Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লোহাগাড়ায় ত্রাস কালো মিজান!

তাজ উদ্দীন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

মিজানুর রহমান ওরফে কালো মিজান (২২) সাম্প্রতিক সময়ে লোহাগাড়ার অপরাধ জগতে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নাম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপকর্মের হোতা কালো মিজান এলাকার ত্রাস হিসেবে আর্বিভ‚ত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সে ও তার সহযোগীরা প্রতিবেশীর জমি দখল করে গোঁয়ালঘরের নামে গড়ে তুলেছে টর্চার সেল। রাতে সেই টর্চার সেলে বিভিন্ন এলাকার মানুষ, পথচারী ধরে এনে নির্মম নির্যাতন চালায় এবং মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে। দলবল নিয়ে সেখানে রাতভর চলে ইয়াবা সেবন, মাদক বিক্রি ও জুয়ার আসর। বেশকিছু দিন আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার ২ সহযোগীকে আটক করলেও তাকে আটক করতে পারেনি। পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায় সে। এলাকায় হত্যা, চুরি, মাদকের কারবার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কালো মিজান ও তার বাহিনী। প্রতিবেশীর জমি দখল, চাঁদাবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তার ভয়ে সবসময় তটস্ত থাকেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কালো মিজান এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ নেতা বলে নিজেকে পরিচয় দেয়। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, ছাত্রলীগের দক্ষিণ জেলা কমিটির কথিত এক ছাত্র নেতার মদদে লোহাগাড়ায় গড়ে তোলে তার অপরাধ সাম্রাজ্য ও ইয়াবা ব্যবসা। মানুষ মারধর করা কালো মিজানের নিত্যদিনের কাজ। হাতে সবসময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে থাকে। এ কারণে এলাকায় কেউ তার ভয়ে কথা বলেন না।
২০১৭ সালে প্রতিবেশী প্রবাসী মোজাফফরের মেয়ে মুক্তাকে ফুঁসলিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে মিজান। বছর না যেতেই তার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে মারা যায় বলে দাবী করে মুক্তার পরিবার। এলাকায় তার রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। যারা এলাকার বিভিন্ন অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে এলাকার বিভিন্ন ভবন মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে কালো মিজান ও তার বাহিনী। চাঁদা না দিলে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ।
অতিসম্প্রতি তার লাথিতে প্রেমিকার গর্ভপাতের ঘটনায় আবারও আলোচনায় ওঠে আসে সেই মিজানুর রহমান ওরফে কালো মিজান ও তার সহযোগীরা। প্রথমে সেই নবজাতকে জীবিত অবস্থায় বাথরুমের টাঙ্কিতে ফেলে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কান্না করায় ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয় সেই নবজাতকে। গভীর রাতে তার ৩ সহযোগীসহ স্থানীয় পুকুরপাড়ে নবজাতকের লাশ মাটি চাপা দেয় বলে জানা যায়। তার তিনদিন পর পুকুরপাড়ে মাটি চাপা দেওয়া সেই নবজাতকের লাশ আদালতের নির্দেশে উত্তোলন করা হয়।
জানা যায়, মিজানুর রহমান ওরফে কালো মিজানের সাথে সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিজান ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ভিক্টিমের বাড়িতে যায় কালো মিজান। মেয়েটি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মিজান মেয়েটির পেটে লাথি মারে। এতে ঘটনাস্থলেই ওই অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাত ঘটে। ঘটনার পরপরই বাচ্চাটি মেরে গোপনে মাটিচাপা দিয়ে কালো মিজান ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধ ফোরামের সভাপতি ও এমপি পত্মীরিজিয়া রেজা চৌধুরীর দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি এ ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
পরে আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদ্মাসন সিংহ’র উপস্থিতিতে পুকুর পাড় থেকে সেই নবজাতকের লাশ উত্তোলন করা হয়। লাশটির ডিএনএ পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের জন্য ঐ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সে একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী, তার বাড়ি থেকে কিছুদিন আগে তার ২ সহযোগীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সে এলাকার মেয়েদেরকে বিভিন্ন সময় ইভটিজিং করে। আমরা যুব সমাজ তাকে অনেকবার প্রতিহত করতে চেয়েছি। কিন্তু তার গড়ফাদারদের মদদে সে বারবার রক্ষা পায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম জানান, মাদক কারবার থেকে শুরু করে নবজাতক হত্যা পর্যন্ত নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার নাম উঠে এসেছে বারবার। লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, ওই ঘটনার ভিকটিম বাদী হয়ে মিজানকে আসামী করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে সে গা ঢাকা দিয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশ জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ