বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
দুনিয়ার জীবনে বালা-মুসিবতে নিপতিত হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। জীবন চলার পথে ঈমানদার বান্দাহগণকে মহান আল্লাহপাক পরীক্ষাস্বরূপ বিপদ-আপদে নিপতিত করে থাকেন।
এমতাবস্থায় নিজে আল্লাহর দরবারে মুক্তি ও নিষ্কৃতির জন্য দোয়া করা যেমন কর্তব্য, তেমনি অন্যান্য মুসলিম ভাইদেরও উচিত তাদের দোয়া ও মোনাজাত করা এবং আল্লাহর করুণা লাভের জন্য প্রার্থনা জ্ঞাপন করা। দোয়া পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা যেমন বৃদ্ধি করে তেমনি আল্লাহপাকের ক্ষমা, অনুকম্পা ও দয়া লাভের পথও সহজতর করে তোলে। দোয়ার মাধ্যমে এক মুসলমান তার ভাই-এর জন্য স্বীয় পরওয়ারদিগারের দরবারে রহমত ও মাগফেরাত কামনা করে, তার মঙ্গল ও কল্যাণের প্রার্থনা করে এবং তার অবস্থার উন্নতীর জন্য আবেদন জানায়।
একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, সকল কার্যকরণের আসল চাবিকাঠি মহান আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ। তিনি অবশ্যই বালা-মুসিবত দূর করতে পারেন। এই প্রত্যাশাই তাকে দুস্থ ও বালা-মুসিবতে নিপতিত ভাইদের আশু মুক্তি ও নিষ্কৃতির জন্য দু’হাত ঊর্ধ্বে তুলে দোয়া ও মোনাজাত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তোলে।
দোয়া আড়ালে বসে বা সামনা-সামনি উভয় প্রকারেই সম্পাদন করা যেতে পারে। তবে দোয়া সামনা-সামনি হলে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জ্ঞাতসারে হলে এর প্রথম সুফল হচ্ছে এই যে, সে তার দীনি ভাইয়ের আন্তরিক শুভকামনা ও ভালোবাসার প্রতি মনেপ্রাণে বিশ্বাসী হয়। শুধু তা-ই নয়, যিনি দোয়া করছেন এবং যার জন্য দোয়া করছেন, উভয়ের অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করা।
তাই দোয়া কামনাকারী ব্যক্তি লক্ষ্য করে যে, তার ভাই তার কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য কেবলমাত্র বাস্তব প্রচেষ্টাই চালায়নি, বরং নিজের কামনা বাসনা ও আশা-আকাক্সক্ষার মত তার আশা-আকাক্সক্ষাকেও আল্লাহপাকের দরবারে পেশ করেছে।
এমতাবস্থায় তার অন্তরে তার জন্যে দোয়া প্রার্থনাকারী ভাইয়ের প্রতি স্বভাবত:ই ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। এতে করে হৃদয়াবেগ প্রকাশের সমস্ত উপকারীই দোয়ার মাধ্যমে লাভ করা সহজতর হয়। দ্বিতীয়ত: দোয়া প্রার্থনাকারীর অনুপস্থিতিতে দোয়া করার সুফল ও সুবিদিত। কেননা, দোয়া প্রার্থনাকারী যখন স্বকীয় প্রচেষ্টার দ্বারা অন্যকে নিজের দোয়ার মধ্যে শামিল রাখে, তখন উভয়ের আন্তরিক সম্পর্ক অধিকতর বৃদ্ধিলাভ করে এবং একইসাথে উভয়ের মধ্যে পবিত্রতর ভ্রাতৃত্ববন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়ে উঠে। যার ফলশ্রæতিতে এমন একটি সম্পর্কের সুদৃঢ় বন্ধন অটুট হয়ে উঠে যা কখনো ক্ষণিকের বাতাসে এলোমেলো হয়ে যায় না।
অনুরূপভাবে কবরবাসদের রূহের মাগফেরাত ও শান্তিময় অবস্থানের জন্য দোয়া করাও মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। এই দোয়া ও প্রার্থনার জন্য কবর যিয়ারত করাও নেহায়েত দরকার। কেননা, রহমত, মাগফেরাত ও কবরবাসীদের প্রয়োজন পূরণ ও অসুবিধাসমূহ দূরীকরণে দোয়া সওয়াব রেছানী উত্তম আমল।
আল্লাহপাক কোরআনুল কারীমে পূর্ববর্তী মুসলিম ভাইদের জন্য কিভাবে দোয়া করতে হবে, তা বান্দাহদের শিখিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের সে সকল ভাইদেরও ক্ষমা করে দিন, যারা দীন ও ঈমানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার লাভ করেছেন এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি সামান্যতম বিদ্বেষও রেখো না; হে আমাদের পরওয়ারদিগার, নিশ্চয়ই আপনি দয়াদ্র ও পরম দয়ালু। (সূরা হাশর : ১০)।
দোয়ার মধ্যে জীবিত ও মৃত ভাই ও বোনদের নামোচ্চারণ করা বা তাদের স্মরণ করার মাঝেও কোনো দোষ নেই। এতে করে প্রার্থনাকারীর অন্তরের কোমলতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিজে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে আপন ভাই ও মৃতদের জন্য রহমতের দোয়া করা, আল্লাহর কাছে তার মুক্তি-নিষ্কৃতি ও কল্যাণ কামনা করা, এবং যাবতীয় অসুবিধা ও আজাব থেকে রেহাই লাভের জন্য মোনাজাত করাই ঈমানদারদের লক্ষণ। এতদোদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত করার প্রতি রাসূলুল্লাহ সা. উম্মতদের অনুপ্রাণিত করেছেন। এই অনুপ্রেরণা শ্বাশত ও চিরস্থায়ী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।