পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারে বিক্রির জন্য আনীত ৩৬ হাজার ৬শ’ ব্যাগ পাতা চা এবং ৬ হাজার ৭২৮ ব্যাগ গুঁড়ো চায়ের মধ্য থেকে শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশি চা অবিক্রিত থেকে গেছে। নিম্নমানের চা পাতা প্রতিকেজি মাত্র ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দামেও বিক্রি হয়। তবে সীমিত কিছু উৎকৃষ্টমানের চা পাতা বিকিকিনি হয়েছে প্রতিকেজি ২৩৮ থেকে ৩০৫ টাকায়। গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত মৌসুমের ৩৮তম চা নিলাম বাজারের চিত্র এটি।
এদিকে ২ হাজার ৫শ’ কোটি থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বিশাল ও ব্যাপক পরিসরে দেশের দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্প-বাণিজ্য অর্থনীতিতে এবং কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চায়ের উৎপাদন বাড়লেও উৎকর্ষতায় এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের উৎপাদিত চা। চায়ের উৎকর্ষতা বলতে বোঝায়- রঙ, ঘ্রাণ ও স্বাদ এই তিনটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর ঢাকায় জাতীয় চা মেলায় চায়ের গুণগত মান ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, বাজারজাতের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী বৈচিত্র্যকরণের তাগিদ দিয়েছিলেন।
এবারের শ্রীমঙ্গল নিলাম বাজারে চা পাতা ক্রেতা পক্ষ বা ব্রোকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়ের ব্যাপারে চাহিদা ছিল মন্দা। এতে করে পাতা চায়ের ৩৯ শতাংশ এবং গুঁড়ো চায়ের ৫০ ভাগই অবিক্রিত থেকে যায়। চায়ের গুণগত মান তেমন ভালো ছিল না। অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দেশে এ বছর চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সে তুলনায় গুণেমানে উৎকর্ষতায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের উৎপাদিত চা। তাছাড়া চা উৎপাদন মৌসুম এখন প্রায় শেষের দিকে। বাগানগুলোতে ভালোমানের চা পাতা তেমন মিলছে না। নিলাম বাজারে দরপতনের এটিও অন্যতম কারণ।
৩৮তম শ্রীমঙ্গল চা নিলাম বাজারে ব্রোকেনস ‘ভালো’ এবং ‘মাঝারি’ মানের চা কেজিপ্রতি গড়ে ৫ থেকে ৭ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। বেস্ট চা বিক্রি হয় কেজি ২০৩ থেকে ৩শ’ টাকা দরে। অন্যদিকে বাগানে বিশেষভাবে চয়নকৃত নির্দিষ্ট ও সীমিত পরিমানে চা বেশ ভালো দামে বিক্রি হয়। এরমধ্যে দিলদারপুর প্রতিকেজি ২৩৮ টাকা, ক্লিপডন আরডি কেজি ২৪৩ টাকা, মধুপুর ২৫১ টাকা এবং মধুপুর সিডি ৩০৫ টাকা।
চলতি মৌসুমে চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত ৩৭তম আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজারে মোট ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। কেজিপ্রতি গড় মূল্য পড়েছে ১৮৬ টাকা ৯০ পয়সা। অন্যদিকে গতবছর একই সময়ে নিলাম বাজারে বিক্রীত চায়ের পরিমান ৭ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার কেজি। তখন গড়মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ২৬৯ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে চলতি বছর বা চা নিলাম মৌসুমে প্রায় ৬২ লাখ কেজি অতিরিক্ত চা বাজারে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু কেজিপ্রতি গড়মূল্য ৮২ টাকারও বেশি কম পড়েছে।
তাছাড়া দেশে উৎপাদিত চা বিদেশে রফতানির পরিমাণও নামমাত্র। নেই বললেই চলে। গত এক বছরে দেশে উৎপাদিত ও বাজারজাতকৃত চায়ের মধ্যে শতকরা ৯৯ দশমিক ৫৭ ভাগই অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট মাত্র শূন্য দশমিক ৪৩ ভাগ রফতানি কোটায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। মূলত অভ্যন্তরীণ প্যাকেটিয়াররা ‘রফতানি’র চা ক্রয় ও বাজারজাত করছে। হারিয়ে গেছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী চায়ের রফতানি বাজার।
চায়ের গুণগত মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে চা শিল্প-বাণিজ্য খাতের অবদান আরও জোরদার করতে হলে প্রথমত. সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টায় চায়ের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতের ক্ষেত্রে সার্বিক গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। দ্বিতীয়ত. উৎপাদিত চা বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে আধুনিক যুগ ও প্রজন্মের চাহিদা অনুসারে আরও বিভিন্ন উপায়ে বৈচিত্র্যকরণ প্রয়োজন। এরজন্য বাগান ও শিল্প মালিক এবং বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মাঝে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করতে হবে। সরকারের প্রণোদনাও প্রয়োজন।
এ মুহূর্তে দেশে সীমিত পরিসরে হলেও চায়ের বৈচিত্র্যকরণের কিছু উদ্যোগ শুরু হয়েছে। অতিসম্প্রতি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি তারকা হোটেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় চা উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি শিল্পগ্রুপের ইস্পাহানি মির্জাপুর টি-এর উদ্যোগে ‘হাই টি পার্টি’র আয়োজন করা হয়েছে। এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন মূলত বিদেশিগণ, দেশীয় অভিজাত ও বনেদিশ্রেণির পরিবারের সদস্যবৃন্দ বা নাগরিকগণ। এই উদ্যোগের প্রতি বেশ সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে সদ্যবিদায়ী পঞ্জিকা বছর ২০১৯ সালে দেশে অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা উৎপাদিত হওয়ার প্রাথমিক হিসাব মিলেছে। ২০১৯ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয় ৮ কোটি কেজি। গত নভেম্বর’১৯ পর্যন্ত ১১ মাসে চা উৎপাদনের পরিমান ছিল ৮ কোটি ৯৬ লাখ কেজি। ২০১৮ সালে দেশে চা উৎপাদিত হয় ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি। চায়ের আশাতিরিক্ত উৎপাদনে ভারতের বস্তাপচা ও নিম্নমানের চা চোরাচালান বন্ধ হবে এমনটি আশাবাদ উদ্যোক্তাদের।
চলতি মৌসুমের ৩৯তম আন্তর্জাতিক চা নিলাম বাজার অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৪ ফেব্রæয়ারি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে। সেখানে ৫৮ হাজার ৫১১ ব্যাগ পাতা চা এবং ৮ হাজার ৬১৩ ব্যাগ গুঁড়ো চা বিক্রির জন্য ছাড়করণ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।