বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কবর যিয়ারত করা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা সুন্নাতে নাবুবী সা.-এর অন্তুর্ভুক্ত। এর ওপর মুসলিম উম্মাহর ইজমা বা ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এর বিপরীত ধারণা পোষণ করা ঈমানদারের লক্ষণ নয়।
পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে স্বীয় আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। মহান আল্লাহপাক তাকে যিয়ারতের অনুমতি প্রদান করেন এবং তিনি স্বীয় আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে তার কবরস্থানে গমন করেছিলেন। হযরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি আমার আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আল্লাহ আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি কবরস্থানে গমন করলাম এবং আম্মাজানের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করার অনুমতি চাইলাম। আল্লাহপাক দোয়া করার অনুমতি প্রদান করেননি। (মুসনাদে আহমাদ)।
এই ঘটনার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সা. কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। অনুমতি লাভ করার পর তিনি কবর যিয়ারত করার নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত বুরাইদাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন আমি বলছি তোমরা কবর যিয়ারত করো। (সহীহ মুসলিম)।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ সা. কবর যিয়ারতের তরিকাও মুসলমানদের শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে করে তারা সহীহ শুদ্ধভাবে কবর যিয়ারত করতে পারে। হযরত বুরাইদাহ রা. হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মুসলমানদের শিক্ষা দিতেন তারা যখন কবরস্থানে গমন করে তখন যেন এরূপ বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দিয়ারে অর্থাৎ, হে কবরবাসী মুমিন মুসলিমগণ, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা ও মাগফেরাত কামনা করছি।’ (সহীহ মুসলিম)।
বস্তুত প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত কোনো কবরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করার কালে কবরবাসীদের সালাম দেয়া এবং তাদের জন্য দোয়া করা। হযরত আব্বাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদীনার কিছু সংখ্যক কবরের পাশ দিয়ে গেলেন। কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় সে দিকে মুখ করে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, অর্থাৎ, হে কবরবাসীরা, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহপাক যেন আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেন। তোমরা তো আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তরসূরী।’ (জামে তিরমিজী : ইমাম তিরমিজী বলেন, এটি হাসান (উত্তম) হাদীস)।
উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে জানা যায় যে, মুমিন মুসলমান পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করার বৈধতা সম্পর্কে কোনোই দ্বিমত নেই। তবে মহিলাদের ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও আত্ম সম্বরণের মাত্রা কম বিধায়, রাসূলুল্লাহ সা. তাদের কবর যিয়ারত করাকে অপছন্দ করতেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের ভর্ৎসনা করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ)।
এই ভর্ৎসনার কারণ হলো, বেশিরভাগ মহিলা কবরস্থানে গমন করে আহাজারি, রোনাজারি, বিলাপ, চিৎকার শুরু করে দেয়। যা সুন্নাতে নাবুবীর খেলাপ। কিন্তু মহিলারা যদি ধৈর্যসহকারে পর্দা-পুশিদাসহ কবর যিয়ারত করতে চায়, তাহলে করতে পারে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মাইছারাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর রা. মক্কার বাইরে ইন্তেকাল করেছিলেন। তার শবদেহ মক্কা মোয়াজ্জামায় আনয়ন করা হয় এবং মক্কার কবরস্থান জান্নাতুল মোয়াল্লায় তাকে সমাহিত করা হয়। তারপর উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রা. তার কবর যিয়ারত করেন এবং তার জন্য দোয়া-মোনাজাত করেন ও তার শোক প্রকাশে কাসিদা পাঠ করেন। (আদদুররাতুল লামিয়া)।
এই বর্ণনার আলোকে স্পষ্টতঃই অনুধাবন করা যায় যে, পাক-সাফ ও সংযতপন্থায় মহিলারাও কবর যিয়ারত করতে পারেন। এতে দোষের কিছুই নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।