পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুঃশ্চিন্তায় চিকিৎসক সঙ্কট
বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বাংলাদেশও রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। প্রায় ২শ’ জনকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। আমাদের সংবাদদাতাদের তথ্যে প্রতিবেদন : নাছিম উল আলম, বরিশাল থেকে জানান : বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদর হাসপাতালে করনো আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেডসহ আইসোলেসন ওয়ার্ড তৈরী করা হয়েছে। এমনিতেই চিকিৎসক সঙ্কটের সাথে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশী রোগীদের ভার বইছে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলো। তার সাথে করনো ভইরাসের মত একটি স্পর্শকাতর রোগের চিকিৎসা কতটা আলাদাভাবে করা যাবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ইতোমধ্যে বাজার থেকে ভালমানের মাস্ক উধাও হয়ে গেছে। ৫টাকা দামের টিস্যুÑমাস্ক বিক্রী হচ্ছে ৩০ টাকায়। বেশীরভাগ সার্জিক্যাল দোকানে কোন মাস্ক নেই। গত বুধবার বরিশালে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত অতিরিক্ত দামে মাস্ক বিক্রীর দায়ে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ছাড়াও ৩০ টাকার বেশী দামে তা বিক্রী করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে এর পরেই ৫ টাকার মাস্ক ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া ছাড়াও ভাল মানেরগুলো বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভাগীয় পরিচালক সহ ৬টি জেলার সিভিল সার্জনদের সাথে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নব নির্মিত একটি ভবনের নিচ তলায় ১২৫ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। ২১জন চিকিৎসক ছাড়াও প্রয়োজনীয় নার্সদের একটি প্যানেল তৈরী করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. বাকির হোসেন। তার মতে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বিগত দিনে যেভাবে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে, তার চেয়েও ভালভাবে করোনা মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি রয়েছে।
তবে চিকিৎসক সংকট, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটিসহ সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে নতুন জটিলতা তৈরী করতে পারে। বরিশাল শের বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিজস্ব ২২৪টি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসক পদের বিপরিতে কর্মরত আছে মাত্র ৯৯জন। ৬৬% পদেই কোন চিকিৎসক নেই। এর বাইরেও কয়েকজন ওএসডি হয়ে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত আছেন। উপরন্তু মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদমর্যাদার যেসব চিকিৎসক থাকার কথা সেখানেও অর্ধেকের বেশী পদ শূন্য পড়ে আছে। অপরদিকে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৪২টি উপজেলার মধ্যে ৩৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালের জন্য মঞ্জুরীকৃত ১ হাজার ১৫১টি চিকিৎসক পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮১১জন। এমনকি শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫শ থেকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও তার চিকিৎসক সহ সার্বিক জনবল মঞ্জুরী আগের পর্যায়েই রয়েছে। অনুরূপভাবে পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালগুলো ৫০ থেকে ১শ’ শয্যায়, অবার কোনটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তার চিকিৎসক মঞ্জুরী রয়েছে আগের পর্যায়েই। ১৬টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও চিকিৎসকসহ জনবল বাড়েনি। এমনকি পুরনো জনবলেরও অর্ধেক চিকিৎসক পদ শূণ্য। পটুয়াখালীর রাংগাবালী ও বরগুনার তালতলী উপজেলায় কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা সরকারী চিকিৎসা সুবিধাই গড়ে ওঠেনি আজ পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাশ জানান, দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ৩ থেকে পাঁচ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়েও ২টি করে শয্যা আলাদা করে রাখা হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৪শ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর পরেও যে সংকট রয়েছে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয় অবগত আছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়: ইতালি ফেরত সাতজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাবকে জানান, গত ৮ মার্চ ওই সাতজন দেশে ফিরেন। তাদের শারীরিক কোন সমস্যা না থাকলেও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সুস্থ আছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বিদেশ ফেরত যাত্রী ও নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা আরও জোরদার করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ইতালি ফেরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কমল দে কে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। ওই শিক্ষক বিদেশ থেকে এসে সরাসরি বিভাগে যোগ দেয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান : কুড়িগ্রামে করোনা ভাইরাস সংক্রমন সতর্কতায় বিদেশ ফেরত এক প্রবাসী বাংলাদেশীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত রোববার দুবাই থেকে দেশে আসলে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পৌর এলাকার নিকটবর্তী একটি ইউনিয়নের বাসিন্দা ৮ মার্চ দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন। এ তথ্য জানার সাথে সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ওই ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ করে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যাক্তির ওপর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নজরদারি রাখা হচ্ছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে জেলার সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের চীন ফেরত দুই বাসিন্দাকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে করোনা আক্রান্তের কোনও লক্ষণ পাওয়া না যাওয়ায় গত ২০ ফেব্রæয়ারি তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত করা হয়।
সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা পুরো জেলায় নজরদারি রাখছি। বিদেশ ফেরত কারও খোঁজ পেলে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে নজরদারি রাখা হচ্ছে। এছাড়াও সম্ভাব্য সংক্রমণ মোকাবিলায় আমরা প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রেখেছি।
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : ঠাকুরগাঁয়ের রাণীশংকৈলে হাসপাতালে দায়সারাভাবে করোনা ভাইরাস কর্নার প্রস্তুত রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ভাইরাস মোকাবেলায় হাসপাতালের ৩য় তলার একটি কেবিন প্রস্তুত করে রেখেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলার পূর্ব-দক্ষিণ কোনে একটি রুমে এ-ফোর সাইজের একটি কাগজে দরজায় আঠা দিয়ে লাগানো রয়েছে ‘নোভেল করোনা ভাইরাস রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্ণার’। ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, অপরিচ্ছন্ন একটি রুমে নেই কোন পর্দা, বালিশের কভার, নেই বিছানার চাদর, মাত্র দু’টি বেড। অস্বাস্থ্যসম্মত একটি বাথরুম।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প:প: কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুস সামাদ চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে আরএমও ডা: ফিরোজ আলমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্েয ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে করোনা ভাইরাসের জন্য একটি ইউনিট নির্মাণ করা হবে। সেই সাথে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কক্ষে থাকা বিছানার কভার, পর্দা, বালিশের কভার নতুন লাগানো হবে। এবার আরএমও ডা:ফিরোজ আলম বলেন, প্রতিদিন বিছানার চাঁদর পাল্টানো হয়। কক্ষটি নিয়মিত পরিস্কার পরিছন্ন রাখা হয়। করোনা ভাইরাসের রুগী আসলে আমরা জরুরীভাবে চিকিৎসাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানা পুলিশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১২.০৩.২০) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এ বিষয়ে উপজেলার ৭টি উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরিস্কার পরিছন্ন থাকা, মুখে টিস্যু পেপার দিয়ে হাঁচি দেয়া ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুর ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনা বাড়াতে আমরা এ কর্মসূচী হাতে নিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।