পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়নের প্রচার চালিয়ে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা বজায় রেখেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। তীব্র লড়াইয়ের পরে আপ ৭০ টি আসনের মধ্যে ৬২ টিতে জয় লাভ করেছে। অন্যদিকে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) মাত্র ৮ টি আসন জিততে পেরেছে। যেকোনো রাজ্য বিধান সভার নির্বাচনে এটি অন্যতম বৃহত্তম জয়। আর কোনো ৬০ সদস্যের বেশি রাজ্য বিধান সভায় এত বিপুল ব্যবধানে জয়ের মাত্র তিনটি ঘটনা রয়েছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য এটি একটি অশুভ ইঙ্গিত। এই নির্বাচনে জয়ের জন্য তারা সম্ভব সবকিছুই করেছে। তারা জোরালো কণ্ঠে ও প্রবলভাবে সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলেছে, নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মতো জাতীয় ইস্যুগুলোকে সামনে এনেছে। এসব নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত লোকজনকে দানব হিসেবেও উপস্থাপন করেছে। তিক্ত প্রচারণার মধ্যে ছিল প্রতিবাদকারীদের গুলি করার হুমকি, আম আদমি পার্টি শরিয়া আইন জারি করতে চায়- এমন ধরনের অপ্রপ্রচার।
অন্য দিকে আম আদমি পার্টি স্কুল ও সস্তা বিদ্যুতের মতো স্থানীয় উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। দলটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কথা না বললেও একে এই নির্বাচনের কোনো ইস্যুতে পরিণত করতে চায়নি, এমনকি দিল্লিতেই এই আইনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কড়া প্রতিবাদ হলেও তারা এ ব্যাপারে সরব হয়নি। স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে, দিল্লির ভোটাররা ব্যাপকভাবে স্থানীয় ইস্যুতে ভোট দিয়েছে, বিজেপির জাতীয় ইস্যুগুলোতে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ বিষয়ে আপ নেতা আমানাতুল্লাহ খান বলেন, ‘দলের এই বিজয় হচ্ছে সুশাসনের জয় এবং বিদ্বেষের পরাজয়।’ আপের মুখপাত্র জেসমিন শাহ বলেন, ‘বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা, বন্দুক, গুলি, ভয়-আশঙ্কা এবং মুসলমানদের লক্ষ্য করে আক্রমণ শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হয়েছে। লোকেরা তাদের বিভেদ সৃষ্টির রাজনীতি প্রত্যাখান করেছে এবং গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।’
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে, নাগরিকত্ব সংশোধনি আইন (সিএএ) এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে দিল্লি। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দিল্লির নির্বাচনকে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে চলা প্রচন্ড বিক্ষোভের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হিসাবে দেখেছিলেন। এই আইন বৈষম্যমূলক হিসাবে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। অনেক মুসলমান আশঙ্কা করেছিল যে, এই আইন ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধক (এনআরসি) তাদের হয়রানি ও বঞ্চিত করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দল নাগরিকত্ব ও উগ্র হিন্দুত্ববাদের ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল। ভোটপ্রচারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর প্রতিবাদীদের গুলি করে মারার কথা বলেছিলেন, সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি কেজরিওয়াল যে অপেক্ষাকৃত নরম অবস্থানে থেকে শুধুই জনমুখী রাজনীতির উপর ভরসা রেখেছিলেন, তা-ও বলা হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে কেজরিওয়ালের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে স্কুল শিক্ষা, মহল্লা ক্লিনিক তথা বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা, সস্তা ও বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, মহিলাদের জন্য বিনা পয়সায় সরকারি বাসে সফরের মতো বিষয়। অন্য দিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে মন্তব্য, মোদির হিন্দুত্ব ও বিভাজনের নীতি মুখ থুবড়ে পড়ল দিল্লিতে। মেরুকরণের রাজনীতির সমালোচনা করে দ্য গার্ডিয়ানের মন্তব্য, ‘এই ফলে বিজেপির চেয়েও বেশি হার হয়েছে মোদির।’
এই নির্বাচন বিজেপির জন্য একটি নির্দিষ্ট চিত্র সামনে নিয়ে এলো। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পাকিস্তানের সৃষ্ট কথিত সমস্যা, হিন্দু পরিচিতির মতো সর্বভারতীয় বিষয়গুলো খুবই গুরুত্ব পেয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে লোকজনের জীবন-জীবিকাই প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিজেপি ২০১৮ সাল থেকে রাজ্য পর্যায়ের নির্বাচনে হেরেই চলেছে। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনে বিপুলভাবে যেসব রাজ্যে জয়ী হয়েছে, ওইসব রাজ্যেও তারা বিপুলভাবে হারছে।
উদাহরণ হিসেবে দিল্লির কথা বলা যায়। ২০১৯ সালের লোকসভায় এখানে বিজেপি যেখানে ভোট পেয়েছিল ৫৬.৯ ভাগ, সেখানে এবার পেয়েছে ৩৮.৫ ভাগ। আরেকটি উদাহরণ আরো বিপর্যয়কর। তেলেঙ্গানায় বিজেপি রাজ্য বিধান সভার চেয়ে তিনগুণ বেশি ভোট পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি জয়ী হয়েছিল। হরিয়ানা, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ ও কর্নাটকে রাজ্য বিধান সভার চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। ভারতের নির্বাচনের এই ধরনটিকে রাজনীতি-বিজ্ঞানীরা ‘বিভক্ত টিকেট ভোটপ্রদান’ হিসেবে অভিহিত করছেন। এর ফলে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দল হিসেবে ২০২০ সালে সবচেয়ে কম রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারল বিজেপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।