Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিসের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিল পরিবর্তন করে এসিল্যান্ডসহ প্রত্যেকের জাল স্বাক্ষর করা হয়
মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে
ঝিনাইদহের মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিসের ৪১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে স্থানীয় হিসাবরক্ষণ অফিসের সহায়তায় মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিসের নাজির কাম ক্যাশিয়ার মহিউদ্দীন আহম্মেদ ২০১২ সালের ২৯ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই টাকা তুলে নেন। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটির এক প্রতিবেদনে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নেয়ার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। মহেশপুরের এসিল্যান্ড চৌধুরী রওশন ইসলাম জানান, গত ২ মে মহেশপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সাবেক নাজির জাল স্বাক্ষর করে সরকারের বিভিন্ন খাতের ২২ লাখ টাকা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। মামলা দায়েরের পর তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৮টি নকল সিল উদ্ধার হয়। ঘটনা তদন্তে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খলিল আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় তিন সদস্যের একটি কমিটি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশাফুর রহমান ও ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক অফিসের সহকারী কমিশনার তাছলিমা আক্তার। গত ১৩ মে থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেন। ১৫ দিন তদন্ত শেষে গত ২৭ মে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তদন্ত কমিটি যৌথ স্বাক্ষরে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। যার স্মারক নং জেপ্রঝি/০৩-০৬/১৬-৩৭। চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে অপসারিত ও আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিসের নাজির কাম ক্যাশিয়ার মহিউদ্দীন আহম্মেদ ৪৬ মাসে ৬০টি বিলের মাধ্যমে ৪১ লাখ ১৬৬৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ১২৯ নং বিলের বিপরীতে মহিউদ্দীন টাকা তুলে নেন। তাকে সহায়তা করেন মহেশপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মহেশপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের টোকেন রেজিস্টারের ৪৬৩৩ ও ৪৬৩৪ নং কোডে এমন কিছু বিলের সন্ধান পাওয়া গেছে যা উপজেলা ভূমি অফিস থেকে পাঠানো হয়নি। এমন অনেক বিল স্বাক্ষর জাল করে তুলে নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ অফিস কোন যাচাইবাছাই করেনি। প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। কারণ মহেশপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস তদন্ত কাজে দায়িত্বশীলতার সাথে সহায়তা করেনি। অনেক বিলের নথি তারা অফিস থেকে গায়েব করে দিয়েছে। তদন্ত করার সময় সে সব বিল তারা দেখাতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে মহেশপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুজিত কুমার, অডিটর আব্দুল খালেক ও জুনিয়র অডিটর মোহাম্মদ আলী এই চক্রের সাথে জড়িত। জুনিয়র অডিটর মোহাম্মদ আলী বিভিন্ন সময় মহিউদ্দীনের কাছ থেকে ফ্রিজসহ নানা রকমের উপঢৌকন নিয়েছেন বলে কথিত আছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সরকারী অর্থের আমানতকারী। প্রতিটি খাতেই সরকারী বরাদ্দ সুনির্দিষ্ট। কেউ ইচ্ছা করলেই বেশি টাকা তুলতে পারে না। কিন্তু জালিয়াতি চক্রের প্রধান মহিউদ্দীন কীভাবে বিনা বাধায় বরাদ্দের অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির ভাষ্য প্রতি বছর হিসাবরক্ষণ অফিসে অভ্যন্তরীণ অডিট হয়। প্রত্যেক ডিডিও যোগদান করার পর তাদের নমুনা স্বাক্ষর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেন। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ অডিট যেমন প্রশ্নবিদ্ধ তেমনি স্বাক্ষর যাচাই না করে কীভাবে একজন বরখাস্তকৃত ক্যাশিয়ারের কাছে হিসাবরক্ষণ অফিস টাকা দিতেন এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক কর্তকর্তা জানান, মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিসের প্রধান সহকারী মোঃ খায়রুল ইসলাম এসিল্যান্ডকে না জানিয়ে বরখাস্তকৃত নাজির মহিউদ্দীনকে দিয়ে বিল করাতেন। এই বিলগুলো অফিস থেকে যাওয়ার মাঝ পথেই পরিবর্তন করতো মহিউদ্দীন। সেখানে এসিল্যান্ডসহ প্রত্যেকের জাল স্বাক্ষর করে নকল সিলমোহর ব্যবহার করা হতো। তবে এসব বিলে প্রধান সহকারী মোঃ খায়রুল ইসলামের অনুস্বাক্ষর নেই। এসব বিলে অ্যামবুশ সিল ব্যবহার করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় মহিউদ্দীনের সাথে মহেশপুর হিসাবরক্ষণ অফিসের কর্মকর্তারা জড়িত। এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুজিত কুমার জানান, এই জালিয়াতি ঘটনার সাথে তারা জড়িত নয়। তিনি বিলেন ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনেক এসিল্যান্ড, অডিটর ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি বেশি দিন এখানে আসেনি। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, এসিল্যান্ড অফিস একজন বরখাস্তকৃত নাজির দিয়ে বিল উঠানোর দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেছেন। এর দায়ভার তোর আমরা নেব না। তবে তিনি বিল গায়েব করার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিন বলেন উপরের নির্দেশ ছাড়া আমি এসব বিল দেখাতে পারি না। তদন্ত কমিটির প্রধান ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খলিল আহম্মেদ আমরা একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। সেখানে ৪১ লাখের কিছু বেশি টাকার গরমিল পেয়েছি। তিনি জানান, তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। মহেশপুর হিসাবরক্ষণ অফিস যেভাবে সহায়তা করার কথা সেভাবে করেনি। তারপরও আমরা আরো অনুসন্ধান চালাচ্ছি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতি চক্রের প্রধান মহিউদ্দীন কোটচাঁদপুর ইউএনও অফিসে চাকরি করার সময় জালিয়াতির দায়ে জিআর ২১/৯২ নং মামলায় ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত হন। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর সুপ্রিম কোর্টের ক্রিমিনাল আপিলের ১১৩৬/৯৯ নং মামলার রায়ে তিনি খালাস পেয়ে আবারো চাকরিতে যোগদান করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের ১০ লাখ দুর্নীতির মাধ্যমে উত্তোলনের দায়ে অপসারিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিসের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ