পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী

ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভালো ছাত্র হওয়ার চেয়ে দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়া বেশি জরুরি
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকান্ড বুয়েটের কপালে কালিমা রেখা এঁকেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী বুয়েট এ্যালামনাই এসোসিয়েশন এর গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন-২০২০ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুয়েট এলামনাইয়ের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মহাসচিব সাদিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট এ্যালামনাইয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম।
প্রফেসর আনিসুজ্জামান বলেন, আপনাদের জগৎ আর আমার জগৎ অনেকখানি আলাদা। তবুও আপনারা আমাকে আহবান করেছেন এবং সন্মানের আসন দিয়েছেন সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। ১০ বছর পর পর বুয়েটে রিইউনিয়ন হয়। যখন পরস্পরের সাথে দেখা হয় তখন হৃদয় স্পন্দিত হয় এবং স্মৃতি রোমন্থন হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর কৃষি প্রদান ফ্রাঞ্চ উনিশ শতকে শিল্প প্রদান ফ্রাঞ্চে রুপান্তরিত হল। এর পেছনে সর্বাধিক দায়িত্ব প্রকৌশলীদের। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও প্রকৌশলীদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে।
আবরার ফাহাদের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বুয়েটের অনেক বড় ঐতিহ্য রয়েছে। দুঃখজনকভাবে আবরার ফাহাদ এর হত্যাকান্ড বুয়েটের কপালে কালিমা রেখা এঁকেছে। এই ঘটনার পর জানতে পারলাম শুধু বুয়েটের নয় বাংলাদেশের প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নির্যাতন চলে আসছে। এটা আমাদের খুবই বিস্মিত করে। দেশের সেরা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরাই বুয়েটসহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। তাদের মাঝে যদি এই অমানবিক মানসিকতা থাকে তাহলে এই মেধা নিয়ে কি করব। আজকে এই প্রশ্ন আমাদের নিজেদের করতে হবে এবং এর জন্য পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি তাদেরকে একটা মৌলিক প্রশ্ন করতে হবে, আমরা কি শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতায় নাম্বার পাওয়ার জন্য শিক্ষা গ্রহণ করছি? ভালো ছাত্র হওয়ার চেয়ে দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়া বেশি জরুরি।
সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান ছিল বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঠাঁসা। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী সেশন শুরু হয় সকাল ১০টায়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অতিথিবর্গকে পুষ্পমাল্যে বরণ করে নেওয়া হয়। এলামনাই সদস্য, তাদের স্পাউজ ও সন্তানদের সোৎসাহ উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে করে তুলেছিল প্রাণবন্ত, হৃদয়গ্রাহী। এলামনাইরা একটি দিনের জন্যে হলেও ফিরে এসেছিলেন বহু স্মৃতিবিজড়িত স্বপ্নভূমিতে, আচ্ছন্ন হয়েছেন নস্টালজিয়ায়। প্রবেশ দ্বারেই অতিথি অভ্যাগতদের বিভিন্ন উপহারে বরণ করে নেয়া হয়। এলামনাইদের দেয়া হয় ব্যাগ, টি-শার্ট, স্পাউজদের দেয়া হয় আকর্ষণীয় জিনিস এবং ছোটদের দেয়া হয় রং-বেরংয়ের খেলনা এবং আরো কত কি!
অতিথিদের সকালের নাস্তায় রাখা হয় বেশ ক’টি আইটেম। জুমাহর নামাজ আদায়ের পরই মধ্যাহ্নভোজ। প্রত্যেককে ১টি করে হটপট দেয়া হয়, যার মধ্যে সাজানো ছিল সুস্বাদু, উন্নতমানের বিভিন্ন খাবারের আইটেম। এরূপ ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা ও ব্যবস্থাপনায় খাবার পরিবেশন ব্যবস্থা অতিথিদের বেশ পরিতৃপ্ত করে। এছাড়া সারাদিন সার্বক্ষণিক পরিবেশনা ছিল চা-কফি এবং আইসক্রীম।
বুয়েট এলামনাইয়ের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, বুয়েট প্রতিষ্ঠার ১৫৪ বছরে আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনা সবচেয়ে মর্মান্তিক এবং মারাত্মক। সারা দেশ এবং সারা বিশ্বে এ ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আশা করছি এর সুষ্ঠু এবং কার্যকরী বিচার হবে। আমাদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করা। পুরো শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দুরবস্থা দূর করতে হলে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে কম্পিউটারের জন্য প্রথম সহযোগিতা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে বুয়েট অ্যালামনাই সংগঠিত করার জোর চেষ্টা চলছে। দেশে এবং দেশের বাইরে স¤প্রসারিত করার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বুয়েটের ফিজিক্যাল এনভায়রনমেন্ট এবং একাডেমিক ফেসিলিটি বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।
বুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম আবরারের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। সনাতনী চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চিন্তা নিয়ে বিশ্বের দরবারে দাড়াতে হবে। এ কাজে বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশনকে সর্বোচ্চ সসহযোগিতা করতে হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন প্রফেসর আইনুন নিশাত। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক ও বুয়েট এলামনাই এর সমন্বয়ক প্রফেসর ডঃ মিজানুর রহমান এবং বুয়েট এলামনাইয়ের মহাসচিব ড. সাদিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। দুপুর আড়াই টায় ‹আশা-হতাশা-ভালবাসার বুয়েট’ আলোচনা কর্মসূচী পরিচালনা করেন প্রফেসর আইনুন নিশাত। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে আরও ছিল স্মৃতিচারণ, স্পোর্টস, গেমস, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।