পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ৫ লাখ টাকার উপের বিনিয়োগে উৎসে কর বাড়ায় কঠিন হয়ে পড়েছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। আবার ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখতে চাইছেন না অনেকে। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকেই অস্থিরতায় দেশের পুঁজিবাজার। এরপর আবার এখন থেকে ব্যক্তি আমানতে ৬ শতাংশ সুদ কার্যকর করেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীরা বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে আনুষ্ঠানিকভাবেও জানিয়েছেন। গতকাল রোববার থেকেই যা কার্যকর হয়েছে।
ব্যক্তি আমানতে ৬ শতাংশ সুদ কার্যকরের বিষয়ে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে মানুষের মধ্যে ব্যাংকে আমানত রাখা কমিয়ে বাসাবাড়িতে রাখার প্রবণতা বাড়বে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থনীতি আরও ধীর হয়ে পড়বে। এছাড়াও আমানত নিয়ে নতুন এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, উচ্চ সুদের প্রলোভন দেখিয়ে গজিয়ে উঠতে পারে নানা ‘হায় হায়’ কোম্পানির দৌরাত্ম। সঞ্চয়কারীকে নিঃস্ব করে যে কোনো সময় আবার হাওয়া হয়ে যেতে পারে তারা। একই সঙ্গে তারল্য সংকট আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দুর্বল ভিত্তির ব্যাংকগুলোর। বিশেজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের বড় অংশ আসে সঞ্চয় থেকে। এরই মধ্যে সরকারি আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদহারের সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। আগামী এপ্রিল থেকে অন্য আমানতেও এ সীমা কার্যকর হওয়ার কথা। সব ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হলে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে বেশি মুনাফার আশায় যেনতেন প্রতিষ্ঠানে রাখতে পারেন। জনগণের আমানত অপ্রচলিত খাতে চলে গেলে ব্যাংকে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে। ফলে নতুন করে ডেসটিনি, ইউনিপে টু, কো-অপারেটিভ ব্যাংক, যুবকের মতো অনেক ধান্দাবাজ প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠবে। ফলে ঋণের সুদ কমানোর লক্ষ্যে শুধু আমানতের সুদ কমানোর ওপর জোর না দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়, উচ্চ খরচ কমানোর পাশাপাশি বড় মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ব্যাংকগুলোকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
সূত্র মতে, ব্যাংক মালিকরা নয়-ছয় সুদহার বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন ২০১৮ সালের জুনে। ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটা এখনো কার্যকর করেননি ব্যাংক মালিকরা। গত বছরের শেষ সময়ে এসে কমিটি গঠন করে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং সেটা নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকরেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু সার্কুলার জারির আগমুহূর্তে এসে ওই সিদ্ধান্তও ঝুলে যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ক্রেডিট কার্ড বাদে সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এ ছাড়া সব ধরনের আমানতের সর্বোচ্চ সুদের হার ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা কার্যকর করার কথা ছিল ১ এপ্রিল। কিন্তু গত ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) রাতে গুলশানে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক জরুরী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় তারা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ শতাংশে আমানতের সুদের হার কার্যকর করবেন। সে মোতাবেক গতকাল ব্যাংক আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ করার ঘোষণা আসে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানায় ব্যাংক এবিবি’র নেতারা।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ জানান, ১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশে ব্যাংক ঋণের সুদহার নামিয়ে আনার বিষয়ে আমরা গভর্নরকে অবহিত করেছি। পাশাপাশি চলতি মাস ফেব্রুয়ারি থেকেই আমানতের সুদহার কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না কোনো ব্যাংক। মেয়াদি স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে বলা হয়, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যাবে। এই আমানতের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ পাবে সরকারি সংস্থাগুলো। আর সরকারি ব্যাংকে আমানত রাখলে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ শতাংশ সুদ নিতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ হলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তি আমানতকারীরা নিরুৎসাহ হবেন। ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমার আশঙ্কা তৈরি হবে। এমনিতেই অনেক দিন ধরেই ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সব আমানতের ক্ষেত্রে সুদের সর্বোচ্চ হার ৬ শতাংশ যদি হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আরো কম দেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি ৬ শতাংশও দেয়, তাহলেও ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃতপক্ষে কোনো মুনাফা ঘরে তুলতে পারবে না মানুষ। কারণ এখন মূল্যস্ফীতির হারই প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি। এর ওপর উৎস কর ও আবগারি শুল্কের বিষয় রয়েছে। সব মিলে ব্যাংকে টাকা রেখে প্রকৃত মুনাফা ঘরে তোলা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
জানা যায়, বিশ্বের অনেক দেশে টাকা রেখে দুই-আড়াই শতাংশ বা তার চেয়ে কম সুদ পাওয়ার নজির আছে। তবে ওইসব দেশে মূল্যস্ফীতি খুব কম থাকায় এবং বিনিয়োগ করার মতো নির্ভরযোগ্য অনেক উপায় থাকায় সেখানে সঞ্চয়কারীদের ঠকতে হয় না। তবে বাংলাদেশে প্রায় ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। আমানতেও এ রকম সুদ পাওয়ার মানে, তিনি আসলে যে টাকা রাখবেন তা থেকে ক্ষয় হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত ডিসেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এখন ধরা যাক, একজন ব্যক্তি এক লাখ টাকার মেয়াদি আমানত রাখলেন। ৬ শতাংশ হারে বছর শেষে তিনি পেলেন এক লাখ ৬ হাজার টাকা। তবে মূল্যস্ফীতির কারণে এখন এক লাখ টাকায় যে পণ্য কিনতে পারছেন, এক বছর পরে তা কিনতে খরচ করতে হবে এক লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মানে, নিট তিনি পেলেন এক লাখ আড়াইশ’ টাকা। তবে টিআইএন না থাকার কারণে পুরো ৬ হাজার টাকা মুনাফার ওপর তাকে উৎসে কর দিতে হবে ৬শ’ টাকা। এর ওপর বছরে দুই দফায় চারশ’ টাকা চার্জ নেবে ব্যাংক। এর মানে, এক লাখ টাকা রেখে বছর শেষে তিনি আসলে পাচ্ছেন ৯৯ হাজার ২৫০ টাকা।
এদিকে অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও টাকা রাখতে চাইছেন না অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ অনিয়মসহ নানা কারণে টাকার চরম টানাটানিতে পড়েছে কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অবস্থা এতটাই খারাপ যে গ্রাহকের টাকা পর্যন্ত ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া ১ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে সুদ কমিয়ে দেয়ায় আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে লাগছে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। প্রকৃত গ্রাহকদের হাতে সঞ্চয়পত্র পৌঁছাতেই এমনসব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু গত জুলাইয়ে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অস্বাভাবিক স্থবিরতা নেমে এসেছে। যার ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রতিদিন নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ১২৮ কোটি টাকার। গত বছরের নভেম্বরে তা ১০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না। এটা করলে মানুষ টাকা ব্যাংকে রাখতে চাইবেন না। তিনি বলেন, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যারা সঞ্চয় করেন তারা যে শুধু সঞ্চয় দেশে রাখবেন, তা নয়। বিদেশেও সঞ্চয় করতে পারেন। কাজেই আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হবে। তা না হলে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাবে। এ জন্য সঞ্চয়কে আকর্ষণীয় করতে হবে। তার মতে, ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার ৯ এবং আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হলে আমানত কমে যাবে। তারল্য সংকট সৃষ্টি হবে। কমে যাবে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা। ছোট ঋণগ্রহীতারা ঋণ পাবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানত রয়েছে ১১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬ হাজার কোটি মেয়াদি আমানত। মাত্র ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা রয়েছে চলতি হিসাবে। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের সিংহভাগ বেসরকারি খাতের। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে উদ্বৃত্ত অর্থ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ চলতি জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত মাসে দেশের ৬০টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৫টি ব্যক্তি আমানতকারীদের থেকে তহবিল সংগ্রহে গড়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি, বিশেষায়িত দুটি, বিদেশি চারটি ও বেসরকারি ১৩টি ব্যাংক। বাকি ৩৩টি ব্যাংক আমানতকারীদের গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আগের মাস ডিসেম্বরে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২০টি ব্যাংক আমানতকারীদের সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ দিয়েছিল। এর মানে এক মাসের ব্যবধানে পাঁচটি ব্যাংক তাদের আমানতের সুদ কমিয়ে এনেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।