শুক্রবার জুমার নামাজ থেকে ফরিদপুরের বিশ্ব জকের মঞ্জিলে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ব উরশ শরিফ-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। হজরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মুরিদান, ভক্ত ও আশেকান সহ মুসুল্লীবৃন্দ এখানে সমবেত হয়েছেন। দেশের প্রতিটি এলাকা ছাড়াও বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশ থেকে এবারো বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে অগনিত জাকেরারন ও আশেকানবৃন্দের সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও সন্নিহিত প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা যুড়ে ৪ দিন ব্যপী এ উরশ শরিফের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশাল সামিয়ানার নিচে ধনী-গরীব সকলেই দিন-রাত আল্লাহর এবাদতে মগ্ন। শেষ রাতে রহমতের সময় থেকে শুরু করে বাদ এশা পাঁচশ বার দরুদ শরিফ পাঠ পর্যন্ত গোটা বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও সন্নিহিত এলাকায় লাখ লাখ জাকেরান ও আশেকান ছাড়াও মুসুল্লীয়ানবৃন্দ ওয়াক্তিয়া নামাজ, নফল নামাজ, মোরাকাবা-মোশাহেদা এবং কালবে আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকছেন। এ উরশ শরিফে সমবেত লক্ষ লক্ষ মানুষের আহার ও বিশুদ্ধ পানি সরবারহ ছাড়াও জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের সব ব্যাবস্থা ইতোপূর্বেই নিশ্চিত করা হয়েছে। শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের কয়েক হাজার সেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ এবং র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
আপন পীর হজরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সালে শাহ সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:)ছাহেব ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশী গ্রামে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত হয়েছিলেন। সেদিন মাত্র সাড়ে ৬ টাকায় খেজুরের খোলের বেড়া ও ছনের ছাউনি দেয়া ঘর কিনে তিনি এ আটরশীতে ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। কালের বিবর্তনে তা জাকের মঞ্জিল থেকে আজকের বিশ্ব জাকের মঞ্জিল। সে পাক দরবারে প্রতিবছরের মত উরশ শরিফ ছাড়াও পীর ছাহেবের ফাতেহা শরিফে লক্ষ লক্ষ জাকেরান ও আশেকান সহ মুসুল্লীবৃন্দের সমাগম ঘটে। এছাড়াও সারা বছর যুড়েই অসংখ্য জাকোরান ও অশেকান সহ ধর্মপ্রাণ মানুষ পীর ছাহেবের রওজা শরিফ জিয়ারতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আসেন।
এ মহা পবিত্র উরশ শরিফে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামগন ছাড়াও বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বিশিষ্ট খাদেমবৃন্দ ওয়াজ করছেন। এছাড়াও ফজর থেকে এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় সহ নফল নামাজ আদায়, মোনাজাত এবং মোরাকাবা-মোশাহেদা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নকসবন্দিয়াÑমোজাদ্দেদীয়া তরিকার নিয়ম অনুযায়ী বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব ফাতেহা শরিফ পাঠন্তে মোনাজাত এবং বাদ এশা ৫শ বার দরুদ শরিফ পাঠ করে নবী করিম(সাঃ)-কে নজরানা দেয়া হয়। এছাড়াও জোহর, মাগরিব ও এশার নামজন্তে নফল নামাজ আদায় এবং দোয়াÑমোনাজাতও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
আগামী মঙ্গলবার ফজর নামাজ বাদে ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ আদায়ন্তে পবিত্র কোরআন তোলাওয়াত এবং মিলাদ ও দরুদ শেষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর ছাহেবের মাজার শরিফ জিায়ারতের নিয়তে ফাতেহা শরিফ পাঠ ও আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে এরপরেও দিনব্যাপী ওয়াজ ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাদ আসর পর্যন্ত উরশ শরিফের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
এ উরশ শরিফ উপলক্ষে আগত যানবাহনের নির্বিঘœ চলাচল নিশ্চিত করনে মাওয়ার অপর প্রান্তের কাঠাল বাড়ী ঘাট থেকে মালিগ্রাম ও ভাঙ্গা হয়ে বিশ্বজাকের মঞ্জিল এবং বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা মহাসড়কের পুকুরিয়া ও তালমা মোড় থেকে দরবার শরিফ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তায় বিপুল সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ সহ আইনশৃংখলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। শুক্রবার লক্ষাধীক মুসুল্লী বিশ্বজাকের মঞ্জিলে জুমার নামাজ আদায় করেন। বাদ মাগরিব দু রাকাত করে ৩বার নফল নামাজ আদায় ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে এ উরশ শরিফের মূল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন দিন-রাতই এ দরবার শরিফে জনশ্রোত অব্যাহত রয়েছে।