Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আন্দোলনের প্রথম ধাপ হরতাল’

নয়াপল্টনে বিএনপির অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটে কারচুপি, জালিয়াতি ও জবরদস্তি করে ফলাফল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই ইস্যুতে গতকাল রোববার ঢাকা শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। গতকাল রোববার হরতালের সমর্থনে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে দলটির নেতাকর্মীরা। ঘোষিত সময় অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে হরতালের কর্মসূচি শুরু হয়। এই সময়েই নেতাকর্মীদের নিয়ে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন নির্বাচনী প্রচারণাকালে হামলায় আহত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। হাতে ও পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়েই তিনি ভোর বেলা কার্যালয়ের সামনে চেয়ার বসিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। তারা হরতালের পক্ষে, নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নানান স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংখ্যা বাড়ে। সকাল নয়টার পর বিএনপি মহাসচি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোটর সাইকেল যোগে এসে নেতাকর্মীদের সাথে যোগ দেন। বেলা ১১টার দিকে হরতালের সমর্থনে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। এরও এক ঘণ্টা পর নয়াপল্টনে আসেন উত্তর সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্যায়, অবিচার, জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিমাণ এত বেশি হয়ে গেছে যে এখন আমাদের তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে হবে। সেই আন্দোলনেরই একটা ধাপ হচ্ছে হরতাল। তিনি বলেন, ইভিএম ভোট ডাকাতির একটা যন্ত্র। ইভিএম, ভোট ডাকাতিসহ সবকিছু মিলিয়ে যেভাবে নির্বাচন ছিনতাই করেছে, তার বিরুদ্ধেই এই হরতাল। সরকার জোর করে ক্ষমতায় আছে। তারা যদি মনে করে এভাবেই দেশ চলবে, সেটা কোনো দিন চলতে পারে না। ন্যায়ের জয় হবে, ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে। সরকারের চলে যাওয়াটা কেমন হবে সেটাই দেখার বিষয়।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সচিব বলেন, আগেও আমি বলেছি অন্যায় করে, বেআইনি কাজ করে, মানুষের ওপর জুলুম করে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। এরা টিকে থাকতে পারবে না। জাতীয় নির্বাচনের পরে হরতাল দেননি, এখন কেন দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, কারণ একটাই মানুষের কাছে সরকার হরতাল সম্পর্কে নানাভাবে বিকৃত তথ্য দিয়েছে। এখন হরতাল দিয়েছি এজন্য যে মানুষের কাছে এটাই প্রমাণ করা যে হরতাল কোনো বিধ্বংসী অথবা জঙ্গি কর্মসূচি নয়। হরতাল কেমন চলছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার দিকে গাড়িঘোড়া চলছে না। দোকানপাট বন্ধ আছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে। জনগণ আমাদের ডাকা হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। এটাই আমাদের পাওয়া।

হরতালের সমর্থনে বিএনপির এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ, এড. আবদুস সালাম আজাদ, আবেদ রাজা, নিপুণ রায় চৌধুরী, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, হারুন অর রশীদ, মোর্শেদ আলম, সুলতানা আহমেদ প্রমূখ।

এ সময় নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনের সড়কে অন্যদিনের তুলনায় কমসংখ্যক গাড়ি চলতে দেখা যায়। এ ছাড়া সকাল থেকে বিএনপি অফিসের সামনে সারিবদ্ধভাবে বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থানকালে ইশরাক হোসেন বলেন, নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় প্রমাণ করে এ নির্বাচন কারচুপির। নির্বাচনের ফলাফলের যে পরিমাণ ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে তার চাইতে অনেক কম ভোট কাস্ট হয়েছে। আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ সমর্থকরা সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেননি।
তিনি বলেন, যে ফলাফল ঘোষণা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মনগড়া একটি সাজানো ফলাফল। এ ফলাফল এর মাধ্যমে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি।

তাবিথ আউয়াল বলেন, ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হয়নি। এ রকম নির্বাচন আমরা কখনই প্রত্যাশা করিনি। আমরা এই ভোটচুরির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে দাবি করে বিএনপির পরাজিত এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, হরতালের দাবি সাধারণ জনগণের কাছ থেকে এসেছে। আর আমরা সাধারণ জনগণের পাশে আছি, তাদের পক্ষে আছি।

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ফল প্রত্যাখ্যান করে হরতালের সমর্থনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদল। সকাল ১১ টার দিকে শহীদ মিনার এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলের আগে ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। ঢাবি ছাত্রদলের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব মোঃ আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে এতে দুই শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ছাত্রদল গাড়ী ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। ওই এলাকায় থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেছেন। তবে ভাঙচুরের সঙ্গে ছাত্রদলের কেউ জড়িত নয় বলে জানিয়েছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সকাল থেকে হরতালের ডাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকি। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার হয়ে জগন্নাথ হলে যাই। সেখানে ২ শতাধিক নেতাকর্মীসহ উপস্থিত ছিলাম। হরতাল পালনে কোনও অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি। ঢাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমান উল্লাহ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছি। কোনো ধরনের ভাঙচুর করা হয়নি। আমরা ক্যাম্পাসকে অস্থিশীল করতে চাইনা।

এদিকে হরতালে ঢাবি ও শাহবাগ এলাকায় কোন প্রভাব পড়েনি। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটি বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা অন্য দিনগুলোর মতোই স্বাভাবিকভাবে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার চত্বর, শ্যাডো, কার্জন হলসহ বিভিন্ন এলাকায় কর্মযঙ্গ ছিলো স্বাভাবিক। তবে এদিন কিছু কিছু বিভাগে অন্য দিনের তুলনায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিলো বলে জানা গেছে। ঢাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলছে। কোনও অপশক্তি ক্যাম্পাসে অশুভ কার্যক্রম করতে চাইলে তা মোকাবিলা করেই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট থেকে মুক্ত করবো।

অন্যদিকে হরতালে শাহবাগ এলাকার যান চলাচল স্বাভাবিক থাকতে দেখা গেছে। সকাল থেকে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যানবাহনগুলোর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জাবি সংবাদদাতা জানান, বিএনপির ডাকা হরতালকে অযৌক্তিক দাবি করে সভাপতিকে বাদ দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৭টি হলের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহণ চত্ত¡র থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাইনুল হুসাইন রাজন বলেন, বিএনপির ডাকা অবৈধ হরতাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মানেনা। এসময় তিনি জাবি ছাত্রলীগের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, গত ছয় মাস যাবৎ সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে নেই। সভাপতিকেও সব সময় পাওয়া যায় না। এভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট চলতে পারে না। তাই আমরা এখন থেকে নতুন এই প্লাটফর্মে কর্মসূচী পালন করবো। আজ আপনাদের উপস্থিতি প্রমাণ করে নতুন প্লাটফর্মে প্রাণ ফিরে পেয়েছে শাখা ছাত্রলীগ।

বিক্ষোভ মিছিলটির নেতৃত্বে ছিলেন- শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মিজানুর রহমান, জহিরুল ইসলাম বাবু ও বায়েজিদ রানা কলিংস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফফান হোসেন আপন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তারেক হাসান ও অভিষেক মন্ডল এবং নিলাদ্রী শিখর মজুমদার, ইসমাইল হোসাইন, মাহমুদুল হাসান রিজু প্রমুখ ।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে নতুন কমিটির দাবিতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিশ^বিদ্যালয়ের ছেলেদের ৮টি হলের মধ্যে ৭টি হলের নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে কর্মসূচী পালন শুরু করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ