পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছিল লবণমাঠ। বঙ্গোপসাগর উপকূলে সেই লবণমাঠ খনন করে বানানো হচ্ছে জাহাজ চলাচলের কৃত্রিম নৌপথ বা চ্যানেল। এই নৌপথে এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খননযন্ত্র ‘ক্যাসিওপিয়া-ফাইভ’ বালুমাটি খুঁড়ে চলেছে। ঢেউ আর পলি জমা ঠেকাতে সাগরের দিকে নৌপথের দুই পাশে পাথর ফেলে তৈরি হচ্ছে স্রোত প্রতিরোধক পাথরের বাঁধ। তাতে এখনই সাগরের নীল পানি। সাগর থেকে এই নৌপথে ঢোকার মুখে হাতের ডানে নির্মিত হবে টার্মিনাল। নামে মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলেও বাস্তবে এই লবণমাঠেই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কক্সবাজারের মহেশখালি উপজেলার মাতারবাড়িতে এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কনেটেইনারবাহি জাহাজ, খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ও গভীর ড্রাফটের জাহাজ যাতে সহজে জেটিতে ভেড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সেজন্য মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে দুই হাজার ৬৭১ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে দুই হাজার ২১৩ কোটি টাকা। আর ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা)। একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে এটি হবে দেশের চতুর্থ সমুদ্র সমুদ্র বন্দর। বাকি তিনটি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর এবং পায়রা বন্দর। মন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেন নি। তবে সকলকে সাবধান থাকতে বলেছেন। এছাড়া বেশি করে ফল খেতে বলেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর কোন আবেগের জায়গা নয়। এটা প্রয়োজন। এই প্রকল্পের ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সব ব্যয় সরলীকরণ করলে হবে না।
মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণের খরচ বেশি ধরার যথেষ্ট কারণও আছে। যেমন পায়রা ও মাতারবাড়ির মধ্যে জমির মূল্য এক নয়। এছাড়া মাতারবাড়ির সড়ক কোন সাধারণ সড়ক হবে না। এগুলো মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো হবে। এটি আমদের স্বপ্নের প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে যে কয়টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে, তার কোনোটিই গভীর সমুদ্র বন্দর নয়। ফলে বড় বড় জাহাজগুলো বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। গভীর ড্রাফটের জাহাজ জেটি সুবিধা নিশ্চিত করতে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ দুই হাজার টিইইউএস কন্টেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ কলম্বো, জহরলাল নেহেরু, করাচি ও চেন্নাই বন্দরে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর করা হচ্ছে। এই সমুদ্র বন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি টার্মিনাল থাকবে।
এসব টার্মিনালে ১৬ মিটার ড্রাফটের আট হাজার টিইইউএস কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘের এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভিড়তে পারে না। যার ফলে বড় জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফলে ফিডার জাহাজে করে কনটেইনার আনা নেওয়া করতে হয়। এই কারণে খরচও বেড়ে যায়। দেশে যে হারে আমদানি রপ্তানি বাড়ছে, তাতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে মনে করছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান বলেন, একনেকে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটিসহ ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ২৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ১৫১ কোটি,বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৫ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা খরচ হবে। গতকাল একনেক সভায় এক হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে কচুয়া-বেতাগি-পটুয়াখালী-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করতে ২০১৬ সালে পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই চিঠির জবাব দিয়ে পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে চার বছর পর শীর্ষেন্দুর ইচ্ছা পূরণ হলো। শীর্ষেন্দু এখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রসঙ্গে গতকাল একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, ওইসময় চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র শীষের্›দু বিশ্বাসের দেওয়া চিঠির প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সব নদীতে যেন সেতু হয়। সে হিসেবে পায়রার নদীর উপরও সেতু হতো। কিন্তু শীর্ষেন্দুর চিঠি পাওয়ায় সেটি ত্বরান্বিত হয়েছে। মন্ত্রী জানান, একনেকে কৃষি মন্ত্রী জানিয়েছেন আপেল আমদানি কমে গেছে। কেননা মানুষ এখন দেশী বড়ই খাচ্ছে বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা বিশ্ব করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বের বাইরে নই। সুতরাং আমাদের এখানেও প্রভাব পড়বে। তবে কতটুকু প্রভাব পড়বে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই চীন থেকে অনেক ব্যবসা দেশে আসতে শুরু করেছে। এটি ইতিবাচক দিক। গতকাল একনেক সভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ৪১৯ কোটি টাকা খরচে লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, ৫৮৪ কোটি টাকা খরচে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলাধীন পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন যমুনা নদীর ভাঙ্গন হতে রক্ষা এবং তিন হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা পয়ঃনিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।