Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেত্রীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২০, ৪:৫৪ পিএম

বর্তমানে বিশ্বের সব জায়গা এখন নারীর পদচারণায় মুগ্ধ। রাজনীতিতেও সরব উপস্থিতি বর্তমান বিশ্বের নারীদের। তার সফল উদাহরণ হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৯ এর তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে মাত্র পাঁচ শতাংশ দেশ পরিচাল হচ্ছে নারীর নেতৃত্বে। তাদেরকেই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নারীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে রাজনীতি ও নীতিমালায় বিশ্বের ২২ শক্তিশালী নারীর নাম প্রকাশ করেছে ফোর্বস। এই তালিকায় মোট ২২ জনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামটি রাখা হয়েছে ছয় নম্বরে।

অ্যাঞ্জেলা মার্কেল
অ্যাঞ্জেলা ডোরোটেয়া মার্কেল হচ্ছেন জার্মানির বর্তমান চ্যন্সেলর। তিনি ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল জার্মানির মেকলেনবার্গ-ভোরপোমার্ন প্রদেশ থেকে জার্মান সংসদে সর্বাধিক সংখ্যক আসন জয়ের মাধ্যমে চ্যন্সেলর নির্বাচিত হন। মার্কেল ক্রিসচিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। ২০০২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সিডিইউ-সিএসইউ (ক্রিসচিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন)-এর সংসদীয় জোটের চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জার্মানির দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জার্মানির সমন্বয়ে গঠিত জোটের নেতৃত্ব দেন। ২০০৯ এর ২৭ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার দল সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়ী হয় এবং সিএসইউ ও ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে জোট সরকার গঠন করে। তার সরকার ২০০৯ এর ২৮ অক্টোবরে শপথ গ্রহণ করে।
২০০৭ সালে অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। স্বাস্থ্য সেবা সংস্কার এবং ভবিষ্যৎ জ্বালানী উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা তার মেয়াদকালের প্রধান চ্যলেঞ্জ। অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জার্মানির প্রথম নারী চ্যন্সেলর। ২০০৭ সালে তিনি মার্গারেট থ্যাচারের পর জি৮ এর দ্বিতীয় নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।

ক্রিস্টিন লেগার্ডে
২০১১ সালের ৫ জুলাই থেকে আইএমএফ এর প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন ক্রিস্টিন লেগার্ডে। তিনি জীবনের বিভিন্ন সময় বড় বড় পদে নিযুক্ত হয়ে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। তিনি সরকারি রাজনৈতিক ফোরাম জি-৮ এর প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী ছিলেন। একসময় তিনি ফরাসী সরকারের অর্থ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একমাত্র নারী ছিলেন যিনি অর্থনৈতিক পলিসিতে ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আইএমএফ-এ যোগদানের পূর্বে ডমিনিক দে ভিলেপিন সরকারের কৃষি ও মৎস্য মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদে নিযুক্ত ছিলেন লেগার্ডে। সেইসঙ্গে তিনি একজন ফরাসী আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। ১৯৮১ সালে শিকাগোভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন এই নারী। অতঃপর ১৯৯৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রথম নারী প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন লেগার্ডে। ২০০৪ সালে গেøাবাল স্ট্রাটেজিক কমিটির সদস্য হন। তিনি ফরাসী রাজনৈতিক শ্রেণীর একমাত্র সদস্য ছিলেন যিনি জিন পাল গারলাইন্স এর বর্ণবাদী মন্তব্যের নিন্দা জানান।

ন্যানসি পেলোসি
যুক্তরাষ্ট্রে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যানসি পেলোসি। তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নারীর তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান অভিশংসন কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হিসাবে তিনি হাউস স্পিকার ছিলেন। এছাড়াও বিশ্ব মঞ্চে সাম্প্রতিক জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে দাঁড়িয়েও এই নারী জোরালো কণ্ঠে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন কাজের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন।

উরসুলা ভন ডেয়ার লায়েন
উরসুলা ফন ডেয়ার লায়েন। তিনি একজন নারী জার্মান রাজনীতিবিদ। উরসুলায় প্রথম নারী যিনি ইউরোপীয় কমিশনের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৩ সাল থেকে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন এই নারী। উরসুলা ব্রসেলসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ এর দশকের শেষদিকে লন্ডনে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী হিসেবে তিনি পড়ালেখা শুরু করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে হ্যানোভার মেডিকেল স্কুল থেকে চিকিৎসক হিসাবে স্নাতক করার পরে, তিনি নারী স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিশেষীকরণ করেছেন।
এরপর ১৯৯০ এর শেষ দিকে তিনি হ্যানোভার অঞ্চলে স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যে সরকারের মন্ত্রিসভার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫-এ তিনি পরিবার বিষয়ক ও যুব মন্ত্রীর পদে প্রথম ফেডারেল মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত ছিলেন।

নিকোলা ফার্গুসন স্টারজিয়ন
২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে স্কটল্যান্ডের পঞ্চম প্রথম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিকোলা ফার্গুসন স্টারজিয়ন। তার জন্ম ১৯৭০ সালের ১৯ জুলাই। তিনি একজন স্কটিশ রাজনীতিবিদ। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম মন্ত্রী ও নেতা এই উভয় স্থানেই তিনি প্রথম নারী। ১৯৮৬ সালে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টিতে (এসএনপি) যোগ দেন।
এরপর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রচারক হিসেবে কাজ করেন। দ্রæতই তিনি দলের যুব বিষয়ক উপ-আহ্বায়ক এবং প্রচার উপ-আহ্বায়ক হন। গøাসগো শিটলস্টন আসনে এসএনপি প্রার্থী হয়ে ১৯৯২ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এবং স্কটল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ সংসদীয় প্রার্থী ছিলেন। যদিও তিনি এই আসনটি জিততে ব্যর্থ হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনি। বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। তার রাজনৈতিক কর্মজীবন প্রায় চার দশকেরও বেশি। ১৯৮১ সালে থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ ও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।
এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০১৮ সালে তার অবস্থান ছিল ২৬তমএবং ২০১৭ সালে ৩০তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।

নির্মলা সীতারামান
নির্মলা সীতারামান ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রী। তিনি একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, যিনি বর্তমানে অর্থমন্ত্রী এবং কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি ২০১২ সাল থেকে ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের রাজ্যসভার সদস্য। নির্মলা সীতারামান ইন্দিরা গান্ধীর পরে ভারতের দ্বিতীয় নারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। নির্মলা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। সেইসঙ্গে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী হিসাবেও কাজ করেছেন। এর আগে তিনি বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন।
নির্মলা সীতারামান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘ফ্রি থিঙ্কার’ নামে ছাত্র সংগঠন করতেন। সেখান থেকেই রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। ২০০৮ সালে তিনি বিজেপিতে তিনি যোগ দেন এবং দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে তিনি একটি জুনিয়র মন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর ২০১৪ সালের জুনে তিনি অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন।
১১ জুন ২০১৬ সালের রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করার জন্য মে ২০১৬ সালে বিজেপির মনোনীত ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। নির্মলা কর্ণাটক থেকে তার আসনে সফলভাবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। ২০১৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ইন্দিরা গান্ধীর পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৯ সালের ৩১ মে, নির্মলা সীতারামানকে অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়ের নারী অর্থমন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ