পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাগরিকত্ব বিল সংশোধনী নিয়ে ভারতে চলমান বিতর্কের মধ্যেই দেশটির সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিশান রেড্ডি সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, ভারত যদি অবৈধভাবে প্রবেশ করা সকলকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্ধেক ফাঁকা হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছে যে, যখন অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ভালো করছে, তাহলে কেন কেউ ভারতে যেতে চাইবে?
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন বাংলাদেশ এত দরিদ্র দেশ নয় যে সেখান থেকে মানুষ ভারতে চলে যেতে চাইবে। আমরা কি জানি আসলে কত বাংলাদেশি ভারতে চলে গেছে, এবং অর্থনৈতিকভাবে দুই দেশের তুলনামূলক অবস্থান কি? এসবের প্রেক্ষিতেই বিবিসির ফ্যাক্টচেকিং টিম বা তথ্য যাচাইকারী দল দুই দেশের দাবিসমূহ যাচাইয়ের চেষ্টা করেছে।
ভারতে অবৈধভাবে বাস করছেন কতজন বাংলাদেশি?
ঠিক কত সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে অবৈধভাবে ঢুকেছে তা নিয়ে বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি দুটোই রয়েছে। ২০০৪ সালে, ভারতের তদানীন্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল সংসদে বলেছিলেন ভারতে ১ কোটি ২০ লক্ষ বাংলাদেশি রয়েছে। তবে পরে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের রাজ্য সরকারের তোপের মুখে তিনি তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন বেশিরভাগ অবৈধ অভিবাসী বাস করছে পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে।
২০১৬ সালে, ভারতে সেসময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজ্জু ভারতীয় সংসদে বলেছিলেন: ''প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা দুই কোটি।'' তবে, তিনি এই পরিসংখ্যানের সূত্র জানাননি। এবং এরপর থেকে ভারত সরকার স্বীকার করে নিয়েছিল যে ভারতে বাংলাদেশিদের অবৈধ অভিবাসন নিয়ে তাদের কাছে কোন সঠিক তথ্য নেই। নাগরিকত্ব নিয়ে ভারতে ২০১৫-২০১৯-এর যে তথ্য নথিভুক্ত আছে তার থেকে আসল চিত্র সেভাবে পাওয়া যায় না।
ওই সময়কালে ১৫,০০০-এর কিছু বেশি বাংলাদেশিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ অর্থাৎ ১৪,৮৮০ জন বাংলাদেশিকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে যখন সীমান্ত এলাকায় ছিটমহল বিনিময় হয়। সেসময় এরা ভারতীয় অংশে ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলেন। (এই বিনিময়ে বাংলাদেশে অবস্থিত ১১১টি ছিট মহলের প্রায় ৪১ হাজার বাসিন্দাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়)
বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা ভালো করছে?
যদি জিডিপি দিয়ে তুলনা করা হয়, তাহলে সম্প্রতি ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো করছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রæত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ ভারতকে পেছনে ফেলেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রাক্বলিত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশ, যেখানে ভারতের ৫.৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এমন উন্নতির কারণে ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ বা এলডিসি থেকে বের হয়ে এসেছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু উদ্বেগজনক নির্দেশকও রয়েছে। ২০১৮ সালের মুদ্রাস্ফীতি উপাত্ত অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ৫.৮% মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় ভারতের ছিল ৩.৪%। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রাক্বলিত বেকারত্বের হারও ভারতের চেয়ে বেশি ছিল। তবে আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র্য পরিমাপের মানদন্ড অনুযায়ী, দৈনিক ১.৯ ডলারের কম আয় করা মানুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাংলাদেশে কম।
অন্যান্য মানদন্ডে কেমন করেছে দুই দেশ?
বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। শিশুমৃত্যুর হার ও জন্মের সময় সম্ভাব্য আয়ুষ্কালের দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ভালো করেছে। ভারত ও পাকিস্তানে জন্ম নেয়া নবজাতকের তুলনায় বাংলাদেশে জন্ম নেয়া নবজাতকের ক্ষেত্রে নিজের পঞ্চম জন্মদিন দেখে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ভারত (৬৮.৬ বছর) ও পাকিস্তানের (৬৬.৫ বছর) তুলনায় বাংলাদেশে (৭২.৫) ওই শিশুর সম্ভাব্য আয়ুষ্কালও বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হওয়া বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য জরিপ ২০২০ অনুযায়ী, ভারতের অবস্থান ১০৮ থেকে পিছিয়ে ১১২তম। অপরদিকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম। এছাড়া পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকেও বাংলাদেশের (২২%) অবস্থান ভারতের (১৩%) চেয়ে ভালো।
দক্ষিণ এশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতির হার
তবে, এটাও উল্লেখ করা দরকার যে ২০১৮ সালে মুদ্রাস্ফীতির হারের যে হিসাব তাতে দেখা গেছে ২০১৮য় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির সবচেয়ে উঁচু হার ছিল বাংলাদেশে। বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৫.৮ শতাংশ আর ভারতে একই সময়ে সেটা ছিল ৩.৪%।
আর ২০১৮ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী ছিল ভারতের চেয়ে বেশি। তবে দারিদ্র্যের আন্তর্জাতিক যে মাপকাঠি অর্থাৎ মাথাপিছু দিনের গড় আয় ১.৯ ডলারের কম - সেই হিসাবে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ কর্মরত মানুষের আয় ছিল দারিদ্রসীমার নিচে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নগরায়নের বিস্তার
গত বছর ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত গেøাবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স ২০২০-র পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ভারতের অবস্থান ১০৮ থেকে নেমে গেছে ১১২-য় এবং ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের অনেক নিচে চলে গেছে। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০।
এছাড়াও, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের থেকে ভাল। বাংলাদেশে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের হার যেখানে ২২% সেখানে ভারতীয় সংসদে এই হার ১৩%।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।