সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)র গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ, নিহত ও নির্যাতিতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট বারের অ্যাডভোকেট মো. মাহমুদুল হাসান (মামুন) এ রিট করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিরেক্টর জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে। হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিটের শুনানি হবে বলে জানান রিটকারী মাহমুদুল হাসান মামুন।

রিটে বলা হয়, গত ২৪ জানুয়ারি ২০২০ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ৩ দিনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে ৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেণ । মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিএসএফ কর্তৃক ১ হাজার ১৪৪ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। আরেকটি মানবাধিকার সংস্থা ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১১ সালের জানুযায়ী ও নভেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ এর গুলিতে ৩৩ বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন। নির্যাতনে ৫ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। ভারতের সঙ্গে চীন, পাকিস্তান, মায়ানমার, নেপাল, ভূটান ও বাংলাদেশ-এই ৬টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রধানত বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলি ছুড়ে হত্যা করে থাকে। যুদ্ধ ব্যতীত ভারতের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর সীমান্তে হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রায় শূন্য। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০ এর ধারা ১১ (১) (ক) ও (থ) অনুযায়ী সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সীমান্তে চোরাচালান, নারী-শিশু পাচার, মাদকদ্রব্য চোরাচালানসহ সব আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধসমূহ প্রতিরোধের দায়িত্ব বিজিবির। কিন্তু সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ইস্যুতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা বাহিনীসমূহের সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

রিটে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার’ এবং ‘জীবন ও ব্যক্তির স্বাধীন অধিকার রক্ষণ’ প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। অপরদিকে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের যথাযথ বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে । সেক্ষেত্রে সীমান্তে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক কোনও অপরাধ করলে তার আইনগত অধিকার ও বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিবাদীগণ সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে গ ২৬ জানুয়ারি উপরোক্ত বিষয় উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিগ্যাল নোটিস দেন মাহমুদুল হাসান মামুন।