বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হিজরি ত্রয়োদশ বর্ষের জমাদিউস সানি মাসের ৮ দিন বাকি থাকতে (মঙ্গলবার) মাগরিব ও এশা এর মধ্যবর্তী সময়ে একুশ অথবা বাইশ তারিখে ইসলামের প্রথম মহান খলিফা সাইয়িদুনা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৭ দিন অসুস্থ ছিলেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। বয়সে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে দুই বছর কনিষ্ঠ ছিলেন। তাঁর খেলাফত কাল মাত্র দুই বছর তিন মাস দশ দিন। তাঁর নামাজে জানাযা পড়ান হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)। তাকে দাফন করা হয় উম্মুল মোমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.)-এর কক্ষে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাজারের পূর্ব পাশে।
হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ছিলেন বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, উম্মুল মোমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) ছিলেন তাঁর কন্যা। সর্ব প্রথম তিনি কোরআন সংকলন করেন। তিনি মোরতাদদের অপতৎপরতা দমনে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিজয় লাভ করেন।
প্রথম ‘খলিফাতুল মুসলিমীন’ হিসেবে হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ইসলামের ইতিহাসে খ্যাত ছিলেন। যদিও তাঁর খেলাফত আমল ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পর বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক জীবন চরিত রচিত হয়েছে হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর। এতেই প্রতিপন্ন হয় যে, এ মহান খলিফা একজন দক্ষ, সুশাসক, ন্যায়পরায়ণ, খোদাভীরু হিসেবেও অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।
তাঁর আমলে তিনি যেসব সামরিক অভিযান পরিচালনা করে অভূতপূর্ব বিজয়মালা অর্জণ করেছিলেন, তাঁর সেই দূরদর্শী সমরনীতি অমুসলিম লেখক ও ঐতিহাসিকগণ বিশেষত: ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদগণের গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং তাঁর জীবন ও কর্মের প্রতিটি দিক নিয়ে তারা ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা করেছেন। মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে তাঁর কোনো ভুল পদক্ষেপ, দুর্বল দিক কিংবা কোনো দোষ-ত্রুটি বা খুত-ছিদ্র আবিষ্কার করা গেলে ইসলামকে বিতর্কিত করার সুবর্ণ সুযোগ তাদের হাতে এসে যেত বলে মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
তাই তাঁরা ইসলামের প্রথম খলিফার শাসনামলকে তন্ন তন্ন করে তাদের গবেষণার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিলেন, কিন্তু এতে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। যেসব ক্ষেত্রে বা বিষয়ে তারা আপত্তি উত্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন, মুসলমান লেখক, পন্ডিতগণ জোরালোভাবে তা বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং সত্য তুলে ধরেছেন। সেই সাথে অনেকটা বিনা পরিশ্রমেই ইউরোপে ইসলামের সত্য বাণী প্রচারিত হয়েছে। এটাকেই বলা হয়; ‘আল হাক্কু মা শাহিদাত বিহিল আ‘দাউ।’ (সত্য যা শত্রুদের মুখেও উচ্চারিত হয়)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।