বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হিজরী দ্বিতীয় শতকে ভারতে ইসলাম প্রচারে যে সকল সূফী, সাধক ও দরবেশের নাম প্রথমে উল্লেখ করতে হয় তাদের মধ্যে শেখ শরীফ ইবনে মালেক, তাঁর ভ্রাতা মালেক ইবনে দীনার এবং তাদের ভ্রাতুসপুত্র মালেক ইবনে হাবীবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা ও তাদের অন্যান্য সঙ্গী সাথে আদম দুর্গ জিয়ারতের উদ্দেশে সিংহল দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন। তাদের পর বিখ্যাত সাধক হজরত দাতা গাঞ্জে বখশ আলী হুজভেরী (রহ.) এর নাম লাহোরে ইসলাম প্রচারে সর্বাধিক বিবেচিত হয়ে থাকে। তিনি ছিলেন হজরত হাসান (রা.)-এর বংশধর, গজনির হুজভের নামক গ্রামে তাঁর জন্ম হিজরী ৪০০/১০০৯ সালে। শিক্ষা সমাপ্তির পর স্বীয় পীর হজরত আবুল ফজল মোহাম্মদ ইবনে হাসান (রহ.) তাকে নির্দেশ দান করেন: পরে তারা ভারতে ইসলাম প্রচার করেন।
‘আলী! যাও, নিজের জীবন সত্যের প্রচার, ইসলামের প্রচার এবং দ্বীনের প্রচারে উৎসর্গ করে দাও, সমগ্র হিন্দুস্থান কুফর ও শিরকে ভরে গেছে। তুমি লাহোরে গমন কর এবং সেখানে অবস্থান কেন্দ্র করে মূর্তি উপাসকদেরকে খোদার বান্দা বানানোর কাজ শুরু কর। এ পথে তোমার সামনে বহু বাধাবিঘ্ন আসবে, কষ্টও ভোগ করতে হবে এবং প্রত্যেক সংকট সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেবে। আল্লাহর বাণী প্রচারে কোন কিছুর পরোয়া করবে না। তুমি খোদার দ্বীনকে সমুন্নত করবে, খোদা তোমার নাম সুমহান করবেন। তুমি ভারতভ‚মির রুহানী মৃতদের জীবন্ত করবে, খোদা তোমাকে স্থায়ী জীবন দান করবেন। তুমি খোদার নামকে জীবন্ত কর, খোদা তোমার নামকে চিরঞ্জীব করবেন।’
হজরত দাতা গাঞ্জে বখশ (রহ.) তাঁর মুর্শিদের নির্দেশ পালনার্থে বাহ্যিক কোনো আসবাবপত্র ছাড়াই পদব্রজে সফরে রওয়ানা হয়ে যান এবং লাহোরে উপনীত হয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সেই কাজে আত্মনিয়োগ করেন, যে কাজের জন্য তাকে প্রেরণ করা হয়েছিল।
সে সময় লাহোরের সমগ্র এলাকা কুফর ও শির্কের গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এটি হজরত আলী হুজভেরী (রহ.) এরই কীর্তি ছিল যে, লাহোর হতে তওহীদের আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সমগ্র পাঞ্জাবকে আলোকিত করে এবং তাঁর ওয়াজ ও তবলীগের ফলে বিপুলসংখ্যক হিন্দু ঈমান আনে এবং মূর্তিসমূহের সামনে মাথা নতকারীরা এক খোদার পূজারী হয়ে যায়।
যে সব লোক হজরতের ওয়াজ নসিহত ও তবলীগের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন তাদের মধ্যে রায় রাজর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ব্যক্তি সুলতান মওদুদ ইবনে মাসউদ গজনভীর পক্ষ হতে লাহোরের শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর মুসলমান হয়ে যাওয়ার পর হজরত দাতা গাঞ্জে বখশ তাকে ‘শেখে হিন্দি’ উপাধিতে ভ‚ষিত করেন এবং এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ লাভ করেন।
মুসলমান হওয়ার পর শেখে হিন্দি তাঁর ঈমান ও এখলাছে এতই উন্নতি লাভ করেন যে, হিজরী ৪৬০/১০৭২ সালে তার মুর্শিদের ইন্তেকালের পর তিনিই তাঁর হেদায়েত-এরশাদের মসনদে সমাসীন তথা খলিফা হন এবং সারা জীবন ইসলামের প্রচার, প্রসারে সাধ্যমত চেষ্টা করেন এবং স্বীয় মুর্শিদের শিক্ষা ও ইসলামের পয়গাম লোকদের নিকট পৌঁছাতে থাকেন এবং পরবর্তীকালেও এ ধারা তাঁর বংশে কায়েম থাকে। হজরত দাতা গাঞ্জে বখশের সময়ে এবং তারপর পাঞ্জাবে অনেকে ইসলাম প্রচার করেন, তাদের কাছেও বহু মূর্তি পূজারী মুসলমান হয়ে যায়।
হজরত দাতা গাঞ্জে বখশ (রহ.) লাহোরে ইসলাম প্রচারের যে ধারা চালু করেছিলেন, তার ইন্তেকালের পর তারই খলিফা ও মুসলিম শেখে হিন্দি তার পদাংক অনুসরণ করেন এবং রাজকীয় শাসন, ক্ষমতা পরিহার করে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীকালে তার ভক্ত অনুসারীগণ হজরত দাতা সাহেবের প্রচার ধারাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান। দাতা সাহেব কর্তৃক তাকে প্রদত্ত খেতাব ‘শেখে হিন্দি’ তাঁর জন্য সার্থক হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।