দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
‘রাদ্দুল মুহতার’ কিতাবের ‘কারাহাত’ পর্বে বিদ্যমান, ‘যাহেদী গ্রন্থে রয়েছে, সালাম প্রদানে ইশারা করতে গিয়ে রুকূ‘’র অনুরূপ নুয়ে পড়া সিজদা’রই নামান্তর। ‘মুহীত্ব’ কিতাবে আছে, ‘বাদশাহ প্রমুখের জন্যে অবনত হওয়া, অবশ্যই মাকরূহ”।
উক্তসব উদ্ধৃতি দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, (রুকূ‘র অনুরূপ) অবনত হয়ে কদমবূসী করা জায়েয নয়। আলমগীরী’র পা Ñএ চুমু খাওয়া প্রসঙ্গে এমন যে উদ্ধৃতিÑ“কোন আলেম বা পরহেযগার দরবেশকে আবেদন করলো, তাঁর পা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য, যেন তাতে চুমু খেতে পারে” ; এবং দুররে মুখতার Ñএ এমন যে উদ্ধৃতিÑ“কোন হাক্কানী আলেমকে বা ওলী-বুযুর্গকে আরজ করলো, তাঁর পা তার দিবে এগিয়ে দেয়ার জন্য, যেন তাতে সে চুমু খেতে পারে” এবং ‘গায়াতুল আওতার’ এর ৪র্থ খন্ড, ২১৯পৃষ্ঠায় তার এমন যে তরজমা লেখা হয়েছে, ‘জনৈক ব্যক্তি কোন আলেম বা দুনিয়াত্যাগী বুযুর্গের কাছে এমন আবদার করলেন, তাঁর পা যেন তার দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয় এবং তাকে চুমু খাওয়ার সুযোগ দেয়া হয় Ñএসব শক্তভাবে প্রমাণ করে, আলোচ্য জায়েয কদমবূসী বলতে তা নয়, যা কিনা অবনত হয়ে করা হয়। এক্ষেত্রে, তা হলে কোন্ পক্ষের বক্তব্য অধিক সঠিক এবং অনুসরণযোগ্য?
উত্তর:
“যে ক্ষেত্রে ‘অবনত হওয়া’ বা ‘নুয়ে পড়া’-ই মুখ্য হয় সেক্ষেত্রে তা না-জায়েয। আর যে অবনত হওয়া চুমু খাওয়ার প্রয়োজনে অনিবার্য হয়ে পড়ে, তা চুমু’র অধীনে গৌণ হিসাবে পরিগণিত হয়ে থাকে (ইমদাদুল ফাতাওয়া: খ- ৫, পৃ. ৩৪৮; মাকতাবা দারুল উলূম, করাচী, সংস্করণ: রজব-১৪০৭হি.)।
তৃতীয় প্রশ্ন : পায়ে চুমু খাওয়া মানে কি? পায়ে চুমু খাওয়া না কি হাজরে আসওয়াদের অনুরূপ হাত দ্বারা পা ছুঁয়ে হাতকে চুমু খাওয়া? না কি অর্থ ব্যাপক হিসাবে ধর্তব্য হবে?
উত্তর:
প্রথম অর্থই বোঝানো হয়েছে; আর দ্বিতীয় অর্থ অমূলক (যুল-কায়দা-১৩৪৫হি.: প্রাগুক্ত)।
আলোচনার সারাংশ
হাদীসের বর্ণনাসমূহ, সাহাবা ও তাবেঈগণের বাচনিক উক্তিসমূহ এবং ফকীহ্ ও গবেষক ইমামগণের অভিমতসমূহ, যা আপনারা উপরে পাঠ করেছেন। তা দ্বারা চুমু খাওয়া বিষয়টি সম্পর্কে নি¤েœাক্ত বিধানগুলো পাওয়া গেল।
১। চুমু খাওয়া ও মু‘আনাকা যদি কামনা-বাসনা’র সংমিশ্যণে হয়, সেক্ষেত্রে তা একমাত্র নিজ বিবাহিত স্ত্রী ও ক্রীতদাসী (যার অস্তিত্ব বর্তমানে নেই) ব্যতীত, কারও সঙ্গেই জায়েয নেই। একইভাবে যেক্ষেত্রে নিজ মনে অথবা যার সঙ্গে তা করা হবে, তার মনে যদি কামনা-বাসনা’র উদ্রেক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে; তা হলে সেক্ষেত্রেও একই বিধান।
২। যে চুমু খাওয়া ও মু‘আনাকা ছোটদের প্রতি ¯েœহের বহিপ্রকাশ অথবা বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে হয় তা সকলের ঐকমত্যে জায়েয এবং সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত। তবে শর্ত হল তার সঙ্গে যেন কোন মন্দ কর্ম অর্থাৎ না-জায়েয কিছু যোগ না হয়।
৩। আর যেক্ষেত্রে চুমু খাওয়া ও মু‘আনাকায় এমন কি মুসাফাহা’র ক্ষেত্রেও কিছু মন্দ বিষয় যোগ হয়ে যায়; সেক্ষেত্রে তা সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ। যে সব গর্হিত কাজ এ সব ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়ে থাকে, তা কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। সেগুলো অবশ্যই সামনে রাখা চাই যেন তা থেকে বেঁচে থাকা যায়।
চুমু খাওয়া, মু‘অনাকা, মুসাফাহায় যোগ হওয়া গর্হিত বিষয়াদি :
প্রথম প্রকার হল, যার এগুলো করতে গেলে নিজ মন-মানসিকতায় অহঙ্কার, অহমিকাবোধ জন্ম নেয়ার আশঙ্কা থাকে, তাঁর পক্ষে অন্য লোকজনকে এসবের সুযোগ দেয়া জায়েয নয়।
দ্বিতীয়ত, যে ক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনা থাকে যে, এ আমলগুলো করতে গেলে অন্য লোকজনের কষ্ট ও সমস্যা সৃষ্টি হবে; সেক্ষেত্রে বা তেমন স্থানে এসবের কোনটি এমনকি মুসাফাহাও জায়েয নয়। উদাহরণত, যখন দেখা যাবে যাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তিনি ব্যস্ত আছেন বা জরুরী কোন কাজে রত আছেন; তেমন অবস্থায় তাঁর সঙ্গে চুমু খেতে যাওয়া, মু‘আনাকা করতে যাওয়া এমনকি মুসাফাহা করার চেষ্টা করতে যাওয়াতেও তাঁর কষ্ট ও সমস্যার কারণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এসব থেকে বিরত থাকা চাই। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।