Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ক্যাম্পসের ‘ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প’ বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা পেল ২৫শ’ সাধারন মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৬:২২ পিএম

প্রায় দুই হাজার পাঁচ শত সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঔষধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনটি, ক্যাম্পস, বিগত ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরেও টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে ‘ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প’ এর মাধ্যমে অসহায় রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।

 

 

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে, টাঙ্গাইল ও এর পাশর্^বর্তী অঞ্চলের দরিদ্র গ্রামবাসীগণের মধ্যে প্রায় ২৫শ’ জন রোগীর নিবন্ধন ও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের, রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্র¯্রাব, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয় ১০ দিন আগে থেকে এবং আজ ২১ ফেব্রুয়ারীর দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ সহ প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র প্রদান সহ বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ৩০০ এর অধিক চক্ষু রোগীদের চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়।

 

 

দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রফেসর ডা. এম এ সামাদ এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে, ‘রোগ প্রতিরোধে সুস্থ জীবন ধারা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল-৮ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের)। টাঙ্গাইল এর জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রফেসর ডা. এম এ সামাদ আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন সঞ্জিত কুমার রায় বিপিএম, সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ, টাঙ্গাইল।

 

 

আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এম এ সামাদ। এ বছরের বিশ^ কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্যের আলোকে তিনি বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকশই করতে হলে, চিকিৎসা ব্যয় কমানো যায় সচেনতার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ করে। আর সেই লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সফল হতে হলে, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কিডনি রোগের প্রাদূর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকারী, বেসরকারী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমূহকে সমন্বিত উদ্যোগ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে এবং সরকারী তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান যুগের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হল ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ।

 

ডা. সামাদ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, নিরবে দেহের মধ্যে বাসা বেধে বিভিন্ন মরণঘাতী অসংক্রামক ব্যাধির জন্ম দেয়। আর এই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এবং আরো কিছু কারণে মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং ৭০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার আগে, কিডনি রোগের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসার কারণে এ রোগে আক্রান্ত ৯০ভাগ মানুষ বিনা চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারান। আমাদের অসচেতনতা ও সুস্থ জীবনধারা মেনে না চলার জন্য দিন দিন এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে জাতীয়ভাবে সমন্নীত সচেতনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

 

প্রফেসর ডা. এম এ সামাদ আরো উল্লেখ করেন, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্থেই ক্যাম্পস গত ১৫ বছর ধরে গ্রামের হত-দরিদ্রদের মাঝে এই স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের আয়োজন করে আসছে।

 

এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, এমন মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকে ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকান্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকান্ডে সরকারী ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষদের সহযোগীতা খুব জরুরী।

 

ক্যাম্পস, নির্বাহী পরিচালক, জনাব রেজওয়ান সালেহীন, ক্যাম্পস এর মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে, আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিত প্রান, চিকিৎসকদের এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদের পাশে দাড়িয়ে, মানবিক কাজে নিজেদের কর্মকান্ড নিরলসভাবে চালিয়ে যাবার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

 

এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল হালিম, প্রিন্সিপাল, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ডা. এ কে এম ফজলুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ বাংলাদেশ, জুলফিকার হায়দার কামাল(লেবু), চেয়ারম্যান, সখিপুর উপজেলা পরিষদ, কাজী অলিদ ইসলাম, চেয়ারম্যান, বাসাইল উপজেলা পরিষদ, মো. আমিনুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সখিপুর, টাঙ্গাইল, ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান, উপজেলা হেলথ এ- ফ্যামিলি প্লানিং অফিসার, সখিপুর, টাঙ্গাইল। সকলেই ক্যাম্পস আয়োজিত এই মানবিক কর্মকান্ডের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে সামাজিক সকল কাজে তাঁদের সহযোগিতা করার আশ^াস প্রদান করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ