বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষের ঈমান, আক্বীদা, বিশ্বাস, চেতনা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করার জন্য ইসলাম যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে, এ বিষয়টির ওপর যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে সভ্যতার শত্রুরা মনে হয় ততটুকুই শত্রুতা জেদ ও আক্রোশ নিয়ে মানুষের এসব অমূল্য সম্পদ ধ্বংস করতে সচেষ্ট ছিল।
মানুষের মনুষ্যত্ব, পবিত্র মনোভাব ও উন্নত নৈতিক চরিত্র হেফাজতের জন্য ইসলাম যতটুকু চেষ্টা নিয়েছে মানবতার শত্রুরা মনে হয় সমান আক্রোশ নিয়েই এসব ধ্বংসের চেষ্টায় মেতেছে। ব্যক্তির জীবন, তার পরিবার, সমাজ, শৃঙ্খলা ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য মানবসমাজের মানবিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সকল মূল্যবোধ বিনাশের জন্য, মানবজাতির শত্রুপক্ষ চরম অন্যায় পন্থা বেছে নিয়েছে। আর এসবই ইসলামের বিরোধিতার ফল।
মানবজাতির প্রতি আল্লাহ প্রেরিত শেষ নবীকে অমান্য করে বিশ্বমানবতার মুক্তি সনদ ইসলামকে অস্বীকার করে দীর্ঘ ১৩শ’ বছর পর শত্রুরা ইসলামের ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায়। অতীতে মুসলমানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কুফরী শক্তি কোনো দিনই শক্তিপরীক্ষায় বিজয়ী হয়নি।
প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে দেখা যায় মুসলমানরাই বিশ্বের বিজয়ী শক্তি। কিছু অন্তর্ঘাত ও ছদ্মবেশী শত্রুর প্রচেষ্টা ছাড়া বড় দাগে মুসলমানদের আঘাত করার কোনো সুযোগ শত্রুরা পায়নি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানা থেকে পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ, এরপর উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানী খেলাফত আমলে গড় পর্তা মানববিশ্ব মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
প্রধান ও মূলধারা খেলাফতকেন্দ্র ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে আঞ্চলিক মুসলিম শাসক ও সম্রাটদের অসংখ্য রাজত্ব এমন সফল ও স্মরণীয় হয়ে আছে, যা বিশ্বের অনুসন্ধিৎসু মানুষকে অনেক প্রাপ্তি ও তৃপ্তির সন্ধান দিতে সক্ষম। মধ্যবর্তী সময়ে তাতারীদের উত্থান ছিল বিশ্বমুসলিমের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। ধ্বংস ও নৃশংসতার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত ছিল এ তাতারশক্তি।
কিন্তু তারা দৈহিক ও বস্তুগত ক্ষতি ছাড়া মুসলিম জাতির তেমন কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম হয়নি এ কারণে যে, তাতারীদের প্রচার করার মতো কোনো ধর্ম, প্রভাব বিস্তার করার মতো কোনো শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ছিল না। তারা মানুষকে হত্যা ও বন্দি করতে পারত। দখল ও বেগার খাটাতে পারত। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করার মতো মারাত্মক প্রভাবিত ও সামগ্রিক সর্বনাশ করতে পারত না।
যেজন্য মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী রাজধানী বাগদাদের পতনের পর তাতারীরা মধ্য এশিয়া থেকে ইরাক পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও অসংখ্যা মনীষী মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ইসলামের শিক্ষা প্রচারের সুযোগ পান। যার ফলে বরং ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি হয়। ২০ লাখ মানুষ তাতারীদের হাতে শহীদ হলেও এর চেয়ে বহু গুণ মানুষ দাঈ ও মুবাল্লিগ আলেমদের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
তাতারীদের সিরিয়া ও মিশরের মুসলিম শাসকরা রুখে দেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতো প্রতিভাবান আলেমরা তখন তাতারীদের মোকাবেলায় নিজ অঞ্চলের মুসলিম শাসকদের প্রত্যক্ষ সহায়তা করেন। ভারতবর্ষেও মুসলিম শাসকরা তখন তাতারীদের আক্রমণ থেকে মুসলমানদের এসব এলাকা সুরক্ষিত রাখেন। এর আগে-পরে সম্মিলিত কুফরী শক্তি, বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের ক্রুসেড যুদ্ধ থেকে মুসলিম জাতিকে বিখ্যাত মুজাহিদ সুলতান ও বিজয়ী বীরেরা রক্ষা করেন।
তাদের অনেকেই ক্রুসেডারদের পরাজিত করেন। এবং এক পর্যায়ে সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী তাদের চরমভাবে পরাস্ত করে জেরুজালেম দখল করেন। মুসলমানদের প্রথম কেবলা বাইতুল মাকদিসকে নিজেদের হাতে ফিরিয়ে আনেন। সবশেষে ৬শ’ বছরের বেশি ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন রাখা উসমানী খেলাফত শত্রুদের চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রে ধ্বংস হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।