Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্মসংস্থান না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয় : অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২০

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২০, ৯:২৬ পিএম
  • ফ্রিল্যান্সিং খাতে অনেক দূর এগিয়েছি : সালমান এফ রহমান

অর্থমন্ত্রীর কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আমার কাজ হচ্ছে এ দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করা, শক্তিশালী করা। আমি কাজটা ঠিকমতো করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে এসে পড়বে। আমি সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২০’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মসংস্থান না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ শুরু হয়ে গেছে। এজন্য বিভিন্ন খাতে যত ধরনের প্রণোদনা দেয়া দরকার, আমরা দিয়ে যাচ্ছি। ব্যাংকিং খাত নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে নন-পারফর্মিং লোন বেশি। এটার একটা বড় কারণ মাত্রাতিরিক্ত সুদ। এজন্য আমরা সুদহারকে একটা কাঠামোয় আনতে কাজ করছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, অর্থনীতির সবগুলো খাতেই আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এই অগ্রগতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ২০০৯ সালের পর। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং খাতেও আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।

বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সঞ্চয়ের বিভিন্ন সেবা হচ্ছে বালিশের নিচে টাকা রাখার মতোই। এগুলোর কোন বহুমুখী ব্যবহার নেই। এগুলো আমাদের মেইনস্ট্রিম ইকোনোমিতেও আসে না। কীভাবে এগুলোকে নিয়ে আসা যায়?- সেগুলোকে এনেছি সিস্টেম দিয়ে, আমরাতো গায়ের জোরে কিছু করতে চাইনি। তিনি বলেন, একটা সময় ক্ষুধা আর দারিদ্র্য ছিল আমাদের নিত্যদিনের চলার পথের সঙ্গী। সব দিক থেকেই দেশের মানুষের ওপর ছিল বঞ্চনা। এ জাতিকে বঞ্চনার গ্লানি থেকে মুক্ত করার জন্য, এ দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য জাতির পিতার আগমন। আমরা সৌভাগ্যবান। তিনি শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি, একটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য যা যা দরকার ছিল, তার সবই শুরু করে দিয়ে যান। জাতির পিতার রেখে যাওয়া কাজ, তারই দেখানো পথে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সঞ্চয় স্কিমগুলো ছিল এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। যাদের জন্য স্কিমগুলো আরম্ভ করা হলো, তারা সেগুলোর সঙ্গে তেমনভাবে সম্পৃক্ত নন। অন্যদিকে একটা শ্রেণী কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় স্কিম কেনা শুরু করল। আমরা তো এসব চাইনি। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকেই সঞ্চয় স্কিমগুলো প্রান্তিক মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে চাই। এজন্য আমরা পুরো ব্যবস্থাপনাটি অটোমেশনের উদ্যোগ নিয়েছি।

পুঁজিবাজার প্রসঙ্গ টেনে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার উঠবে নাকি নামবে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। আমার কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। আমি যদি এদেশের ক্ষুদ্র মৌলিক অর্থনীতিগুলোকে শক্তিশালী করি, তাহলে পুঁজিবাজারেও ভালো প্রভাব পড়বে। আমার কাজটি হচ্ছে, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি গতিধারা শক্তিশালী রাখা। এসব করতে পারলে আমাদের সকল অর্জন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি সব আমরা করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। অর্থনীতির সবগুলো খাতেই আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এই অগ্রগতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ২০০৯ সালের পর। এরপরের ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যতদূর এগিয়েছে, তা আগে কখনোই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এই অগ্রযাত্রা আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি, আমরা বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং খাতেও আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের এই পঞ্চাশ বছরে সন্নিকটে গর্ব করার মতো অনেক অর্জন আমাদের সামনে দৃশ্যমান। খুব গুরুত্ব দিয়ে যদি বলতে চাই মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। যাতে করে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার আমরা বেশ এগিয়ে যেতে পেরেছি। এমনকি আমরা যাদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি সেই পাকিস্তানের থেকে আমাদের অর্থিনৈতিক উন্নতি ঈর্ষনীয়। বর্তমান যে পাকিস্তান তার আমাদের চেয়ে অর্থনৈতিক গতি তরান্বিত করতে অক্ষম। মাথাপিছু আয়ে আমাদের এবং তাদের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। তবে আমাদের অনেক সুযোগ থাকার পরেও আমরা কেন ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকেও পিছিয়ে যাচ্ছি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের ব্যাকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী কারার দিকে নজর দিতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগসহগ অন্যান্য বিষষয়গুলোতেও খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু সামাজিক ন্যায় বিচার, সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে জিডিপি এশিয়ার সব দেশ থেকে বেশি। এটা আমাদের জন্য ভালো একটা খবর। প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের দক্ষতা নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া দেশে বাহির থেকে রেমিটেন্স আসলেও আমাদের দেশ থেকে বাহিরে যে রেমিটেন্স চলে যাচ্ছে সেটা নিয়ন্ত্রন করে দেশীয় লোক নিয়োগ দিয়ে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রন করার ব্যাপারে পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দক্ষতার অভাব, দুর্নীতি, ভালো লোকদের দায়িত্বশীল পদে না রাখাসহ নানা দুর্বলতা রয়েছে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ব্যাংকের সুদের হার ৯ ও ৬ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, এটা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে দেয়া যেতে পারতো। অর্থাৎ ৯ থেকে ১২-১৩ পর্যন্ত করা যেতে পারত। কিংবা ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত করা করা যেতে পারত। কিন্তু তা ৯ ও ৬ এর মধ্যে বেঁধে দেয়াটা বাস্তবসম্মত হয়নি। মুক্তবাজার অর্থনীতি এভাবে চলতে পারে না।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এখনো আমরা সেই তৈরি পোশাক খাত এবং রেমিট্যান্সের উপর নির্ভর করে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের প্রবৃদ্ধির নতুন খাত কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবার কথা বলেন তিনি। কৃষি বা লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবৃদ্ধির নতুন চালক হতে গেলে সেই ধরনের নীতি সহায়তার দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধির নতুন চালক খুঁজে না পেলে সেটা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ