Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ শহীদ জিয়া সেখানে সফল - রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২০, ১২:২৯ পিএম

আওয়ামী নেতারা তো জিয়াউর রহমানকে সমালোচনা করবেনই মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ সেখানে শহীদ জিয়া সফল হয়েছিলেন। এদেশের মুক্তিকামী জনগণ ও জিয়াউর রহমান যে বাংলাদেশের জন্য লড়েছিলেন সেটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, আর শেখ হাসিনার চেতনায় রয়েছে কর্তৃত্ববাদী, সংকীর্ণতাবাদ ও একদেশদর্শী দর্শণ। সেকারণে তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান সহ্য করতে পারে না।

বুধবার (১১ মার্চ) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবিরাম স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে কুৎসা ও মিথ্যাচার করে চলছেন। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে অবমাননাকর উক্তি করে তিনি উল্লসিত বোধ করেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গত ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষককে হেয় প্রতিপন্ন করতে গিয়ে বলেছেন “স্বাধীনতার ঘোষক যাকে সাজানো হয়েছে, সে সরকারের চার’শো টাকা বেতনের কর্মচারী ছিল। কোথাকার কোন মেজর এসে বাঁশিতে ফুঁ দিল আর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল, এটা কি কখনো সম্ভব ? কোনো মেজরের বাঁশির ফুঁতে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়নি বা দেশ স্বাধীন হয়নি।”

রিজভী বলেন, এই কথা বারবার বলার অর্থই হচ্ছে সেই মেজরের ভূমিকা আপনাদের শুধু ম্লানই করেনি আতঙ্কিত করে রেখেছে। কারণ এই বাস্তব সত্যকে আপনারা নানাভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলেও ইতিহাসের আনন্দিত উচ্চারণ সেদিনের মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষনা। স্বাধীনতার সংকটময় মূহুর্তে সেই সময়ের মেজর জিয়ার ঐতিহাসিক দেদীপ্যমান ভূমিকাতে তাই পরবর্তীতে হয়তো বা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সেই মেজরকে স্বাধীন বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্রধান না করে তাঁর জুনিয়র শফিউল্লাহ সাহেবকে সেনাবাহিনী প্রধান করা হয়েছিল।

বিএনপির এই নেতা বলেন, পাকিস্তানীদের ভাতা নিয়ে কত কথাই না বলা যায়, কিন্তু ঝগড়ার স্টাইলে চাপাবাজী করে স্বাধীনতার সত্যিকার ইতিহাসকে লুকানো যাবে না। স্বার্থলোভী ও ভেকধারীরাই স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক অবদানকে খাটো করে। ৪০০ টাকার মেজর জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেছেন বলেই আজ আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের নাগরিক। ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ রাত একটা থেকে রাত সোয়া দুইটার মধ্যে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম পোর্ট এরিয়াতে ঘোষণা করেন, উই রিভোল্ট! আমরা বিদ্রোহ করলাম! এই বিদ্রোহের বিবরণ প্রকাশিত হয় তারই জবানীতে, দৈনিক বাংলায় ২৬ মার্চ ১৯৭২-এর স্বাধীনতা সংখ্যায়। দৈনিক বাংলা ছিল সরকারি পত্রিকা। অর্থাৎ জিয়ার এ লেখাটি ছিল মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রকাশিত। এটাই সত্য যে, ২৫ মার্চ রাত একটা থেকে সোয়া দুটোর মধ্যে জিয়া বিদ্রোহ ঘোষণা করে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। এরপর ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যখন স্বাধীনতা ঘোষনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করার দুঃসাধ্য কাজটি করতে এগিয়ে এসেছিলেন ৩৬ বছরের তরুণ যুবক মেজর জিয়াউর রহমানই। যার টানে তিনি এ কঠিন কর্তব্যটি করলেন, তার নাম ‘দেশপ্রেম’ এবং ‘জনগণের প্রতি ভালোবাসা’। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জীবন বাজী রেখে দেশের স্বাধীনতা ঘোষনা না করলে আজকে দেশের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারতো। মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস প্রমাণ করতে আদালতের রায়ের প্রয়োজন হয় না। এই ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধে যারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন ও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের অসংখ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে, এই ইতিহাস মানুষের হৃদয়ে গ্রথিত হয়ে আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজদ মিয়া’র লেখা বইয়েও সেটির উল্লেখ আছে। প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এর কন্যা শারমিন আহমদ রচিত ‘নেতা ও পিতা’ বইয়েও স্বাধীনতার ঘোষকের কথা উল্লেখ আছে সেটি আপনি কিভাবে মুছে দেবেন ?
রিজভী বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা, ‘৭১ এর বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ আবদুস সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতরা কেউ বিশাল বড় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না কিংবা তাদের কেউ লাখ লাখ টাকা বেতনের কর্মকর্তা ছিলেন না, তারপরও তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় ন্যুয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ইতিহাসে তাদের ভূমিকা নির্ধারণে কিংবা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আদায়ে র‌্যাবের ভয় কিংবা আদালতের রায়ের প্রয়োজন হয়নি। ইতিহাস তাদের অম্লান অবদানের কথা নির্ধারণ করে রেখেছে। জনগণ তাদের গ্রহণ করেছে। এটাই ইতিহাসের শক্তি। আমরা মনে করি, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ইতিহাসে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াও গভীর শ্রদ্ধায় বেঁচে থাকবেন জনগণের হৃদয়ে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মেজর জিয়াউর রহমান ৪০০ টাকার কর্মচারীই ছিলেন। সব ‘সেক্টর কমান্ডার’ আর ‘বীর উত্তম’রা তাই ছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠরা অনেকে ছিলেন ২৫০ টাকার কর্মচারী। কিন্তু আমরা তাদের চিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের জন্য সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাদের। শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজে এ স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। বীরশ্রেষ্ঠ আর বীরোত্তম খেতাব তিনিই দিয়ে গেছেন তাদের। ৪০০ টাকা বেতনের মেজর জিয়া জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য করে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন বলেই আপনারা আজ স্বাধীন দেশ পেয়েছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিশে আছেন মানুষের হৃদয়ে-অন্তর জুড়ে। তাই যারা কটাক্ষ করে অপবাদ দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। ইতিহাসের চলমান গতিধারাকে কেউ যদি ক্ষমতা দেখিয়ে রুদ্ধ করতে চায় সেটি সাময়িকভাবে রুদ্ধ করা গেলেও ইতিহাসের গতিধারা অতীতেও কেউ পাল্টাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ