বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
১৯০ বছর ইংরেজরা মুসলিম ভারতবর্ষ শাসন করে। মুহাম্মদ বিন কাসিমের বিজয় থেকে ব্রিটিশদের দখল পর্যন্ত কমবেশি ৮০০ বছর মুসলমানরা ভারতবর্ষ শাসন করে। এর চেয়ে উন্নত ও গৌরবের কোনো শাসন ভারতের ইতিহাসে পাওয়া যায় না। পৌরাণিক বা কাল্পনিক অনেক কিছুই থাকতে পারে। তবে ঐতিহাসিক সত্য ভারতের মুসলিম শাসন। বিদ্বেষীরা ইতিহাস ও সাহিত্যে ক্ষুদ্র মনের পরিচয় দিলেও কিছু সত্যবাক মানুষ সত্যকেই ধারণ করে আছেন।
এম এন রায়ের ভারতবর্ষে মুসলমানদের অবদান বইটি অসাধারণ। আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর বহু লেখাও এ বিষয়ে অবশ্য পাঠ্য। মুসলিম ঐতিহাসিক ও বিশিষ্ট আলেম ইতিহাসবিদদের সব বইই ভারতবর্ষে মুসলিম শাসকদের অমর কীর্তি ও উন্নত আদর্শের প্রমাণ বহন করে।
আল্লামা নদভীর পিতা মাওলানা সাইয়্যেদ আব্দুল হাই হাসানী-এর নুযহাতুল খাওয়াতির-এ বিষয়ে একটি বিশ্বকোষের মর্যাদা রাখে। মুহাম্মদ আকরাম রচিত মওজে কাওসার ও রওদে কাউসার কিতাব দু’টি ইতিহাসের অনন্য ভান্ডার। কাজী সুলায়মান মনসুরপুরী ও মাওলানা সাঈদ আহমদ এমএ রচিত তারীখুল ইসলাম কিতাব দু’টি তালিবে ইলমদের জন্য খুবই সহায়ক।
আবুল কাসেম ফেরেশতার তারীখে ফেরেশতা এবং মোঘলদের নিজস্ব ইতিহাসকারগণের কিতাবাদি যেমন : বাহারিস্তানে গাইবী, হুমায়ুন নামা, আকবরনামা, তুযুকে আকবরী, বাবরনামা, মুন্তাখাবুল আখবার, মুন্তাখাবুত তাওয়ারীখ, সিয়ারুল মুতাআখখিরীন ইত্যাদি আগ্রহীদের জন্য অনেক তথ্যে সমৃদ্ধ। মুহাম্মদ মিয়া সাহেবের বেশ কিছু গ্রন্থ ভারতবর্ষের দ্বীনি সংগ্রাম ও সাধনার সুরক্ষিত ভান্ডার।
আসীর আরবি আধুনিক ভাষ্যে অনেক পুরোনো তথ্য তার কিতাবাদিতে তুলে ধরছেন। এক্ষেত্রে আল্লামা নদভীর তারীখে দাওয়াত ও আযীমত যার আরবি রিজালুল ফিকরি ওয়াদ্দাওয়াহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি পাঠকদের জন্য অনেক মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ বইপত্র লিখেছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ জনাব গোলাম আহমদ মুর্তজা। সচেতন পাঠকের জন্য এ সবের বিকল্প নেই।
মানব জাতির স্রষ্টা হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি তাঁর পয়গম্বরদের মাধ্যমে মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তাঁর প্রেরিত দীন ও শরীয়ত মানবজাতির জন্য মুক্তির একমাত্র পথ।
ইসলাম যেসব বিষয়কে ক্ষতিকর, গোনাহ ও নাফরমানী বলে নির্দেশ করেছে এসবই সভ্যতা ও মানবজাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে থাকে। মুসলিমজাতি শিরক, কুফর, কবীরা গোনাহ বা নাফরমানী বলে যে বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে এসবই বিশৃঙ্খলা, অশান্তি ও পরকালীন শাস্তির পথ দেখায়। যেমন : অশ্লীলতা ইসলামে নিষিদ্ধ একটি বিষয়। যার চর্চা ও প্রচার শুরুতেই ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।
যখন ইসলাম তা বলে তখন মানুষ-এর ক্ষতিকারিতা সম্পর্কে এত ব্যাপক ধারণা রাখত না। কিন্তু আজ পৃথিবী সভ্য মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে এই অশ্লীলতার সয়লাবের ফলে। নগ্নতা, বেহায়াপনার বাজার এতই গরম যে, মানুষ একে ইন্ডাস্ট্রি নাম দিয়ে বৈধতা ও স্বীকৃতি দিয়েছে। এ কেমন সভ্যতা। কেমন উন্নতি।
বিশে^র বুকে যারা বেশি উন্নত ও সভ্য জাতি হিসেবে নিজেদের দাবি করে তাদের ভেতরকার অন্ধকার ও গলদ যে কী পরিমাণ গভীর ও বিস্তৃত তা কোনো প্রকৃত সভ্য লোকের চিন্তা করতেও কষ্ট হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের জন্য জীবন সহজ ও গতিময় যত না হয়েছে তার চেয়ে বেশি জটিল ও অন্ধকারময় হয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।