যে তা পানির অভাবে বহন করে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
অন্য দিকে নদী, পানি–প্রকৃতি নিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন উত্তরণের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত ২০ বছরে (২০০০ থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত) দেশে ৪৩টি নদী শুকিয়ে গেছে। নদীতে নানা অবকাঠামো নির্মাণ ও দখলের কারণে নদীর মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। ভারত ৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমির সেচের চাহিদা মিটিয়ে যে পরিমাণ পানি ছাড়ে, তা দিয়ে বোরো মৌসুমে আমাদের সেচ চাহিদার অর্ধেকও পূরণ হয় না। ১৯৯৭ সালে বাংলদেশে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানিপ্রবাহ ছিল প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কিউসেক। তা ২০০৬ সালে নেমে আসে ১ হাজার ৩৪৮ কিউসেকে। ২০১৯ সালে পানিপ্রবাহ ছিল মাত্র ৭০০ কিউসেক।
১৯৯৩-৯৪ শস্যবছর থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি উপজেলায় ব্যাপকভাবে আউশ ও আমন উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্েয তিস্তার পানি দিয়ে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬-০৭ শস্যবছর থেকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্েয বোরো মৌসুমেও সেচ কার্যক্রম স¤প্রসারিত হয়। আমন মৌসুমে মোট সেচযোগ্য ৭৯ হাজার ৩৭৯ হেক্টর এলাকার প্রায় পুরোটাই সেচের আওতায় আনা সম্ভব হলেও বোরোর ক্ষেত্রে পানির দুষ্প্রাপ্যতায় সেচ-সাফল্যের চিত্র একেবারেই হতাশাজনক। শুকনো মৌসুমে ভারতের পানি প্রত্যাহারের পর তিস্তা নদীতে যে সামান্য পানি পাওয়া যায়, তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্েয তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের পর থেকে ৯৭ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তা নদীতে পানিও থাকছে না। এ কারণে তিস্তা অববাহিকার বাংলাদেশ অংশের এই বিশাল পরিমাণ নদীগর্ভ পরিণত হচ্ছে বালুচরে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকার পর শুকনো মৌসুমে এভাবেই নদী মরে যাচ্ছে।
দেশের নদ-নদীর পানির গুণগত মান কেমন, তা নিয়ে ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত ১৪৩টি গবেষণা সমীক্ষার ফলাফল ম‚ল্যায়ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক মো. খালিদ হাসাদ, আবরার শাহরিয়ার ও কুদরত উল্লাহ। তাঁদের বিশ্লেষণ ২০১৯ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী হেলিয়ন–এ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দেশের ৩২টি নদীতে নানা মাত্রায় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত ধাতু পাওয়া গেছে বুড়িগঙ্গা নদীতে। এরপরই বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে এসব দ‚ষিত পদার্থ পাওয়া গেছে।
দেশের নৌপথের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ), নদীর তীর রক্ষা ও খননের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের, নদীর জমির মালিক হিসেবে তার ইজারা দিচ্ছে ভ‚মি মন্ত্রণালয়। নদীর পানির মান দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। মৎস্যসম্পদ দেখে মৎস্য অধিদপ্তর। নদীতে থাকা কুমির, ডলফিনের মতো প্রাণী সুরক্ষার দায়িত্বে বন বিভাগ। আবার নদী থেকে সেচের ব্যবস্থা ও রাবার ড্যাম বিশেষ ধরনের বাঁধ তৈরি করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। নদী থেকে পানি তুলে পরিশোধন করে তা শহরে সরবরাহ করছে ওয়াসা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর সামগ্রিকভাবে নদী রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গত মাসেই ৩৯ হাজার ৫৫৮ জন নদী দখলদারের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দখলদার রয়েছে কুমিল্লা জেলায়। এসব দখলদারের মধ্যে দেশের অনেক প্রভাবশালী শিল্প গ্রুপ, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিবিদের নামের তালিকা রয়েছে।
স¤প্রতি বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করার অভিযানে সরকারদলীয় এমপি হাজি সেলিম ও তুরাগ দখলমুক্ত করার সময় এমপি আসলামুল হকের বাধা দেওয়ার ঘটনায় নদীর ভ‚মি দখলে রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি সামনে এসেছে।
পরিবেশ সংগঠন বাপাসার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, নদীগুলো দ্রুত মারা যাচ্ছে, ওদের বাঁচাতে চাই। নদী যদি বিনষ্ট হয় তা হলে আমরাও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হব। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সর্বোচ্চ সংকটের দেশও বাংলাদেশ। নদীরক্ষা আমাদের বেঁচে থাকার ও ভাল থাকার প্রধান চাবিকাঠি।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ইনকিলাবকে বলেন, যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে ন্যায়ভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রতি বছর চারটি মিটিং হবে। কিন্তু এখন ১০ বছরেও একটি মিটিং হয় না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, জীবনযাত্রার জন্য পানির প্রয়োজন। পানির প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করা অমানবিক অপরাধ। আর ভারত এই মানবতা বিরোধী কাজটি করছে।
সাউথ এশিয়া ইয়ুথ ফর পিচ অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি সভাপতি অধ্যাপক সাজ্জাদুল হক ইনকিলাবে বলেন, স্বাধীনতার পরে দেশে এখন পর্যন্ত শতাধিক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। মৃত্যুর প্রহর গুনছে আরও অনেক নদী। তবে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের নদ নদী সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।