Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বারযাখের জগতে দেহ ও রূহের সম্পর্ক

এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২ মার্চ, ২০২০

আলমে বারযাখে আযাব ও শান্তি, সুখ ও দুঃখ, আনন্দ ও বেদনা, দেহ ও আত্মা উভয়ের উপরই প্রয়োগ হবে। কাজেই আত্মাসহ ইহলৌকিক উপাদাননির্ভর দেহ বারযাখের পুরস্কার-তিরস্কার, পরিতৃপ্তি-অতৃপ্তি ষোলআনাভাবে অনুভব করবে।

এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মৃত বান্দাহকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীগণ প্রত্যাবর্তন করে, তখনো তাদের জুতার শব্দ শোনা যায়, ইত্যাবসরে দু’জন ফেরেশতা আগমন করে তাকে (আল্লাহপাকের নির্দেশে জীবিত করার পর) তুলে বসায়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে..। (সহীহ বুখারী : খন্ড ১, পৃ. ১৮৩)।

আর এটাও সকলের নিকট সুবিদিত যে, নিদ্রামগ্ন ব্যক্তির রূহ দেহ হতে বের হয়েও দেহের সাথে সংযুক্ত ও মিলিত থাকে। এই সংযুক্তির ফলেই সে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পরিপূর্ণ রূপে অনুভব করতে পারে। (শরহে ফিকহে আকবর : পৃ. ১০১)। এই নিরীখে সকল সত্যাশ্রয়ী ওলামাগণ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবরে মৃত ব্যক্তিকে এক প্রকার জীবন দান করবেন।

যার ফলশ্রুতিতে সে সুখ-দুঃখ, তৃপ্তি-অতৃপ্তি অনুভব করবে। তবে একথা ঠিক যে, তখন আল্লাহপাক মৃত ব্যক্তির মাঝে কর্মক্ষমতা ও ক্রিয়া স্বাধীনতা সৃষ্টি করবেন না। এজন্য তখন স্বাভাবিকভাবে তার হায়াত বাহির হতে বোঝা যাবে না। (শরহুল মাকাসিদ : খন্ড ৩, পৃ. ৩৬৬)।

মৃত্যুর সময় আল্লাহপাকের নির্দেশে দেহ হতে রূহ বের করা হয়। দেহের মৃত্যু হলেও রূহ ধ্বংস হয় না। তার জন্য উপযুক্ত ঠিকানা ও স্থিতি-স্থানের প্রয়োজন হয়। শবদেহকে কবরস্থ করার পর সাওয়াল-জওয়াবের জন্য উক্ত দেহে রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয়। এতে করে দেহের সাথে রূহের এতটুকু সম্পর্ক অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হয়, যার দ্বারা সে আযাব ও শান্তি অনুভব করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে হযরত বারা বিন আযিব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিন বান্দাহর যখন মরন ঘনিয়ে আসে, তখন তার নিকট ফিরিশতা উত্তম আকৃতিতে সুগন্ধিতে সুরভিত হয়ে আসে। মুমিনের রূহ কবজ করার জন্য তার পাশের্^ উপবেশন করে। আর দু’জন ফিরিশতা জান্নাত হতে একটি সুগন্ধিপূর্ণ পাত্র নিয়ে তার কাছে উপস্থিত হয়। তারপর উক্ত ফিরিশতাদ্বয় রূহ সমাভিব্যাহারে জান্নাতের দিকে গমন করে।

তাদের জন্য আরশের দরজা খুলে দেয়া হয়। তৎপূর্বে আকাশের দরজাও খুলে দেয়া হয়। উপর জগতের ফিরিশতামন্ডলী তাদের আগমনে আনন্দিত হয় এবং বলে, এ পবিত্র রূহটি কার? যার আগমনে আকাশের প্রবেশদ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে? তখন তার সুন্দরতম নাম উল্লেখ করা হবে যে নামে তাকে দুনিয়াতে নামকরণ করা হয়েছিল।

অনন্তর ঘোষণা করা হবে এটা অমুক ব্যক্তির রূহ। তারপর ওই রূহকে নিয়ে যখন ঊর্ধ্বে আরোহণ করতে থাকে তখন আল্লাহপাক বলেন, আমার বান্দাহর রূহকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে নাও। কেননা আমি তাদেরকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেছি।

যখন মুমিনের রূহকে পুনরায় কবরে ফেরত নেয়া হয়, তখন কবরের মাটি তাকে বলে, তুমি আমার পৃষ্ঠে অবস্থানকালীন সময়ে আমার খুব প্রিয় ছিলে। সুতরাং এখন কেমন হবে যখন তুমি আমার অভ্যন্তরে এসেছ? তুমি দেখতে পাবে আমি তোমার সাথে কেমন আচরণ করি।

তারপর তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত হয়ে যাবে ও জান্নাতের দিকে একটি দরজা খোলা হবে। তাকে বলা হবে, তুমি চেয়ে দেখ, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তোমার জন্য কী কী পারিতোষিক ও উপঢৌকন প্রস্তুত করে রেখেছেন। আর তার মাথার দিক থেকে জাহান্নামরে দিকে একটি দরজা খোলা হবে। আর বলা হবে, তুমি লক্ষ্য কর, আল্লাহপাক তোমার থেকে কেমন আযাব ও শাস্তি দূর করে দিয়েছেন।

তারপর তাকে বলা হবে, শান্তি ও পরিতৃপ্তির সাথে অবস্থান করো। তোমার কোনো ভয় নেই। তখন তার নিকট কেয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়াই সবচেয়ে প্রিয় হবে। (মিশকাতুল মাসাবিহ : খন্ড ১, পৃ. ১৪২)। এতে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, আল্লাহপাক কবরে মৃত ব্যক্তিকে এক প্রকার নতুন জীবন দান করবেন, যাতে সে সুখ-দুঃখ অনুভব করতে পারে। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ১০১)।

আর এ কথা স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, বারযাখের জগতে দেহের সাথে রূহের সম্পর্ক বিভিন্ন ধরণের হবে। (ক) সাধারণ মৃত ব্যক্তিদের সাথে রূহের সম্পর্ক হবে নিম্নমানের। (খ) শহীদগণের রূহের সম্পর্ক তার চেয়ে শক্তিশালী হবে। (গ) নবীগণের দেহের সাথে রূহের এ সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। এ কারণেই শহীদ ও নবীগণের মরদেহ কবরে সংরক্ষিত ও অবিকৃত থাকে। নবীগণ কবরের পাশ্বের দাঁড়িয়ে দুরুদ ও সালাম পাঠকারীর দুরুদ ও সালাম শ্রবণ করে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরপাশের্^ এসে দুরুদ পড়ে আমি তা শুনতে পাই। আর দূর থেকে আমার ওপর দুরুদ-সালাম পড়লে তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। (কানজুল উম্মাল : খন্ড ১, পৃ. ৪৯২)।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২ মার্চ, ২০২০, ২:২০ এএম says : 0
    আমি সেদিন তাদের দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং তখন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।’
    Total Reply(0) Reply
  • angladeshi Blogger Shila ২ মার্চ, ২০২০, ২:২০ এএম says : 0
    ভাইয়া তোমার কথা গুলো খুব ভালো লাগলো আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত দান করুক আমিন ۔
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ২ মার্চ, ২০২০, ২:২১ এএম says : 0
    মৃত্যুর পর মানুষ কতদিন কবরে থাকবে? মানুষের শরীর থেকে রুহ বেরিয়ে যাওয়ার নাম মৃত্যু। মৃত্যুর পর মানুষের নতুন একটি জীবন শুরু হয়, যার নাম বারযাখী জীবন। এই জীবন দুনিয়া ও কেয়ামতের মধ্যবর্তী সময়।
    Total Reply(0) Reply
  • গরিব ২ মার্চ, ২০২০, ৫:৩০ এএম says : 0
    মানুষের জন্ম আছে, মৃত্যু নাই. ঈমান, আমল এবং আখিরাত নিয়ে কবরে যাবো. আমিন.
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ ২ মার্চ, ২০২০, ১০:০০ এএম says : 0
    আল্লাহ্‌ জনাব লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান করবেন এবং আমাদেরকে এই উত্তম লেখা থেকে শিক্ষা গ্রহন করার তৌফিক প্রধান করুণ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন