পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আর মাত্র দুই দিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের পর সবচেয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ ও জমজমাট ভোটের লড়াই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই সিটির নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানীতে চলছে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা। দেশের ভোটের সংস্কৃতি উৎসবমুখর পরিবেশ, উত্তেজনা, পক্ষ-বিপক্ষের অভিযোগ, পাল্টা-পাল্টি অবস্থান, হামলা, মামলা, গ্রেফতার, ভোটারদের কাছে ছুটে যাওয়া, আকৃষ্ট করার চেষ্টা সবই মিলছে এই নির্বাচনে।
গত ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘন, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর, বাড়িতে হামলা, মুখোমুখি অবস্থান, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উৎসবমুখর নির্বাচনী প্রচারণা কখনো কখনো ছড়িয়েছে উত্তাপ ও উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায় বাঁধার অভিযোগ না করলেও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীসহ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর এবং বাড়িতে হামলা, কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ ততই উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয়া, এজেন্টদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
রাজধানীর অলি-গলিতে সকালের পর থেকেই গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাইক লাগিয়ে, মিছিলে, স্লোগানে প্রচারণা। প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা রাজধানী। গানের সুরে, স্লোগানে চলছে নিজস্ব প্রতীকে ভোটের প্রার্থনা। পাবলিক পরিবহন, চায়ের দোকান, রাস্তার মোড়, হাট-বাজারেও চলছে ভোটের আলাপ, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি তর্ক।
দুই সিটিতে মেয়র পদে ১৩জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও মূল লড়াই হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে। উত্তরে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম এবং ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির তাবিথ আউয়াল। আর দক্ষিণে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। এছাড়াও উত্তরে ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, দক্ষিণে আলহাজ্ব আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন বেশ কয়েকজন প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার প্রার্থী গত ২০দিন ধরে চষে বেড়িয়েছেন রাজধানীর রাজপথ, থেকে শুরু করে অলি-গলিতে। ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, শুনছেন নাগরিক ও এলাকাবাসীর নানা সমস্যা, দিচ্ছেন অচল ঢাকাতে সচল করে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি এবং নির্বাচিত হলে সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী ইশতেহারেও প্রত্যেকেই রাজধানীর দূষণ, যানজট, দুর্নীতি, অনিয়ম, অচল ঢাকাকে সচল করা, পানির সমস্যা সমাধান, খাল উদ্ধার, নাগরিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে বিশ্বমানের শহর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন।
প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করেন, সরকার বিগত এক দশক ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণেই রাজধানীর ভোটাররা এই ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাদের জয়যুক্ত করবে। অন্যদিকে নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হওয়ায় নিঃশব্দ কারচুপির আশঙ্কা করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। প্রচারণাকালে তাদের ওপর হামলা, সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে হামলা, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, পোস্টার ছিড়ে ফেলাসহ নানাভাবে তাদের বাঁধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে তারা বিজয়ী হতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। এজন্য গত কয়েকদিনের প্রচারণায় উত্তরের তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের ইশরাক হোসেন ভোটারদেরকে কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা বলছেন, জনগণ বিএনপি আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যদি জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে হাতপাখার জয় হবে।
দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করি, দেশের যে প্রান্ত থেকেই আসি না কেন আমরা সবাই এ নগরীকে ভালোবাসি। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ঢাকাকে উন্নত করার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এরপরে আর এমন সুযোগ নাও আসতে পারে।
সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দান এবং প্রচার প্রচারণার শুরুর প্রথম থেকেই আওয়ামী প্রার্থীরা ক্ষমতার অপব্যবহার, অব্যাহত আচরণ বিধি লঙ্ঘন, প্রচারাভিযানে হামলা, দলীয় নেতা কর্মীদের উল্টো মামলা, গ্রেফতার, পোস্টার লাগাতে বাঁধা দান, পোস্টার ছিড়ে ফেলোসহ নানা ধরনের বিঘ্ন ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বারবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার পরও কমিশন থেকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না, বরং তারা বরাবরের মতই নির্বিকার। নির্বাচনের নুন্যতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও ঠিক হয়নি। এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও বিগত সকল নির্বাচনের মতই তামাশা ও প্রহসনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, নৌকার কোন ব্যাক গিয়ার নেই। নৌকার একটাই গিয়ার আর তা হল উন্নয়নের। আমি যদি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হই তাহলে আমি কথা দিতে চাই, প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতি মাসে জনগণের সামনে মেয়র এবং কাউন্সিলর উপস্থিত হবে। অর্থাৎ জনগণের মুখোমুখি হয়ে তাদের কথা শুনবো, অভিযোগ জানবো, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবো। যার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন, মেয়র এবং কাউন্সিলর জনগণের মুখোমুখি হয়ে জবাবদিহিতার আওতায় আসবে।
উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, যেভাবে ভোটারদের মধ্যে সাড়া পাচ্ছি তাতে ধানের শীষের বিজয় ঠেকানো যাবে না। বিজয়ী হওয়ার জন্য সব ধরনের শান্তিপূর্ণ প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আমরা ভোট কেন্দ্রে যাব, আমাদের পোলিং এজেন্টরা যাবেন, প্রার্থীরা যাবেন। সুষ্ঠু ও নির্বিঘেœ যাতে ভোটাররা ভোট দিতে যেতে পারেন, সেই পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচিত হলে আধুনিক স্মার্ট ঢাকা গড়বো। দুর্নীতির মূল উৎপাটন করবো এবং একটি নারী বান্ধব শহর হিসেবে ঢাকাকে তৈরী করবো।
পাঁচ পরিকল্পনায় তাপসের নির্বাচনী ইশতেহার:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীন মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পাঁচ পরিকল্পনায় নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার নির্বাচনী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যের ঢাকা, সচল ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও উন্নত ঢাকা।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তাপস বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে দায়িত্ব নেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকাবাসীর মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবো।
উন্নত ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ঢাকাবাসীর চাহিদা বেশি নয়। চার-পাঁচটা মৌলিক সমস্যা সমাধান করলেই তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা অনেক সময় অতিবাহিত করে ফেলেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকাবাসীর মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবো। ৯০ দিনের মধ্যে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবো, এই ঐতিহ্যের ঢাকাকে কীভাবে আরও সুন্দর করা যায় সে ব্যাপারে। আমি বিশ্বাস করি সততা,নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যদি আমি ২৪ ঘণ্টা কাজ করি তাহলে পরিবর্তন আনতে পারবো। ঢাকাবাসীর কাছে সেবাগুলো পৌঁছে দিতে পারবো। যদি নির্বাচিত হই তিন বছরের মধ্যে ঢাকাকে পরিবর্তন করতে পারবো।
এদিন প্রেসক্লাবকে মুক্তচিন্তার প্রতীক অভিহিত করে তাপস বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাব কেবলমাত্র সাংবাদিকদের জায়গা নয়। এটি মুক্তচিন্তার প্রতীক, মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক। আমি নির্বাচিত হলে মুক্তচিন্তাকে সবসময় অগ্রাধিকার দেবো ও সম্মান প্রদর্শন করবো। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে যে কোনো সমস্যার সমাধানে সাংবাদিকের মতামত নেবো। কারণ আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর আকাক্সক্ষা ও চাহিদা উপলব্ধি করা যায়। মতবিনিময় সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, শ্যামল দত্তসহ আরও অনেক সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
হামলার বিবরণ তুলে ধরেছেন ইশরাক: মনোনয়ন জমা এবং প্রচার প্রচারণার শুরুর পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রচারণায় বাঁধা দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনেছেন ইশরাক হোসেন। তিনি জানান, গত ২ জানুয়ারি ৩২ নং ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী তাজ উদ্দিন আহমেদ তাজুকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণার পর নিজ এলাকায় ফেরার পথে গোপীবাগ (দেশবন্ধু হোটেলের) সামনে থেকে সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। একি ওয়ার্ডের আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইমন ও তার বড় ভাই কাইয়ুম -এর নেতৃত্বে ৪০/৫০ জন লোক বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীর অফিসে গিয়ে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ভয়-ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করে। নির্র্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারনার শুরুর আগেই আওয়ামী প্রর্থী ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, মতিঝিলসহ দক্ষিণ ঢাকার প্রায় সর্বত্র নির্বাচনের বিধিমালা ভঙ্গ করে রঙিন ও সাদা কালো পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে ফেলে। দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও সকাল ১০ টা থেকেই মাইকে প্রচারণা শুরু করে। ১২ জানুয়ারি ৪১নং ওয়ার্ডের বলধা গার্ডেনের সামনে থেকে ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় চার জন কর্মীকে গ্রেফাতার পুলিশ। একই দিনে প্রচারণা চালানোর সময় নয়াবাজার থেকে যুবদল নেতাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। ২৫নং ওয়ার্ডের পলাশী, ৪১নং ওয়ার্ডের ওয়ারী স্ট্রিটে, হাজারীবাগের ২২নং ওয়ার্ডে, ১৪ জানুয়ারি ২২নং ওয়ার্ডে বিডিআর ১নং গেটের পশ্চিমে পোস্টার লাগানোর সময় শাসক দলের লোকজন ধানের শীষের প্রার্থীর লোকজনকে মারপিট করে। ১৫ জানুয়ারি প্রচার-প্রচারণা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে বিএনপির মীর নেওয়াজ আলীকে গ্রেফতার করে। ৩৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুন নেসার নির্বাচনী অফিস ও তার বাড়িতে বারবার হামলা, গুলি ও ভাংচুর করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকেরা। ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুরনো ঢাকার হোসেনি দালানের মেইন গেটের সামনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর ১০/১৫ জন ধানের শীষের মাইক ভাংচুর ও প্রচার কাজে নিয়োজিত প্রচার কর্মী ও রিক্সা চালককে মারধর করে। ২৬ জানুয়ারি গণসংযোগ শেষে বাসায় ফেরার পথে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিনের নির্বাচনি ক্যাম্প থেকে লাঠি, রড, হকি স্টিক নিয়ে হামলা করা হয়।
ইশরাক বলেন, জনগণের প্রত্যাশা সম্পূর্ণ অপূর্ণই রয়ে গেল। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে ঢুকে হুমকি, ধামকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
তবে ভোটারদের ওপর আস্থা রেখে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন এবং ভোট দিতে পারেন, জনগণের মতামত প্রতিফলিত হলে নির্বাচনী তিনি বিজয়ী হবেন।
আতিকুল মঞ্চ থেকে নামতেই সংঘর্ষ-চেয়ার ছোড়াছুড়ি:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে (ডিএনসিসি) আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের সমাবেশে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গুলশানের শহীদ ফজলে রাব্বি পার্কের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। সমাবেশস্থলে চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
ওই দুই প্রার্থী হলেন- ঢাকা উত্তর ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নাসির ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জাহিদুর রহমান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পার্কের ভেতরে আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী সমাবেশ চলছিল। এ সময় সেখানে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী জাহিদুর রহমান কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসেন। এর পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নাসিরের কর্মী-সমর্থক ও জাহিদুর রহমানের কর্মী-সমর্থকরা একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে শুরু হয় চেয়ার ছোড়াছুড়ি।
এ সময় পার্কের মাঠে তৈরি মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আতিকুল ইসলাম। মঞ্চে তার ভাই মাইনুল ইসলাম, তিন বোন আমেনা, হালিমা, রহিমা, আতিকুলের স্ত্রী শায়লা সাগুফতা, মেয়ে বুশরা আফরীন, বোনের স্বামী ও সন্তানের উপস্থিত ছিলেন। আতিকুলের বক্তব্য শেষে সমাবেশের উত্তেজনার একপর্যায়ে তার পরিবারের সদস্যরা দ্রুত সেখান থেকে চলে যান।
আতিকুল ইসলামও মঞ্চ ছেড়ে দেন। পরে দুপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারি, ধাক্কাধাক্কি এবং চেয়ার দিয়ে পেটানোর ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, পার্কের ভেতর কাউন্সিলরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত। এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন বলেও জানান। নির্বাচনী প্রচারের একদিন বাকি থাকতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সংঘর্ষের ঘটনায় ভোটের দিন কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নে আতিকুল বলেন, পরিবারে ভাই ভাই বা বোনের মধ্যেও তর্কবিতর্ক হয়। এটি ঠিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ২৯ ডিসেম্বর ২০নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমানকে সমর্থন দেয়া হয়। এর পর নানা নাটকীয়তায় এ ওয়ার্ডে তাকে বাদ দিয়ে সমর্থন দেয়া হয় বর্তমান কাউন্সিলর মো. নাসিরকে। এর পর থেকে দুই প্রার্থীর মধ্যে টানা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান তাবিথের: নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে বাঁধা পাওয়ার অভিযোগ করেছেন উত্তর সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি দারুস সালাম এলাকায় প্রচারণাকালে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। বাড্ডায় কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন করে ফেরার পথে গাড়িবহরে হামলা করা হয়। উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডাসহ বেশ কিছু এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়। এসব হামলার পেছনে সরকারের পরাজয় ভীতি বলে মন্তব্য করেছেন তাবিথ। এজন্য প্রচারণাকালে প্রতিদিনই তিনি ভাটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসিকে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তাবিথ। গতকাল সকালে ঘন কুয়াশা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রচারণায় নেমে তিনি ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন নির্বাচন কমিশনকে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ভালোভাবেই জানেন, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করতে গেলে কী কী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। তাই সব পরিস্থিতিতে যেন ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে তা কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে তাবিথ আউয়াল ভোটারদেরও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল অবস্থায় আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন। ভয়ের কিছু নেই। আপনারা ধানের শীষে ভোট দেবেন, আপনাদের অধিকার চর্চা করবেন। নাগরিক দায়িত্ব পালন করবেন।
তাবিথ বলেন, হামলা মামলার পরও আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছি। হামলা মামলা করে সরকার আমাদেরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। মগবাজার নয়াটোলায় প্রচারণায় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনগণের উদ্দেশ্যে তাবিথ আউয়াল বলেন, অবশ্যই ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। সরকারকে দেখিয়ে দিতে হবে, আসল ক্ষমতা জনগণের। জনগণ ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে।
দুষণমুক্ত ঢাকা গড়তে হাতপাখায় ভোট দিন: আব্দুর রহমান
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে শেষ সময়ে রাতদিন বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকালিটি এলাকায়, বংশাল থানার বিভিন্ন এলাকা এবং যাত্রাবাড়ী কাজলায় ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণায় ও গণসংযোগ চালান তিনি।
এ সময় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পথ সভাগুলোতে আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বলেন, ঢাকাবাসীর দুঃখ লাঘব, জনদুর্ভোগ, দুর্নীতি ও দুষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা তুলতে হলে হাতপাখাকে বিজয়ী করতে হবে। রাজধানী ঢাকার অন্যতম সমস্যা মাদক, ক্যাসিনা ও দুর্নীতি। তিনি বলেন, ক্লিন ঢাকা, গ্রীন ঢাকা, স্মার্ট ঢাকা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মধ্যে একটি মডেল প্রতিষ্ঠা করবো।
প্রচারণায় ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, সৎ ও আল্লাহ ভীরু শাসক যদি ক্ষমতায় না থাকে তাহলে দেশের পরিস্থিতি যে, কত ভয়াবহ তা বিগত দিনগুলোতে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, আমানতদার ও যোগ্য লোককে বিজয়ী করতে না পারলে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা কমবে না।
আলেমদের সম্পৃক্ত করে জনঘনিষ্ঠ সিটি গড়া হবে: মাসউদ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেছেন, ঢাকা আমার-আপনার শহর। এর সঙ্গে আমাদের ভালো-মন্দ জড়িত। এখন আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর ঢাকার ভবিষ্যত নির্ভর করছে। ১ ফেব্রুয়ারি আমাদেরকে সঠিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গতকাল রাজধানীর ভাটারা থানায় গণসংযোগের সময় তিনি এ কথা বলেন। মাওলানা মাসউদ বলেন, আমরা দায়িত্ব পেলে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে এবং ২৫ দফা অঙ্গীকার ও ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা গড়ে তুলবো। সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য দুর্নীতি ও দূষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা গড়ার শপথ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।