Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন ভারতসহ অর্ধেক দুনিয়া করোনা আতঙ্কে

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ইসলাম প্রচারক হিসেবে যে কারো দায়িত্ব হচ্ছে, প্রতিটি বিপদ-আপদ ও মুসিবতকে ইতিবাচকভাবে দাওয়াতের কাজে লাগানো। চীন দেড়হাজার বছর ধরেই শান্তিপ্রিয়তার পরিচয় দিয়েছে। খেলাফতের যুগে মদীনার মুজাহিদদের তিনটি প্রস্তাবের মধ্যে চীন মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছিল। ইসলাম কবুল করেনি। অস্বীকার করে যুদ্ধও বাধায়নি। খেলাফতে রাশেদার যুগে চীনরাজ জিযিয়া দিয়ে মদীনার বশ্যতা স্বীকার করে প্রচারকদের ইসলাম প্রচারের সুযোগ দিয়েছিল। যেজন্য চীনের প্রতিটি অঞ্চলে মুসলিমরা নির্দ্বিধায় বসবাস করতেন। মাওসেতুংয়ের কমিউনিষ্ট বিপ্লবের সময় চীন ইসলামের ওপর উল্লেখযোগ্য আঘাত হানে। সেসময় কমবেশি ৫ কোটি মুসলমানকে হত্যা করা হয়।

বর্তমান চীনে মুসলিমদের ব্যবসা, আসা যাওয়া থাকলেও নাস্তিকতার ছোবল থেকে মুসলমান মোটেও নিরাপদ নয়। বিশেষ করে তুর্কী বংশোদ্ভ‚ত উইঘুর ১০ লাখ মুসলমানের সাথে চীনের আচরণ অনেক বড় জুলুম। আইনে দোষী কোনো ব্যক্তিকে বিচারে শাস্তি দেয়া এক কথা, আর একটি সম্প্রদায়কে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়া আরেক কথা।

এরপর নিজেদের পছন্দ মতো কোরআনের পরিবর্তিত সংস্করণ তৈরির চিন্তা কোনো সুস্থ চিন্তা নয়। সামান্য একটি জীবাণু দেড়শ কোটি মানুষকে কীভাবে আতঙ্কিত করতে পারে, তার নজির পৃথিবী আজ দেখতে পাচ্ছে। পৃথিবীর সরগরমতম দেশ ও রাজধানী আজ যেন মৃত্যুপুরী। দুনিয়ার মানুষ তবুও কি শিক্ষাগ্রহণ করবে না। যারা হেদায়াতের সূর্য মহান ইসলামের দাওয়াত পেয়েও চোখ থাকতে অন্ধ, কোনো কিছুতেই কি তাদের চোখ খুলবে না।

সামান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে গত বছর আমেরিকার প্রায় ১০/১২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছিল ২ কোটি। আশঙ্কায় ছিল ৬ কোটি। চীন ও ভারতে মুসলিমদের প্রতি আচরণ, নানারকম হারাম বস্তু ও প্রাণী খাওয়া এবং ইসলামের আধুনিক যুগেও নোংরামি ও কুসংস্কার চালিয়ে যাওয়ার শাস্তিস্বরূপ কুদরতি কোনো গজব নেমে আসা অসম্ভব নয়।

বিপদকে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার মাধ্যমরূপে দেখা হেদায়াতের নিদর্শন। আর কোনোকিছু থেকেই শিক্ষাগ্রহণ না করা দুনিয়া আখেরাত উভয়টি বরবাদ করার পুরনো পদ্ধতি। যুগে যুগে খোদাদ্রোহী ও অবিশ্বাসীরা যে সর্বনাশা ভুলটি করে এসেছে।

এ কথা সব দেশ ও জাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। করোনায় ভারতের ৭ জন আক্রান্ত হওয়ায় এখানকার সোয়াশ কোটি মানুষও হুমকির আওতায়। চীনের ৩৪টি প্রদেশসহ বিশ্বের ২৭টি দেশ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্ণ আশঙ্কায়। যেসব বাংলাদেশী চীনে আছেন, বিশেষ করে হুনান ও ইউহান প্রদেশে, তারা বেশি ঝুঁকিতে।

ঈমান মানুষকে কতটা মানবিক বানায়, তার নজির বাংলাদেশের মুসলমান। ঢাকার এক নারী চীন থেকে বলেছেন, প্রয়োজনে এখানেই মরে যাব, তবুও এ রোগ বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে যাব না। এটি কোরআন শরীফের ওই আয়াতের প্রতিফলন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের চরিত্র তুলে ধরেছেন। বলেছেন, তারা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের জীবনের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়। (আল কোরআন)।

এদিকে বাংলাদেশের মানুষও তাদের স্বজনদের সেখানে ফেলে রাখতে চায় না। আর্মির দু’জন ডাক্তার নারী পুরুষ ও অন্য একজন কর্মকর্তা আল্লাহর নাম নিয়ে চীনে গিয়েছেন আগ্রহীদের ফিরিয়ে আনার জন্য। সর্বশেষ তারা আত্মীয় স্বজনদের কাছে এ বলে বিদায় নিয়েছেন, যদি জীবন চলেও যায়, তথাপি আমরা কিছু মানুষকে বিপদমুক্ত করার মিশনে যাচ্ছি। যখন বিমানে উঠার সময় ছয়জন ভারতীয়কে ইন্ডিয়ান বিমান চীনে নামিয়ে রেখে এসেছে। পাকিস্তান সরকারিভাবে ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তারা কোনো পাকিস্তানীকে চীনের আক্রান্ত শহর থেকে ফেরত আনবে না।

নবী করিম সা. বলে গিয়েছেন, যদি কোথাও মহামারি বা মারাত্মক ব্যাধি দেখা দেয়, তাহলে সেখানকার মানুষ যেন অন্যত্র না যায়। আর অন্য জায়গার মানুষ যেন সেখানে না যায়। (আল হাদিস)
মুহাদ্দিসগণ যুগে যুগে-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ওই জায়গার বিপদটি আল্লাহ যখন যেভাবে চাইবেন দূর করবেন। যাদের ভাগ্যে মৃত্যু লেখা তারা ছাড়া কেউ মরবে না। তবে, যেখানে বিপদ দেননি সেখানকার মানুষ ইচ্ছা করে এ জায়গায় যেন না আসে।

এরপরও যদি সতর্কতা সত্তে¡ও বিভিন্ন জায়গায় মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদের বিপদটিও হাদিসের আলোকে এভাবে দেখতে হবে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মহামারী রোগ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বলেন, এটা ছিল আল্লাহর তরফ থেকে একটা শাস্তি। আল্লাহ যাকে চান তার ওপর এটা পাঠান। তিনি এটাকে মুমিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিয়েছেন।

কোন মুমিন বান্দা মহামারী রোগে আক্রান্ত হলে যদি সে তার এলাকায় সবর সহকারে সওয়াবের নিয়াতে এ কথা জেনে-বুঝে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতেই সে আক্রান্ত হয়েছে, তবে সে শহীদের সাওয়াব পাবে। (আল হাদিস, সহীহ বুখারী)।

শত শত কোটি মানুষ আতঙ্কে থাকলেও এবং বিজ্ঞানীরা ৬/৭ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা পোষণ করলেও মানুষ কিন্তু এ পর্যন্ত মরেছে, তিন শতাধিক। আক্রান্ত ৫ হাজারের মতো। জরুরি সেবা ও চিকিৎসার লোকজনের চলা ফেরা হাদিসে নিষেধ করা হয়নি। বলা হয়েছে, কোনো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা সাধারণ নাগরিকদের কথা। আজকের বিজ্ঞান হাদিসের-এ অমূল্য উপদেশের ওপরই আমল করছে। চীনের মূল শহরটি এভাবেই সিল করে দেয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরসহ পূর্ব ও পশ্চিমের বহু এয়ারপোর্ট চীনের সাথে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে। সতর্কতার জন্য এসবই সঠিক পদ্ধতি। মুসলমানদের জন্য সতর্কতার পাশাপাশি এ দোয়া ও প্রার্থনা বিধিবদ্ধ। নবী করিম সা. বলেন, ‘আল্লাহর বরকতময় পূর্ণ বাণীর মাধ্যমে আমি তার আশ্রয় চাচ্ছি। তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, এর সব মন্দ বিষয় ও প্রভাব থেকে।’

অমুসলিমদের জন্য এসব বিপদ ঈমানের দাওয়াত। তাদের উচিত মুসলিমদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। সব মানুষের সাথে কৃত অমানবিকতা থেকে তওবা করা। অবিশ্বাস থেকে বিশ্বাসের দিকে ফিরে আসা। এতে তারা দুনিয়ায় রহমত বরকত এবং পরকালে মুক্তি ও নাজাত পেতে পারেন।



 

Show all comments
  • Musabbir Husen Kazal ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    ভাই যিনী লিখেছেন সত্যিই আপনার প্রেমে পড়ে গেলাম,অসাধারন ভাবে লিখেছেন, আল্লাহ আপনার উপর রাজী,খুশি হউন।
    Total Reply(0) Reply
  • Towhid Munna ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ইনকিলাব এর সম্পাদক সাহেব,
    Total Reply(0) Reply
  • Ashikur Rahman ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    আল্লাহর গজব নাজিল হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    এই গজব থেকে মানবজাতীর অনেক কিছু শেখার আছে
    Total Reply(0) Reply
  • রকিবুল ইসলাম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    তাদের উচিত মুসলিমদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুম ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    সকলের উচিত মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
    প্রত্যেকটি ঘটনা থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষনীয় আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৮:০৩ এএম says : 0
    চীন,ভারতের মুসলমানদের উপর নিযাতনের প্রতিবাদ না কররায় চীনাদের উপর এগজব আসল.
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৪৮ এএম says : 0
    আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে বোঝার এবং আল্লাহ্‌ ও রাসুল (সাঃ) অনুগত্য হওয়ার তৌফিক প্রধান করুণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Alam ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১০:০৪ এএম says : 0
    Allah Sobaika Maf kora din. Allah sobaika Hedayet din, Amin
    Total Reply(0) Reply
  • Anish Ahmed ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১১:২২ এএম says : 0
    Alhamdulilah. Allah will help me and God is kind.
    Total Reply(0) Reply
  • gil ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:৫০ পিএম says : 0
    উইঘুরু মুস্লিমদের জন্য রুখে দারানোর এখনি সময়।চাইনা এত সহজে হার মানবেনা।এই মহামারি থামলেই তারা আবার নিরজাতন সুরু করবে। উইঘুরু মুস্লিমরা যদি জিহাদ না সুরু করে তাহলে পরে বিপদে পরবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jonny Jony ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:৪৩ পিএম says : 0
    Inside china already dead 31000+ peoples..but china said only 600+
    Total Reply(0) Reply
  • Jonny Jony ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:৪৩ পিএম says : 0
    Inside china already dead 31000+ peoples..but china said only 600+
    Total Reply(0) Reply
  • Jonny Jony ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:৪৪ পিএম says : 0
    Inside china already dead 31000+ peoples..but china said only 600+
    Total Reply(0) Reply
  • Jonny Jony ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:৪৪ পিএম says : 0
    Inside china already dead 31000+ peoples..but china said only 600+
    Total Reply(0) Reply
  • Jonny Jony ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:৪৫ পিএম says : 0
    Inside china already dead 31000+ peoples..but china said only 600+
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন