গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে দেশে ফেরা ৩১২ জনের দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। তাদে সবাই সুস্থ আছেন। তবে সেখানেও তাদের আরও দশ দিন সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর। এদিকে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬৯ জনে। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা কমেছে টানা তৃতীয় দিনের মত। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫০০ জনে। তবে আরও ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে মোট ৫ জন বাংলাদেশী সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক চীনা নাগরিক।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইন শেষে ৩১২ জনই বাড়ি ফিরেছেন। তারা সবাই সুস্থ আছেন। কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করা কারও শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস নেই- এমন ছাড়পত্র দেয়ার পর সবাই বাড়ি ফিরেছেন। তারপরও ‘অতিরিক্ত সতর্কতা’ হিসেবে তাদের আরও ১০ দিন নজরদারিতে রাখা হবে জানিয়ে প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, ‘তারা যেন জনসমাগম এড়িয়ে চলেন’। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তারা যেন বাড়িতে অবস্থান করেন। বাড়ির বাইরে গেলেও যেন মাস্ক ব্যবহার করবেন।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নতুন করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারই প্রেক্ষিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ বিমানে করে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে উহান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৩০১ জনকে আশকোনার হজ ক্যাম্পে ‘কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়। বাকি ১১ জনকে রাখা হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ শেষে শনিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের সবাইকে স্বাজনদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। ‘অতিরিক্ত সতকর্তা’ হিসেবে তাদের ‘কন্ডিশনাল রিলিজ’ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘আগামী দশ দিনের মধ্যে তাদের শরীরে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে আইইডিসিআরকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে’। সেজন্য তাদের যোগাযোগের ফোন নম্বর, ঠিকানাসহ সব তথ্য রাখা হয়েছে। তারা যে যেখানে থাকবেন, সেখানকার সিভিল সার্জন বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হবে। আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের সব নম্বর তাদের দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৪ দিন নজরদারির কারণ ব্যাখা করে তিনি বলেন, আইইডিসিআর সবকিছুই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী করছে। ২৪ দিন রাখার বিষয়ে ইউএস সিডিসির একটি গবেষণাপত্রে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবেই আইইডিসিআর ২৪ দিনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় লেখা হয়েছে, সর্বোচ্চ ১৪ দিন। ১৪ দিন তারা সেখানে অবস্থান করেছে। তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ ছিল না। বাকি ১০ দিন অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদেরকে আমাদের নেটওয়ার্কের সংযুক্ত রেখেছি। পুরো কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, দেশে এ পর্যন্ত ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে হয়েছে। তবে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রেরিত সর্বশেষ খবরে জানতে পেরেছি, মোট ৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউ-তে আছেন। সিঙ্গাপুরে সর্বমোট ৭২ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। পরীক্ষায় সংক্রমণ পাওয়া যায়নি ৮১২ জনের, ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন ১০৭ জন রোগী এবং সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ১৮ জন।
করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৬৯ জন : আরও ১৪৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬৯ জনে। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা কমেছে টানা তৃতীয় দিনের মত। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখন্ডে শনিবার আরও ২ হাজার ৯ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৪১ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮ হাজার ৫০০ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার চীনে ১৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক চীনা পর্যটক শনিবার মারা গেছেন ফ্রান্সে। চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে এর আগে হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৬৬৯ জনে।
উহান থেকে ১৭৫ জনকে ফেরাল নেপাল : নতুন করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের উহান শহর থেকে ১৭৫ জনকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে নেপাল। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাহেন্দ্র শ্রেষ্ঠ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, রোববার ভোররাতে ১৩৪ পুরুষ ও ৪১ নারীকে নিয়ে নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে। উহানে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ফেরাতে তাদের অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখানোর পর সেখানে আটকে পড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নিলো নেপাল। ফেরত আসা নেপালিদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন শ্রেষ্ঠা। দেশে ফেরা এ নাগরিকদের রাজধানীর কাছে ভক্তপুর শহরে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। এ সময় তারা চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন। দুই সপ্তাহ পরও সুস্থ থাকলে তাদেরকে বাসায় ফেরার অনুমতি দেয়া হবে। উহানে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে গত সপ্তাহে তাদের অভিভাবকরা নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় নেপাল সরকার জানায়, উহান থেকে ফেরত আনা লোকজনকে যেসব ভবনে ‘পৃথক করে রাখা হবে’ তা প্রস্তুত করতে সময় লাগছে। তাই তাদের ফিরিয়ে আনতে দেরি হচ্ছে।
এবার চীনা নারী রংপুর মেডিকেলে ভর্তি : জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জিংজং (২৯) নামে এক চীনা নাগরিক। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন। তিনি নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে একটি চাইনিজ কোম্পানিতে কর্মরত। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রোস্তম আলী জানান, চীনা নাগরিক ওই নারী শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার দুপুরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভর্তি করান। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এবং তার বিষয়টি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) জানানো হয়েছে। সেখান থেকে লোকজন এসে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাবেন। এর আগে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চীনফেরত দুই শিক্ষার্থীকে সুস্থ করে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার্থে আরেক শিক্ষার্থীকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।