পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা এখন উভয় সঙ্কটে পড়েছে। তারা না পারছে তাদের আদিভ‚মি মিয়ানমারের আরাকানের ভিটে বাড়িতে ফিরতে। আর না পারছে বাংলাদেশে অবস্থান করে ন্যূনতম মানবিক জীবনযাপন করতে। গুটি কতেক সন্ত্রাসীদের কারণে নানা ছুতোয় মারা পড়ছে নিরীহ রোহিঙ্গারা।
উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ১৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। মানবিক কারণে নির্যাতিত এত বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের নাগরিক এসব রোহিঙ্গা মুসলমানদের সম্মানের সাথে তাদের দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বিশ্ব সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ফেরত নিতে মিয়ানমারকে রাজি করানোর ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়েও গেছে।
কিন্তু কিছু কিছু বিপথগামী রোহিঙ্গা আমদের দেশি কিছু দুস্কৃতিকারীদের সাথে মিশে নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিতর্কিত করার ভূমিকায় নেমেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দুস্কৃতিকারীরা আশপাশের এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে, মাদক পাচার, মানব পাচার ও খুনসহ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরকার এবং স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হয়ে তাদের যে আশ্রয় দিয়েছিল সেই বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গত রোববার দিবাগত রাতেও টেকনাফে র্যাবের সাথে গোলাগুলিতে ৮ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। র্যাবের সূত্রমতে এরা সবাই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জকির বাহিনীর সদস্য। টেকনাফের মোচনী ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গভীর পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও র্যাবের মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন র্যাব।
র্যাব ১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের কমান্ডার লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে সন্ত্রাসী জকির বাহিনীর অবস্থানের খবর পেয়ে অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা র্যাব সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এসময় র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে জবাব দেয়। এতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জকির বাহিনীর ৮ সদস্য নিহত হয়।
উল্লেখ্য, টেকনাফের নয়াপাড়া, শালবাগান ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নিয়ে অস্ত্রধারী জকির বাহিনীসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ স্থানীয় দালালদের সাথে মানব পাচার, মাদক ব্যবসা, খুন অপহরণসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এর আগেও সন্ত্রাসীদের সাথে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলির একাধিক ঘটনা ঘটে। এতে রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরুল আলমসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এবং নিরাপত্তা বেষ্টনিতে থাকা রোহিঙ্গারা এভাবে মারা যাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন কিছু কিছু মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন। তাদের মতে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এর মাঝে তারা সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করে সেই মদদদাতাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত ইয়াবা পাচার, ডাকাতি, মানবপাচার ও খুন এবং সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা। আহত হয়েছে শত শত। মামলা হয়েছে কয়েকশ’।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হাকিম বাহিনীর সর্দার খ্যাত আব্দুল হাকিমকে ধরার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। র্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করে পাহাড়ে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত আব্দুল হাকিম ধরা পড়েনি। তবে এই বাহিনীর সদস্য অসংখ্য রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে হতাহত হয়েছে এবং আটক হয়েছে। তবে এদের অনেকেই সন্ত্রাসী কী না এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
এদিকে, বাংলাদেশি মানব পাচারকারী দালালেরা রোহিঙ্গা কিছু দালালদের সাথে মিশে সাগর পথে বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গাদের পাচারের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব পাচারকারী দালালেরা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই কাজ করছে। অধিকাংশ সময় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে তারা সাগরে ডুবিয়ে মারছে শত শত রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, প্রতি জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে মালয়েশিয়াসহ পার্শ্ববর্তী কোন দেশে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য দালালরা মাথাপিছু এক লাখ টাকায় চুক্তি করে থাকে। আর সেই চুক্তির অধিকাংশ টাকা নিয়েই বোটে করে তাদেরকে সাগরপথে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে নৌকাডুবির ঘটনা, মারা পড়ছে শত শত রোহিঙ্গা। সম্প্রতি সেন্টমার্টিনের অদূরে এ রকম একটি ঘটনায় নিহত হয়েছে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকেই।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মানবপাচারের কোটি কোটি টাকার ভাগ স্থানীয় দালাল, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত চুনোপুটি গ্রেফতার হলেও রাঘব বোয়ালরা রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। অথচ এর জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে নিঃস্ব রোহিঙ্গাদেরই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।