Inqilab Logo

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ির ছাদে ঘৃতকুমারীর বাণিজ্যিক চাষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে গৃহবধূরা

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

নওগাঁর রাণীনগরে বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে অ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী)। ওষুধি গুণসম্পন্ন এ ফসল চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার মাধাইমুড়ী মহিলা সিআইজি দলের (কমোন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) সদস্য হোসনে আরা। হোসনে আরার দেখাদেখি বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ১০জন মহিলা তাদের নিজ নিজ বাড়ির ছাদকে আবার কেউ কেউ বাড়ির উঠানের পরিত্যক্ত জমিতে এ ফসল চাষ করে বাড়তি অর্থ আয় করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সুপরিচিত ওষুধি গুন সম্পন্ন একটি গাছ হচ্ছে অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী)। এ গাছের পুরো অংশটিই ওষুধি হিসেবে বহুল ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে সরবতের সঙ্গে প্রচুর অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) খাওয়া হয়। এছাড়াও বর্তমানে রূপচর্চাতেও এ ওষুধি গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে। এ গাছের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মধ্যে যশোর জেলা অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষের জন্য বিখ্যাত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ভাবে অ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করেছেন ওই গ্রামের কৃষিভিত্তিক সিআইজি (কমোন ইন্টারেস্ট গ্রæপ) দলের মহিলারা। আর তাদেরকে এই লাভজনক চাষে আগ্রহী করে তুলেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ওই গ্রামে প্রথমে হোসনে আরা এর চাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি বর্তমানে প্রায় ১০জন মহিলা তাদের বাড়ির ছাদে ও পরিত্যক্ত জায়গায় অ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে অ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করেছেন। কম পরিশ্রম ও কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষের দিকে ঝুঁকছেন ওই গ্রামের অনেক মহিলা-পুরুষ।

গৃহিনী হোসনে আরা বলেন বর্তমানে মাধাইমুড়ি গ্রাম ঘৃতকুমারী গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি প্রথমে শখের বসে বাড়ির ছাদে একটি-দুটি টবে ঘৃতকুমারীর গাছ রোপন করেন। এরপর নিজেদের প্রয়োজনে সেখান থেকে ঘৃতকুমারী ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে গরমের সময় সরবতে এ ওষুধি গাছের ব্যবহার বেড়ে যায় বহুগুনে। খুব সহজে ও কম পরিশ্রমে এ ফসলের চাষ করা সম্ভব। এরপর কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু করেন। তিনি বর্তমানে বাড়ির ছাদের আর কোন জায়গা অবশিষ্ট রাখেননি। যেখানেই একটু জায়গা পেয়েছেন সেখানেই তিনি ঘৃতকুমারীর চারা রোপন করেছেন। সারাবছরই এ গাছ থেকে ফলন পাওয়া যায়। মূলত: এ গাছের পাতার ভিতরের পানি রংয়ের সাদা অংশ ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে তার ছাদ বাগান থেকে ঘৃতকুমারী কিনে নিয়ে যায়। তাই এটি বিক্রির জন্য আলাদা চিন্তা করতে হয় না। তিনি আরো বলেন বর্তমানে তার এই অ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) ছাদবাগান থেকে তিনি প্রতি মাসে ১০-১২হাজার টাকার ঘৃতকুমারী বিক্রয় করেন। নিজের পরিবারের কাজ শেষ করে তিনি ঘৃতকুমারীর বাগান পরিচর্যা করেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়ায় তার এতো বড় ঘৃতকুমারীর বাগান তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রামের অন্য মহিলাদের এই লাভজনক বাগান তৈরি করতেও তিনি উদ্ধুদ্ধ করে আসছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কৃষিভিত্তিক সিআইজি দলের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও বিষমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় মাধাইমুড়ি গ্রামে মহিলাদের মাধ্যমে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে অ্যালোভেরার (ঘৃতকুমারী) চাষ শুরু করা হয়। আর এই অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হোসনে আরা। এ গাছের রোগবালাই খুব কম। শুধু পাতায় পচন রোগ দেখা দিলে চুন ও তুঁতের মিশ্রন প্রয়োগ করলেই যথেষ্ঠ। এছাড়া তেমন কোন বড় ধরনের রোগ হয় না। এ গাছের চারা সহজলভ্য, পরিশ্রম ও খরচ খুবই কম হয়। এতে করে লাভের পরিমাণ খুবই বেশি। আর এ গাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজারজাত করা নিয়ে তেমন ভাবতে হয় না।

তিনি আরো বলেন বর্তমানে এ গ্রামের মহিলারা পরিবারের কাজের ফাঁকে ঘৃতকুমারীর বাগান তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। আশা রাখছি আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে ঘৃতকুমারী চাষ ছড়িয়ে পড়বে উপজেলার অন্যান্য গ্রামেও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ