পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে অবৈধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করা যাচ্ছে না। পলিথিন বর্জ্যে সর্বনাশ হচ্ছে মাটি ও পরিবেশের। ভরাট হয়ে যাচ্ছে নালা-নর্দমা, খাল, ছরা থেকে নদ-নদী পর্যন্ত। বিঘ্নিত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও চাষাবাদ। চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলীর তলদেশে জমছে পলিথিনের স্তর। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং।
দুষণে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণি। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল রাখতে নগরীর খাল, নালা, নর্দমা খনন ও পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে পলিথিনসহ হরেক বর্জ্য নর্দমায় ফেলা বন্ধ না হওয়ায় তা আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না। বিগত ২০০৩ সালের পর পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনিরে বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে এর উৎপাদন ও বাজারজাত অনেক কমে আসে। তবে কয়েক বছর যেতেই অভিযান ঝিমিয়ে পড়ে। শুরু হয় পলিথিনের ব্যবহার। হাটেবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। বাজারে মাছ, গোশত, শাক-সবজি থেকে শুরু করে সবকিছুই দেয়া হচ্ছে পলিথিনে। যারা থলে নিয়ে বাজারে যান তারাও প্রতিটি জিনিসের সাথে পলিথিন নিয়ে আসছেন। ব্যাপকহারে পলিথিনের ব্যবহারে বাসাবাড়ির বর্জ্যরে সাথে বাড়ছে পলিথিন বর্জ্য। এর পাশাপাশি চিপস, বিস্কুট, চানাচুরসহ বিভিন্ন শুকনো খাবারেও প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার হচ্ছে। পানি এবং জুসের বোতলের ব্যবহারও বাড়ছে ব্যাপকহারে।
এসব প্লাস্টিক বর্জ্য খোলা জায়গা থেকে পড়ছে নালা-নর্দমায়। পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে মহানগরীর বড় বড় খাল, নালা হয়ে জমছে কর্ণফুলীতে। এতে খরস্রোতা কর্ণফুলী নাব্যতা হারাচ্ছে। খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও বিকল হয়ে পড়ছে। গ্রামেও বাড়ছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার। গ্রামের পুকুর, দীঘি, খাল, নালাতেও পড়ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য জমছে চাষযোগ্য জমিতে। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদও।
মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নালা-নর্দমায় পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্যরে স্তুপ জমেছে। ভরাট হয়ে গেছে বড় ছোট সব নালা। ভরাট নালায় জমে থাকা নোংরা পানিতে বাড়ছে মশার প্রজনন। ঘরে বাইরে, অফিস আদালত সর্বত্র এই মশার যন্ত্রণায় টেকা দায়।
নগরীর বিভিন্ন খাল, নালা হয়ে এসব বর্জ্য জমছে কর্ণফুলী নদীতে। প্লাস্টিক বর্জ্যরে সাথে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় আমদানি পণ্যের কার্টনের সাথে আসা ককসিটও আবর্জনা হিসেবে খাল, নালায় পড়ছে। বছরের পর বছর ধরে জমতে থাকা অপচনশীল এসব বর্জ্যরে কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী।
কর্ণফুলীর নাব্যতা ফেরাতে ২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত চলছে ক্যাপিটাল ড্রেজিং। কিন্তু নদীর তলে জমা কয়েক মিটার প্লাস্টিকের বর্জ্যরে কারণে খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। ড্রেজারের সাথে উঠে আসছে টনে টনে প্লাস্টিক বর্জ্য। বিকল হচ্ছে ড্রেজারও। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, কমপক্ষে সাত মিটার আবর্জনার স্তর জমেছে। বেশিরভাগই প্লাস্টিক বর্জ্য। সাধারণ ড্রেজার দিয়ে মাটি খনন করা যাচ্ছে না। খননকাজ সহজতর করতে গত বছরের মে মাসে চীন থেকে আনা হয় সাকশন ড্রেজার। সেটিও অকেজো হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় খননকাজের জন্য আধুনিক ‘গ্র্যাব ড্রেজার’ আনার প্রস্তাব দেয় এ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বুয়েটের এক গবেষণায় কর্ণফুলীর অনেক স্থানে দুই থেকে সাত মিটার আকারে স্তর জমেছে বলে জানানো হয়।
এদিকে নগরীর ছোটবড় ৩৭টি খাল, ছরাও ভরা হয়ে গেছে পলিথিন বর্জ্য।ে কোন কোন বড় নালা ভরাট হয়ে গ্রামীণ সড়কের রূপ নিয়েছে। বাজারে সবকিছুর সাথে পলিথিন দেয়া হচ্ছে। আর এসব পলিথিন গৃহস্থালী বর্জ্যরে সাথে নগরীর নালা-নর্দমায় পড়ছে। নালার দুই পাড়ের বাসিন্দারা বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লোকজন সরাসরি গৃহস্থালীর বর্জ্য পলিথিন ভরে নালা নর্দমায় ফেলছে।
চাক্তাই খাল খনন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খালেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে খাল, নালা ভরাট হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা সরাসরি নর্দমায় গৃহস্থালীর ময়লা ফেলছে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না হলে এ অবস্থা চলতেই থাকবে। প্রতিবছর চাক্তাই খালসহ নগরীর খাল, নালা সংস্কারে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও কোন কাজ হচ্ছে। খনন আর সংস্কারের কিছু দিনের মধ্যে নালা, নর্দমা ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে কয়েক লাখ ডাস্টবিন বিতরণ করা হয়। এরপরও নালা-নর্দমায় পড়ছে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ নানারকম বর্জ্য। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, ঘরে ঘরে ডাস্টবিন দেয়া হয়েছে। ডোর টু ডোর আবর্জনা অপসারণের জন্য ৩৮শ পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। এরপরেও নালা-নর্দমায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এটি নাগরিকদের অসচেতনতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
এদিকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন থামছে না। জানা যায়, নামমাত্র শুল্কেই কিংবা বন্ড সুবিধার আওতায় আনা প্লাস্টিক দানা থেকে তৈরি হচ্ছে এসব পলিথিন। নগরী এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য পলিথিন কারখানা গড়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে হাটেবাজারে অভিযান চালিয়ে কিছু পলিথিন জব্দ করা হলেও মূল উৎস বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ। এ কারণে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে পলিথিন জব্দ করা হচ্ছে। অনেক কারখানাও সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।