Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কালাইয়ে ভেজাল ওষুধের রমরমা বাণিজ্য জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

প্রতারণার শিকার সাধারণ মানুষ

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কালাই (জয়পুরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা
জীবন রক্ষায় ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এ সুযোগকে শতভাগ কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির ওষুধ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার ফার্মেসিগুলো এখন ভুয়া কোম্পানির ভেজাল ওষুধে সয়লাভ। ওষুধগুলি কোথাই তৈরি হয়, কোথা থেকে সরবরাহ হয়, তা কারোরই জানা নেই। সরবরাহকৃত ওষুধগুলির প্যাকেটে লেখা নেই সঠিক ঠিকানা ও তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের নাম। নামি-দামি কোম্পানির হুবহু প্যাকেটের সাথে প্রায় মিল রেখে বাজারজাত করা হচ্ছে এসব প্রাণঘাতী ভেজাল ওষুধ। কতিপয় অসাধু ফার্মেসির মালিক ও ভুয়া কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা অজ্ঞাত স্থান থেকে ওষুধগুলো প্যাকেটজাত করে জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক ভিটামিন এবং যৌন উত্তেজক ওষুধ দোকানে-দোকানে ফর্মে থাকা ইঞ্জেকশান ট্যাবলেট ও সিরাপ জাতীয় ওষুধগুলো সরবরাহ করে থাকে। কালাই উপজেলা ওষুধ ব্যবসায়ী (ফার্মেসি) সংগঠন এবং ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সংগঠনসহ (ফারিয়া) গ্রামগঞ্জের স্বঘোষিত হাতুড়ে ও অসাধু ডাক্তারদের সেন্ডিকেট চক্র নি¤œমানের ভেজাল ওষুধ সেবন করতে বাধ্য করছে রোগিদের। ওই হাতুড়ে ও অসাধু ডাক্তারদের ব্যবস্থাপত্রেও থাকে এসব ওষুধের নাম। কারণ নামি-দামি ব্রান্ডের কোম্পানিগুলোর মতই দেখতে একই হলেও ওষুধগুলির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল। এ ভেজাল ওষুধের তালিকায় রয়েছে প্রাণঘাতী এন্টিবায়োটিক, ভিটামিন ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিরাপ। এসব ওষুধ নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজী নন ফার্মেসির মালিক এবং ওসুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা। অপরদিকে ওষুধ প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে বিভিন্ন স্থানের মতো কালাইয়ের অনেক অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী এখন জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন বলে দাবি এলাকার সাধারণ মানুষের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফার্মেসির এক মালিক জানান, প্রতারক কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা চিকিৎসককে মাসিক চুক্তিতে উৎকোচ দিয়ে রোগিদের ব্যবস্থাপত্রে ভুয়া কোম্পানির নাম সর্বস্ব ভেজাল ওষুধগুলি লিখিয়ে নেন। এ ছাড়া ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ কিনতে রোগিদের মগজ ধোলাই করে ফার্মেসিগুলোর নিয়োজিত চাটুকার ওষুধ বিক্রেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক ফার্মেসির মালিক জানান, ভুয়া কোম্পানির ওষুধগুলো গোপনে সরবরাহ হলেও রোগিদের ব্যবস্থাপত্রে ওইসব ওষুধের নাম লেখা থাকে। এ জন্যই তারা ভেজাল না আসল কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। তবে ওই ওষুধ বিক্রিতে লাভ বেশি হওয়ায় এবং ব্যবস্থাপত্র ফেরৎ যাওয়ার আশঙ্কায় তারা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ওষুধগুলি দোকানে রাখেন। তিনি আরো জানান, ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই হাতে বিক্রি হয় যৌন উত্তেজক ট্যালেট ও বিভিন্ন  আইটেমের সিরাপ। ওষুধ বিশেষজ্ঞ কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার’ (জিএমপি) নীতিমালা অনুসরণ না করে ওষুধ উৎপাদিত করা হলে সেই ওষুধ মানসম্পন্ন হয় না, এ ওষুধ ব্যবহার কারীর অসুখ না সেরে বরং শরীরের মারাত্মক ক্ষতিসহ প্রাণহানীরও সম্ভাবনা থাকে। সচেতন মহলের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের ওষুধ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় প্রতারক সেন্ডিকেট (চক্র) এ সুবিধা নিচ্ছে। কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার বলেন, জীবন রক্ষায় ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সেই ওষুধ নিয়ে যারা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালাইয়ে ভেজাল ওষুধের রমরমা বাণিজ্য জনস্বাস্থ্য হুমকিতে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ