পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়ক পথে বিড়ম্বনা এড়িয়ে কম সময়ে গন্তব্য পৌঁছাতে উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এখন আকাশপথকে বেছে নিচ্ছেন। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব বিমান পরিবহনসংস্থা এখন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়াচ্ছে।
চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ব্যবসায় নেমেছে বেশ কয়েকটি কোম্পানি। কিন্তু সে হিসাবে বিমানবন্দরের অবকাঠামো সুবিধা না বাড়ায় বাড়েনি যাত্রীর সেবার মান। এই নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।
অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের অভিযোগ, তারা অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে তেমন সেবা পান না। বিমানবন্দরগুলোতে পৌঁছার পরই তাদের লাগেজগুলো বেল্টে আসার কথা। তারপর সেখান থেকে সেই লাগেজ নেয়ার কথা থাকলেও তা তারা পাচ্ছেন না। উল্টো লাগেজগুলো বিমান থেকে ট্টলি দিয়ে নামিয়ে আনার পর তা যাত্রীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এতে অনেক যাত্রী বিরক্ত এবং ক্লান্তও হয়ে পড়েন। কিন্তু সেই ক্ষোভের কথা তারা কাকে জানাবেন সেই মুহুর্তে বুঝতে পারেন না।
অনেক যাত্রী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কক্সাবাজার, সিলেট বা রাজশাহীর মতো পর্যটন নগরীতে বেড়াতে গেলে তারা ঝামেলা এড়াতেই কোনো ধরনের অভিযোগ করেন না। অভিযোগ করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হবে, যাত্রা পথে ভোগান্তি বাড়বে-নানা কারণেই চুপ মেরে থাকেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। এমন চিত্র শুধু ঢাকার বাইরের বিমানবন্দরগুলোতে নয়, খোদ রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্রও একই। শাহজালাল বিমানবন্দরে একই সঙ্গে কয়েকটি বিমান অবতরণ করলে লাগেজ পেতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। শাহজালালের ডোমেস্টিকে মাত্র একটি লাগেজ বেল্ট থাকায় দেশের বিভিন্ন রুট থেকে আসা যাত্রীদের দাঁড়িয়ে লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
মাঝেমাঝে বিমাবন্দরের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত কর্মীরা ট্টলি করে লাগেজ নিয়ে আসার পর যাত্রীদের হাতে তুলে দেন। ফলে, একই সঙ্গে কয়েকটি বিমান অবতরণ করলে লাগেজ নিয়ে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। এছাড়াও বিমানবন্দরে একসঙ্গে দাঁড়ানোর স্থানও সঙ্কুলান হয় না। অপেক্ষমাণ যাত্রী ও বোডিং হওয়া যাত্রীদের বসার জায়গাও পর্যাপ্ত নয় এসব বিমানবন্দরে। এছাড়া, টয়লেট, গাড়ি পার্কিংসহ অন্যান্য সুবিধাও অপর্যাপ্ত দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, দেশের বিমানবন্দরগুলো অনেক পুরনো। কিন্তু প্রতিনিয়ত আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের হার বাড়ছে। এ কারণে যাত্রীদের যথাযথা সুবিধা নিশ্চিত করা কঠিন। বিশেষ করে প্রায় একই সময়ে একাধিক ফ্লাইট থাকলে যাত্রীদের হ্যান্ডলিং করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সিভিল এভিয়েশনের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ১২ হাজার ৫২৬টি ফ্লাইটে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৪ সালে ২৪ হাজার ১২৭টি ফ্লাইটে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৯৮ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৫ সালে ৩২ হাজার ২১২টি ফ্লাইটে ৯ লাখ ১২ হাজার ৬৪৪ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৬ সালে ৩৮ হাজার ২০টি ফ্লাইটে ১০ লাখ ৩ হাজার ৩১ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৭ সালে ৩৮ হাজার ৫৭টি ফ্লাইটে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ জন যাতায়াত করেছেন। ২০১৮ সালে ৩৮ হাজার ৬৬টি ফ্লাইটে ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। ২০১৯ সালে ৩৯ হাজার ৯টি ফ্লাইটে ১১ লাখ ১১ হাজার ২২ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এভাবে প্রতিদিন যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলছে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে।
এ প্রসঙ্গে এয়ারলাইন্সটির মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও নভোএয়ারও, রিজেন্টসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলো রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন করছেন। গত বছর ঈদুল আজহার আগের দিন শাহজালাল বিমানবন্দরে সফিউল আলম নামের এক যাত্রী পা পিছলে পড়ে গুরুতর আহত হন। তিনি সৈয়দপুরগামী রুটের যাত্রী ছিলেন। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের কাছে চিকিৎসা সেবা চাইলে তারা যাত্রী সফিউল আলমকে তাৎক্ষণিক কোনো চিকিৎসা বা ওষুধপত্র কিছুই দিতে পারেননি। এমন কী এ সময় ওই যাত্রী পায়ে লাগানোর জন্য বরফ বা ঠান্ডা পানি চাইলে তাও দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতি বছর সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে যাত্রী সেবার মানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা অর্থ প্রদান করেন। সে অনুযায়ী প্রত্যেকটি বিমানবন্দরে একজন করে চিকিৎসক, প্রাথমিক চিকিৎসা, বেল্ট এবং অ্যাম্বুলেন্স থাকার কথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
এ বিষয়ে ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে দেশীয় রুটে যাত্রী অনেক বেড়েছে। আর তার চাপ পড়তে শুরু করেছে বিমানবন্দরগুলোতে। তবে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর কারিগরি ও অবকাঠামো সক্ষমতা বাড়াতে শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে জানায় বেবিচক কর্তৃপক্ষ। বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবির বলেন, অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে নতুন ভবনসহ রানওয়ের কাজ নেভিগেশনের কাজসহ প্রযুক্তিগত আপগ্রেড হচ্ছে।
গত কয়েকদিনে সরেজমিনে ঢাকা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল, যাত্রীদের কেউ কেউ শুধু টিকিট দেখিয়েই বিমানবন্দরে প্রবেশ করছেন। ফটো আইডি দেখার নিয়ম থাকলেও তা পালন হচ্ছে না বলে জানালেন বিমানে চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রী ব্যবসায়ী নুরু উদ্দিন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে উড়োজাহাজে ওঠার আগে কোনো ভোটার আইডি/পাসপোর্ট দেখতে চায়নি দায়িত্বরতরা। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সামনে কথা হয় নভোএয়ারওয়েজের যাত্রী ব্রিটেন প্রবাসী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিদেশি বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়, তা আমাদের দেশে যথাযথভাবে করা হয় না। দেশের মানুষ বলেই হয়ে তো কিছুটা বিশ্বাস করা হয়।
ব্রিটিশ এভিয়েশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিল্লিভিত্তিক লিয়াজোঁ অফিসার জন লাভসের প্রতিবেদনেও সেই চিত্র উঠে আসে। গত নভেম্বরে ঢাকা বিমানবন্দর পরিদর্শনের পর তিনি রিপোর্টে জানান, যাত্রীদের সঠিকভাবে স্ক্যানিং করা হয় না এবং মালামাল ট্যাগ করার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। বিমানবন্দরে যারা স্ক্যান করেন, তারা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকেন, বসে বসে টেলিফোনে কথা বলেন, অন্য লোকের সঙ্গে গল্প করেন, তাদের প্রশিক্ষণ নেই।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মী ২০ মিনিট স্ক্যান করার পর তাকে ৪০ মিনিট বিশ্রাম দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে লোকবল কম থাকায় এক বা দুই ঘণ্টা একটানা কাজ করতে হয়। বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ট্টেসিং মেশিনও কাজ করে না। বিষটির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক বোর্ড সদস্য ও ‘বাংলাদেশ মনিটর’ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘থিয়োরিটিক্যালি নানা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু প্র্যাক্টিক্যালি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর তার গলদ একটা ঘটনা ঘটার পরই ধরা পড়ে। দুষ্কৃতকারী ধরতে মানুষ ও যন্ত্রের সমন্বিত চেষ্টায় ঘাটতি আছে বলেই অস্ত্র নিয়ে বিমান ছিনতাই চেষ্টাও হয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ যাত্রী একসঙ্গে মিলবে কেন? স্মাগলিংসহ নানা অসাধু চক্র এর সুযোগ নিতে পারে। যাত্রী, পাসপোর্ট অদল-বদলের ঝুঁকিও থাকছেই।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় অভ্যন্তরীণ রুটে সেবার মান বাড়াতে দেশের মধ্যেই ফ্লাইটের সংখ্যা ও যাত্রীর সেবার মান বাড়ানোর কথা বলেন। অন্যদিকে বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সেবার মান নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালগুলো আধুনিকায়ন কাজ করা হবে বলে জানান। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও স্বল্প দূরত্বের আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালনার জন্য ২০২০ সালের জুনের মধ্যে নতুন তিনটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যোগ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।