বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহানবী সা.-এর মদীনায় হিজরত ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর ফলাফল সুদূরপ্রসারী প্রমাণিত হয়েছে। মদীনাতেই ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়। মুসলিমরা একটা স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, মহানবী সা. ৬২২ খৃষ্টাব্দের সেপ্টম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক রাতে মক্কা থেকে মদীনায় যাত্রা করেন। মক্কা থেকে তিন মাইল দূরবর্তী সওর পর্বতে তিনি তিন দিন আত্মগোপন করে থাকেন এবং চতুর্থ দিন মদীনার পথে রওনা হন। ২০ সেপ্টম্বর নাগাদ তিনি মদীনা থেকে তিন মাইল দূরের কুবাতে পৌঁছান। সেখানে মুহাজির ও আনসাররা তাকে বিপুলভাবে স্বাগত জানায়। কুবা পল্লীতে ১৪ দিন, কারো মতে ১২ দিন, কারো মতে চার দিন অবস্থান করেন।
এ সময় তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এরপর তিনি মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেন এবং মদীনায় পৌঁছে আবু আইয়ুবের গৃহে অবস্থান গ্রহণ করেন। মদীনাতে সর্বস্তরের নারী-পুরুষ-শিশু তাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানায়, অন্তরের অন্তস্থল থেকে গ্রহণ করে।
মদীনায় তিনি প্রথমেই সুনির্দিষ্ট কিছু কাজে হাত দেন। মসজিদ মুসলিমদের অস্তিত্বের সঙ্গী। মদীনায় শুরুতেই তিনি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নাজ্জার গোত্রের দুই এতিমের একখন্ড জমি কিনে এ মসজিদ নির্মিত হয়। আকারে খুব বড় নয়। দৈর্ঘে ১০০ হাত, প্রস্থে ১০০ হাত।
তিন হাত উঁচু ভিত্তিমূলের ওপর ইট দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। চার কোনে চারটি মিনার এবং খেজুর গাছের খুঁটির ওপর তক্তা এঁটে ছাদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদ নির্মাণে স্বয়ং মহানবী সা. অংশগ্রহণ করেন। এই মসজিদের নাম মসজিদে নববী। অচিরেই এ মসজিদ ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রে পরিণত হয়।
মদীনায় আউস ও খাজরাজ গোত্র ছিল প্রধান। এদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ছিল দীর্ঘদিনের। যুদ্ধ-বিগ্রহ প্রায় লেগেই থাকত। এ সুযোগটি বহিরাগত ইহুদিরা নিত এবং উভয় গোত্রকে তাদের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করত। এই দুই গোত্র থেকেই কিছু লোক মুসলমান হয়েছিল এবং তারাই মূলত মহানবী সা.-কে মদীনায় এনেছিল।
তাই প্রথম সুযোগেই মহানবী সা. এই দুই গোত্রকে ভাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করেন। তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। অতঃপর নবী করিম সা. মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভাতৃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এ সম্পর্ক এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয় যে, আনসাররা তাদের জমি-সম্পত্তিতে মুহাজির ভাইদের উত্তরাধিকার দিতে সানন্দে রাজি হয়ে যায়।
শুধু কি তাই? কেউ কেউ তাদের দু’জন স্ত্রীর একজনকে তালাক দিয়ে মুহাজির ভাইদের সঙ্গে বিয়ে দিতে পর্যন্ত সম্মত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।