বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কবর ও কবর যিয়ারত সম্পর্কে অল্প বিস্তর জ্ঞান মুসলমান মাত্রেরই আছে। কারণ, মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল কোরআন ও হাদিস।
আল কোরআনের নিম্নে বর্ণিত সূরা ও আয়াত সমূহে কবর প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। সূরা তাওবা’র ৮৪ নং আয়াতে, সূরা হজ্জে’র ৭ নং আয়াতে, সূরা ফাতিরে’র ২২ নং আয়াতে, সূরা মুমতাহানা’র ১৩ নং আয়াতে, সূরা আবাসা’র ২১ নং আয়াতে সূরা ইনফিতারে’র ৪ নং আয়াতে, সূরা আদিয়াতে’র ৯ নং আয়াতে, সূরা তাকাসুরে’র ২ নং আয়াতে। আর কবরে জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে আল কোরআনের নিন্মোল্লিখিত সূরা ও তদন্তর্গত আয়াতসমূহে বিশ্লেষিত হয়েছে। সূরা আনফালে’র ১১ নং আয়াতে, সূরা ইবরাহীমে’র ২৭ নং আয়াতে, সূরা নাহলে’র ১০২ নং আয়াতে, সূরা মোহাম্মাদে’র ৪৭ নং আয়াতে, সূরা বাকারাহ’র ২৫০ নং আয়াতে, সূরা আলে ইমরানে’র ১৪৭ নং আয়াতে।
প্রসঙ্গত: স্মরণ রাখা দরকার যে, কবর যিয়ারত সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা সূরা তাকাসূরে’র ১ ও ২ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের আধিক্য লাভের আসক্তি মোহগ্রস্ত করে রেখেছে/ বিভ্রান্তিতে নিপতিত করেছে/ ভুলিয়ে রেখেছে, যে পর্যন্ত না তোমরা কবরে উপস্থিত হচ্ছ/প্রবিষ্ট হচ্ছ/ কবরের সংস্পর্শে গমন করছ। উপরোক্ত ২ নং আয়াতের বহু বচন জ্ঞাপক, ‘যুরতুম’ ক্রিয়া পদটি কবর যিয়ারতের কথাই স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
সূরা তাকাসূর-এর শানে নুযুলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই পৃথিবীতে মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করার অন্যতম উপকরণ হচ্ছে তিনটি। (১) ধন-জনের অহঙ্কার, (২) ভোগ বিলাসের লালসা এবং (৩) অর্থ বা সম্পদ। এই সূরায় এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক মানুষকে সতর্ক করেছেন। যাতে করে মানুষ এই তিনটি উপকরণের প্রতি মোহাচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে।
কিন্তু এই তিনটি উপকরণের সবগুলোই পাগলা ঘোড়ার মতো। মোহাবিষ্ট মানুষ-এর কোনো একটির উপর আরোহণ করে যদি ছুটতে থাকে, তাহলে ভাবলীলা সাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত/কবরে প্রবিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তাকে থামাতে পারবে না এবং শেষ বিচারের কাঠগড়ায় তাকে দাঁড়াতেই হবে। কেননা, ভালো-মন্দ কৃতকর্মের ফল তাকে ভোগ করতেই হবে।
নবী করিম সা. অসংখ্যবার কবরের আযাব থেকে পানাহ চেয়েছেন। ক. হযরত মূসা বিন ওকবা রা. হতে বর্ণিত, হযরত উম্মে খালেদ বিনতে খালেদ রা. বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতে শুনেছি। খ. হযরত মুসআব রা. হতে বর্ণিত, হযরত সায়াদ রা. পাঁচটি জিনিস থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি এগুলো রাসূলুল্লাহ সা. হতে শ্রবণ করেছেন বলে উল্লেখ করতেন এবং আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা ও প্রার্থনা করার তাকীদ করতেন এই বলে: ১. হে আল্লাহ, আমি কৃপণতা হতে আপনার আশ্রয় কামনা করছি ২. আমি কাপুরুষতা হতে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি ৩. আমি অবহেলিত বার্ধক্যে উপনীত হওয়া হতে আপনার আশ্রয় কামনা করছি ৪. আমি দুনিয়ার ফিতনা অর্থাৎ দাজ্জালের ফিতনা থেকেও আপনার আশ্রয় কামনা করছি ৫. আমি কবরের আযাব থেকেও আপনার আশ্রয় কামনা করছি।
গ. হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমার নিকট মদীনার দু’জন ইহুদী বৃদ্ধা মহিলা আগমন করলেন। তারা আমাকে বললো যে, কবরবাসীদের তাদের আযাব দেয়া হয়। তখন আমি তাদের একথা মিথ্যা বলে অভিহিত করলাম। আমার মন তাদের কথাটিকে সত্য বলে মানতে চাইল না। তারা দু’জন চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সা. আমার নিকট আগমন করলেন। আমি তাকে অবহিত করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কাছে দু’জন ইহুদী বৃদ্ধা মহিলা এসেছিল। তারপর আমি তাকে তাদের কথা বর্ণনা করলাম।
তখন তিনি ইরশাদ করলেন: বৃদ্ধা মহিলা দু’জন সত্য কথাই বলেছে। অবশ্যই কবরবাসীদের এমন আযাব প্রদান করা হয়, যা সকল চতুস্পদ জীবজন্তু শ্রবণ করে থাকে। মা আয়েশা রা. বলেন : এরপর থেকে আমি তাকে সর্বদা প্রত্যেক নামাজে কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় কামনা করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী : ৫৯২৪; ৫৯২৫; ৫৯২৬)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।