Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কবর যিয়ারত করা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

কবর যিয়ারত করা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা সুন্নাতে নাবুবী সা.-এর অন্তুর্ভুক্ত। এর ওপর মুসলিম উম্মাহর ইজমা বা ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এর বিপরীত ধারণা পোষণ করা ঈমানদারের লক্ষণ নয়।
পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের দরবারে স্বীয় আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। মহান আল্লাহপাক তাকে যিয়ারতের অনুমতি প্রদান করেন এবং তিনি স্বীয় আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে তার কবরস্থানে গমন করেছিলেন। হযরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি আমার আম্মাজানের কবর যিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আল্লাহ আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি কবরস্থানে গমন করলাম এবং আম্মাজানের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করার অনুমতি চাইলাম। আল্লাহপাক দোয়া করার অনুমতি প্রদান করেননি। (মুসনাদে আহমাদ)।

এই ঘটনার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সা. কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। অনুমতি লাভ করার পর তিনি কবর যিয়ারত করার নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত বুরাইদাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু এখন আমি বলছি তোমরা কবর যিয়ারত করো। (সহীহ মুসলিম)।

বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ সা. কবর যিয়ারতের তরিকাও মুসলমানদের শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে করে তারা সহীহ শুদ্ধভাবে কবর যিয়ারত করতে পারে। হযরত বুরাইদাহ রা. হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মুসলমানদের শিক্ষা দিতেন তারা যখন কবরস্থানে গমন করে তখন যেন এরূপ বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দিয়ারে অর্থাৎ, হে কবরবাসী মুমিন মুসলিমগণ, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমরা আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা ও মাগফেরাত কামনা করছি।’ (সহীহ মুসলিম)।

বস্তুত প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত কোনো কবরস্থানের নিকট দিয়ে গমন করার কালে কবরবাসীদের সালাম দেয়া এবং তাদের জন্য দোয়া করা। হযরত আব্বাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. মদীনার কিছু সংখ্যক কবরের পাশ দিয়ে গেলেন। কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় সে দিকে মুখ করে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, অর্থাৎ, হে কবরবাসীরা, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহপাক যেন আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেন। তোমরা তো আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তরসূরী।’ (জামে তিরমিজী : ইমাম তিরমিজী বলেন, এটি হাসান (উত্তম) হাদীস)।

উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে জানা যায় যে, মুমিন মুসলমান পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করার বৈধতা সম্পর্কে কোনোই দ্বিমত নেই। তবে মহিলাদের ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও আত্ম সম্বরণের মাত্রা কম বিধায়, রাসূলুল্লাহ সা. তাদের কবর যিয়ারত করাকে অপছন্দ করতেন। হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কবর যিয়ারতকারী মহিলাদের ভর্ৎসনা করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ)।

এই ভর্ৎসনার কারণ হলো, বেশিরভাগ মহিলা কবরস্থানে গমন করে আহাজারি, রোনাজারি, বিলাপ, চিৎকার শুরু করে দেয়। যা সুন্নাতে নাবুবীর খেলাপ। কিন্তু মহিলারা যদি ধৈর্যসহকারে পর্দা-পুশিদাসহ কবর যিয়ারত করতে চায়, তাহলে করতে পারে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু মাইছারাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর রা. মক্কার বাইরে ইন্তেকাল করেছিলেন। তার শবদেহ মক্কা মোয়াজ্জামায় আনয়ন করা হয় এবং মক্কার কবরস্থান জান্নাতুল মোয়াল্লায় তাকে সমাহিত করা হয়। তারপর উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রা. তার কবর যিয়ারত করেন এবং তার জন্য দোয়া-মোনাজাত করেন ও তার শোক প্রকাশে কাসিদা পাঠ করেন। (আদদুররাতুল লামিয়া)।
এই বর্ণনার আলোকে স্পষ্টতঃই অনুধাবন করা যায় যে, পাক-সাফ ও সংযতপন্থায় মহিলারাও কবর যিয়ারত করতে পারেন। এতে দোষের কিছুই নেই।



 

Show all comments
  • Golam Rabbani ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
    মা-বাবা দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর সন্তান মা-বাবার জন্য বেশী বেশী দু‘আ করবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দু‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কী দু‘আ করবো তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে- رَبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “কবরের ওপর তোমরা বসবে না এবং তার দিকে ফিরে নামায আদায় করবে না।” (মুসলিম)
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “তোমরা তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরস্থান বানিয়ে নিওনা, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।” (মুসলিম)
    Total Reply(1) Reply
    • AMIR HOSSAIN ২২ মার্চ, ২০২০, ১:৩৮ পিএম says : 0
      Thanks for comments but need ref.
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
    জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়, যা সৎকর্মের জন্য সহায়ক। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন তোমরা যিয়ারত করতে পারো।” (মুসলিম)
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ওসমান ১৪ মার্চ, ২০২০, ১:২৭ এএম says : 0
    আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব। আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে তাদের নিকট কোন প্রার্থনা কিংবা তাদের কোন দুআ কামনা করব না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন