Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বিপদ: দেশে দেশে পঙ্গপালের হানা

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী বিস্তার ব্যাপক উদ্বেগ ও শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কবে নাগাদ এই বালা থেকে বিশ্ববাসী রেহাই পাবে, একমাত্র আল্লাহই জানেন। এর মধ্যেই এক নতুন মুসিবত এসে হাজির হয়েছে। দেশে দেশে পঙ্গপালের হানা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, জিবুতি, উগান্ডা, দক্ষিণ সুদান, জর্দান, মিশর, সউদী আরব পঙ্গপালের আক্রমণের শিকার হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল ঝাঁপিয়ে পড়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ধান, গম, যব, ভুট্টাসহ ফসলাদি খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জর্দান, পাকিস্তান ও সোমালিয়া জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ক’দিন আগে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, পঙ্গপালের ঝাঁক ইসরাঈল ও ভারত অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করেছে এবং অচিরেই এই দু’দেশে গিয়ে পৌঁছাবে। জাতিসংঘের মতে, বিপুল সংখ্যক পতঙ্গ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গত ৭০ বছরের ইতিহাসে পঙ্গপালের এমন আক্রমণ ও ফসল ধ্বংসের ঘটনা ঘটেনি। জাতিসংঘের তরফে জানানো হয়েছে, জিবুতি ও ইরিত্রিয়ায় ৩৬ হাজার কোটি পতঙ্গের আক্রমণে খাদ্যনিরাপত্তা অভূতপূর্ব হুমকির মুখে পড়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, এর ফলে গোটা অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

পঙ্গপালের টার্গেট খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল। বলা হয়ে থাকে, ১০ লাখ পঙ্গপালের একটি ঝাঁক ফসলের ক্ষেতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক দিনের মধ্যে ৩৫ হাজার মানুষের খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একজন ভাষ্যকার বলেছেন, মাঝারি ধরনের একদল পতঙ্গ নিউইয়র্কের জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নিমিষে নিঃশেষ করে দিতে পারে। স্মরণ করা যেতে পারে, কীটপতঙ্গনাশক কোনো ওষুধই পঙ্গপালের ওপর তেমন একটা কার্যকর হতে দেখা যায় না। পঙ্গপালের সংখ্যা বাড়ে অবিশ্বাস্যহারে এবং এর গতি একদিনে দেড়শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কোনো দেশ বা জনপদ পঙ্গপালের আক্রমণে প্রধানত দুটি ক্ষতির শিকার হয়। প্রথমত: খাদ্যশস্য ধ্বংস হওয়ায় খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয়ত: অর্থনীতি সম্পূর্ণ পঙ্গু হয়ে পড়ে। বলা যায়, বিভিন্ন দেশে পঙ্গপালের হানা বিশ্বের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য যেমন মারাত্মক হুমকি, তেমনি অর্থনীতির জন্যও।

পঙ্গপালের উৎপত্তি এবং বিস্তারের কারণ ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যা-ই থাক, এটা যে একটি প্রাকৃতিক বালা, তাতে সন্দেহ নেই। প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক মহান আল্লাহতায়ালা। তাঁর ইচ্ছা, ইঙ্গিত ও নির্দেশ ছাড়া কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে না। ঝড়ঝঞ্ঝা, প্লাবন, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, খরা, বজ্রপাত, ভূমিধস কিংবা করোনা, সার্স ইত্যাদি যে বিপর্যয়ই আপতিত হোক না কেন, তার পেছনে আল্লাহর ইশারা রয়েছে। তিনি এসব বালা-মুসিবত দিয়ে তার অবাধ্য-অনাচারী বান্দাদের সতর্ক করে থাকেন। শাস্তিও দিয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনে লুতের সম্প্রদায়, আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতির ধ্বংসের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। অবাধ্যতা, অনাচার-পাপাচার ও মূর্তিপূজার জন্যই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।

আজকের বিশ্বে আল্লাহতায়ালা ও রাসূলের (সা.) অবাধ্যতা, কামাচার-পাপাচার, শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-জুলুম, অবিচার-দুঃশাসন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, আল্লাহর আযাব ও গজব নেমে আসা মোটেই অসম্ভব নয়। সকলকে সতর্ক করা ও সত্য অস্বীকারকারীদের শাস্তি দেয়ার উপায় হিসেবে পৃথিবীতে দুর্যোগ বিপর্যয় সৃষ্টি আল্লাহর বিধানেরই অংশ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত কোনো বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা তাগাবুন :১১)।

পঙ্গপালের উৎপত্তি-উপদ্রব আল্লাহর দেয়া আজাব বিশেষ। রাসূল সা. এর কোনো কোনো হাদিসে পঙ্গপালকে আল্লাহর ফৌজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ফেরাউনের কিবতি জাতিকে পঙ্গপালের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। পঙ্গপাল কিবতিদের ক্ষেত-খামারের শস্য ও বাগবাগিচা বিনাশ করে। ঘরের জানালা-দরজা এমনকি পোশাক-আশাক পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। এতে কিবতিদের অশেষ দুঃখ-কষ্ট হয়। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং অনেকেই মারা যায়। শেষ পর্যন্ত তাদেরই অনুরোধে হযরত মুসা (আ.) পঙ্গপাল যেদিক থেকে এসেছিল, সেদিকে ফিরিয়ে দেন। তারা রেহাই পায়।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, মানুষের কৃতকর্মের জন্য জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। সূরা রুম : ৪১। বলা বাহুল্য, করোনা কিংবা পঙ্গপালের আক্রমণের ঘটনা থেকে স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন লোকদের সতর্ক হওয়ার ও শিক্ষা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আসুন, আল্লাহতায়ালা ও রাসূল (সা.)-এর বাধ্য হই। সমস্ত পাপাচার-অনাচার থেকে নিজেদের দূরে রাখি। কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অবশ্যই এটা সত্য, তিনিই একমাত্র হেফাজতকারী ও পরম দয়ালু।



 

Show all comments
  • Emran ১ মে, ২০২০, ৭:৫৫ এএম says : 0
    পঙ্গপাল sobdoti kon vasha?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন