পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পিচ উঠে গেছে আগেই। দিনে দিনে বাড়ছে গর্ত। এর মধ্যে যানবাহন চলাচল করলে ধুলায় ঢেকে যায় চারদিক। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযোগ আঞ্চলিক সড়ক দাউদকান্দি-চাঁদপুর সড়কটির স্থানে স্থানে খানাখন্দ।
সামনে আসছে রমজান মাস। সে সময় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়বে। এই অবস্থায় সড়কটি দ্রæত মেরামত করার প্রয়োজন বলে মনে করেন নিয়মিত চলাচলকালীরা। অথচ বরাদ্দ নেই এমন অজুহাতে কয়েক বছর ধরেই সওজের রাস্তা সংস্কার ও মেরামত কাজে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে জোড়াতালির মেরামত কাজ চললেও নেই টেকসই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। মন্ত্রী ও সওজের বড় কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এলে শুধু তড়িঘড়ি মেরামত করা হয়। কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরই আবার সেই পুরনো চিত্র। পরিকল্পনা থাকলেও বরাদ্দ নেই, এমন কথা বলে পাশ কাটিয়ে যান সওজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতু মেরামত ও নির্মাণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযোগ সড়ক গৌরীপুর (দাউদকান্দি)- চাঁদপুর ছাড়াও গৌরীপুর-হোমনা, মাধাইয়া-রহিমানগর ও গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া-আব্দুল্লাহপুর সংযোগ সড়কগুলোর গত দশ বছরে প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও সড়কের বেহাল অবস্থা বদলায়নি।
গৌরীপুর-হোমনা সড়কের উপরিভাগের পাথর ও বিটুমিনের মিশ্রণ উঠে গিয়ে শতাধিক ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গৌরীপুর-চাঁদপুর সড়কটি দিয়ে মতলব উত্তর-দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ যাতায়াত করে থাকে বিভিন্ন যানবাহনে। কিন্তু সড়কের পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক যে যানবাহন ও পথচারীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যদিও সড়কটি অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ তথাপি থেমে থাকেনি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর-দক্ষিণ ও কচুয়া উপজেলার জনসাধারণের জীবনযাত্রার প্রবাহ।
কচুয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ইসমাইল হোসেন জানান, প্রতিদিন এই সড়কে কুমিল্লা থেকে আসা যাওয়া করি, কলেজের স্টাফ, ব্যাংক কর্মকর্তা, হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী এই রাস্তায় প্রতিদিন যাতায়াত করে। দুইটি বাস যখন ক্রস করে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে এমনিভাবে কাত হয়ে মনে হয় যেন খালে উল্টে পড়ছে। কচুযার বাজারের সিমেন্ট ব্যবসায়ী মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া জানান, সিমেন্টবাহী কন্টেইনার ট্রাক গৌরীপুর আসার পর কচুয়া অভিমুখে ঢুকতে চায় না ভাঙাচুড়া রাস্তার কারণে।
ঢাকা-মতলব সড়কের বাসচালক খোকন মিয়া ও মো. বাবুল মিয়া জানান, বড় বড় গর্তে উঠা নামার কারণে গাড়ির গ্লাস, ফরম এক্সেল, ¯িপ্রং ভেঙে যায়। যে সব যস্ত্রাংশ পাঁচ বৎসর চলে তা এক বৎসরে বিকল হয়ে যায়। এক ঘণ্টার এই রাস্তা পাড়ি দিতে দুই ঘণ্টার ও বেশি সময় লেগে যায়।
অটোরিক্সা ড্রাইভার অলি জানান, এই রাস্তয় গাড়ির এক্সেল, টেংরি ও চাকার ভীষণ ক্ষতি হয়। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গৌরীপুর মতলব উত্তর-দক্ষিণ ও কচুয়ার জরাজীর্ণ এই সড়কের ব্যাপারে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সড়ক মেরামতের বিষয়ে তারা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলে মেরামতের কাজ শুরু হবে।
তবে গৌরীপুর-চাঁদপুর সড়কের বিষয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভুঁইয়া এমপি বলেন, সড়কটির বিষয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রীর সাথে ইতিমধ্যে কথা বলেছি। আশা করছি চলতি অর্থবৎসরে সড়কটি মেরামতের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মাধাইয়া-রহিমনাগর সংযোগ সড়কের এখন করুন দশায় পরিণত হয়েছে। সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এই সংযোগ সড়টি রাস্তার বিভিন্ন স্থান জুড়ে দেখা যায় ক্ষত বিক্ষত। রাস্তাটি ইতিমধ্যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
কুমিল্লা দক্ষিণ পশ্চিমাংশের চান্দিনা, বরুড়া, কচুয়া উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠির চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সড়ক মাধাইয়া, নবাবপুর, রহিমানগর সড়কটি।
তবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব খাতের বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় হয় যথাযথ দরপত্র ছাড়া, রাজনৈতিক ঠিকাদারদের পেছনে। আর উন্নয়ন প্রকল্পেও নয়ছয়ের কারণে যথাযথ ও সময়মতো কাজ হয় না। অব্যবস্থাপনা তো আছেই। সব মিলিয়ে নতুন কিছু সড়ক-সেতুসহ উন্নয়নমূলক কাজ হলেও এর জন্য মানুষকে চরম মূল্য দিতে হয়।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা আঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, বরাদ্দের অভাবে রাস্তাগুলো পুরাপুরি সংস্কার করা যাচ্ছে না। আংশিক সংস্কার করা করা হয়েছে। ফলে রাস্তাগুলো প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ভেঙেচুরে গর্তের সৃষ্টি হয়। তবে বরাদ্দ পেলেই কাজ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খানাখন্দ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অব্যবস্থাপনার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলোর মানুষের যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। কোন কোন স্থানে ভেঙে সড়কের মাঝ খানে এসে পড়েছে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা করছে যাত্রী ও সাধারণ জনগণ।
সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক শাহআলম বলেন, সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদার, উপকরণ ও নজরদারি-তিনটিতেই ঘাটতি আছে। এ জন্যই দ্রæত সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। যথাযথ যন্ত্রপাতি ও দক্ষতা নেই-এমন অপেশাদার ঠিকাদারেরা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের কাজ পেয়ে যাচ্ছেন। আর তারা প্রভাবশালী হয়ে থাকেন বলে তাদের ওপর নজরদারিও কম।
শাহআলম মনে করেন, বর্তমানে সড়কে ৩০ বছরের পুরোনো উপকরণ-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভারী যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না। তাই বিটুমিনের সঙ্গে আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা গেলে পানি এবং ভারী যানের ক্ষতি থেকে কিছুটা রক্ষা করা যাবে। তবে সবকিছুর আগে নজরদারি জরুরি। সব মিলিয়ে সড়কের বেহাল অবস্থায় কেবল যে দুর্ভোগই সঙ্গী তা নয়, এর ফলে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বেশি, যানবাহনের আয়ু কমছে, ঘটছে দুর্ঘটনা। সামগ্রিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে সার্বিক অর্থনীতির।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।