Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাইব্রিড ধান : চাষ বাড়ছে বাড়ছে উৎপাদন

প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে সারাদেশে ধানের চাষ এক নতুন দিশা পেয়েছে। শুরু হয়েছে উচ্চফলনশীল ধানের পাশাপাশি আরও অধিক ফলনশীল হাইব্রিড ধানের চাষ। দু’টি দূর সম্পর্কীয় ধানের প্রজননে উদ্ভূত প্রথম প্রজাতিই বিজ্ঞানের ভাষায় হাইব্রিড ধান। উচ্চফলনশীল ধান ও হাইব্রিড ধানের গঠনের মধ্যে বিস্তর তফাত আছে।
মূলত চারা অবস্থা থেকেই এ পার্থক্য নজরে আসে। হাইব্রিড ধানের প্রাথমিক বাড় বৃদ্ধির হার, পাশকাঠি ছাড়ার ক্ষমতা এবং চারা রোপণের প্রাথমিক অবস্থায় নাইট্রোজেন সার গ্রহণ ক্ষমতা অন্যান্য ধানের চেয়ে অনেক বেশি। ধানের সর্বোচ্চ ফলনের জন্য মূলত তিনটি বিষয় দায়ী, সেগুলো হলো প্রতি বর্গমিটারে দানাযুক্ত শীষের সংখ্যা, শীষপ্রতি ধানের সংখ্যা এবং প্রতিটি দানার ওজন। হাইব্রিড ধানের ফলনের ৮০ শতাংশ নির্ভর করে পাশকাঠির ওপরেই। তাই এ জাতীয় ধানের চরিত্রগত বৈষম্যের সুবাদেই ধান চাষের জন্য পরিচিত অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাতের চাষবিধি হাইব্রিড ধান চাষে পরিপূর্ণভাবে প্রযোজ্য হবে না।
ধান চাষের ওপর আবহাওয়ার বিশেষ ভূমিকা আছে। যদিও হাইব্রিড ধানের জাতগুলো সূর্যালোক ও তাপমাত্রার ওপর বিশেষ সংবেদনশীল নয় তবুও তাপমাত্রা এবং দিনের আলোর হেরফের হলে ফলন ও ধান চাষের মেয়াদের মধ্যে তারতম্য হতে পারে।
তাপমাত্রা : ধানের অঙ্কুরোদগম ও বীজতলায় চারার প্রাথমিক বৃদ্ধির জন্য ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দরকার। তবে বীজতলায় পানির উপস্থিতি সাপেক্ষ ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় হাইব্রিডের চারার স্ব^াভাবিক বৃদ্ধি হয়।
আলোক : হাইব্রিড ধান চাষের জন্য মেঘমুক্ত সুনির্মল আকাশ একান্ত প্রয়োজন। আকাশ মেঘময় থাকলে মূল জমিতে গাছের স্ব^াভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফলে ফসলের মেয়াদের বৃদ্ধি ঘটতে পারে। তবে এতে ফলনের ক্ষেত্রে খুব একটা তফাত হয় না। মেঘময় আকাশের সঙ্গে তাপমাত্রাও অতিরিক্ত নেমে গেলে ফলন ব্যাহত হয় এবং রোগপোকার আক্রমণও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বৃষ্টিপাত : বোরোখন্দে কেবলমাত্র সেচনির্ভর জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ হয়। তবে সেচব্যবস্থা এ রকম থাকতে হবে যেন দানা পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত জমিতে ২ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পরিমাণ পানি জমা থাকে। খারিফ খন্দে বৃষ্টিনির্ভর জমিতে চাষ করা যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে জমিতে যেন পানি দাঁড়িয়ে না থাকে। বন্যাকবলিত জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ সুপরিকল্পিত নয়।
বোনার সময় : বোরোখন্দে হাইব্রিড ধান চাষের জন্য ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত সুবিন্যস্ত বীজতলায় বীজবোনার উপযুক্ত সময়। খারিফখন্দে মে মাসের ১৫ থেকে ১৫ জুলাই এর মধ্যে বপন করতে হবে।
জমি নির্বাচন : হাইব্রিড ধান চাষের জন্য নিশ্চিত সেচ ব্যবস্থাযুক্ত জমি যেখানে পানি ঢোকানো অথবা বের করা যায়, কেবলমাত্র সেসব জমি নির্বাচন করতে হবে। এঁটেল, দোঁয়াশ অথবা দোঁআশ মাটি হাইব্রিড ধান চাষের উপযোগী। খারিফ খন্দে হাইব্রিড ধান চাষের ক্ষেত্রে জমি নির্বাচনটা প্রধান কাজ।
জাত নির্বাচন : দেশের জলবায়ুতে খারিফ এবং রবি উভয় মৌসুমেই হাইব্রিড ধান চাষ লাভজনক। জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মৌসুমী উপযোগী জাত বেছে নেয়া বাঞ্ছনীয়। হাইব্রিড ধানের ক্ষেত্রে উপযোগী জাতগুলো হল ডি আর আর এইচ-১, প্রো এপ্রো-৬২০১, পি এইচ বি-৭১, কে আর এইচ-২, ফ্রন্ট লাইন, পিএসি-৮০১, পিএসি-৮৩২ ইত্যাদি। জাতগুলোর খারিফখন্দের ফলন আশাব্যঞ্জক।
বীজের হার : হাইব্রিড ধানচাষে উচ্চফলনশীল জাত থেকে ৫০-৬০ শতাংশ বীজ কম লাগে। সে হিসাবে হেক্টর প্রতি ১৮-২০ কেজি বীজই যথেষ্ট। অর্থাৎ কানি প্রতি হিসেবে বীজের পরিমাণ হবে তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি।
বীজশোধন : হেক্টর প্রতি ২০ কেজি বীজ (কানি প্রতি সাড়ে তিন কেজি) ১৮-২০ ঘণ্টা পরিশ্রুত পানিতে মিশিয়ে নিয়ে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম ৫০ শতাংশ, ডব্লিউপি অথবা ট্রাইসাইক্লোজলঘটিত ওষুধ প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে। তার পর শোধিত বস্তায় জাঁকে বসাতে হবে। শোধিত বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর বোনার উপযোগী হবে।
চারা তৈরি : হাইব্রিড ধানের চারার বাড় বৃদ্ধি উচ্চফলনশীল জাতের দ্বিগুণ, কাজেই বীজতলায় পাতলা বীজ ছড়ানো দরকার যাতে বীজতলা থেকেই পাশকাঠি ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতি কানি মূল জমির জন্য ১০০ বর্গমিটার জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। ১ মিটার চওড়া বীজতলার দু’দিকে ন্যূনতম ৫০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে। প্রতি কানি মূল জমির জন্য প্রয়োজনীয় ১৬০ বর্গমিটার বীজতলায় ৩০০ কেজি গোবর সার, ২ কেজি ইউরিয়া, ২.৫ কেজি সুপার ফসফেট এবং ৭০০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বোনার ১৫ দিনের মাথায় প্রতি ১০০ বর্গমিটার বীজতলায় আবার ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া চাপান সার হিসেবে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে বোরো খন্দে ৩০-৩৫ দিনের এবং খারিফ খন্দে ২৮-৩০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে।
জমি তৈরি : উচ্চফলনশীল দান এবং হাইব্রিড ধানের চাষ পদ্ধতিতে মূল জমি তৈরির মধ্যে কোনও পদ্ধতিগত পার্থক্য নেই। গভীরভাবে কর্ষণ করে লম্বালম্বি আড়াআড়িভাবে চাষ দিয়ে মূলজমি তৈরি করতে হবে। জমিতে পানির সমতা বজায় রাখতে মই দিয়ে মাটি সমতল করে নিতে হবে। আগাছা মুক্ত জমি ফলন বৃদ্ধির সহায়ক। প্রথম চাষের পর জমির সমস্ত আবর্জনা, আগাছা বেছে ফেলে দিতে হবে।
সার প্রয়োগের হার :
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : উচ্চফলনশীল ধান চাষের তুলনায় হাইব্রিড ধান চাষে সার ব্যবহারের মাত্রা অনেক বেশি। আর নাইট্রোজেন সার তিনবারে জমিতে দিতে হবে। জমি তৈরির সময়ে মাটি রাসায়নিক সার এবং জৈব সার-এর ব্যবহার মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই। তবে সাধারণত হাইব্রিড ধান চাষে সারের প্রয়োগ মাত্রা হচ্ছে এ রকম।
প্রধান জমিতে চারা রোপণের ৮-১০ দিন আগে জৈব সার মাটিতে প্রয়োগ করে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। শেষ চাষের সময় মূল সার হিসেবে স¤পূর্ণ ফসফেট এবং মিউরেট অব পটাশ এবং ৫০ ভাগ ইউরিয়া অর্থাৎ ১৭.৫ কেজি প্রতি কানি হিসেবে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চাপান সার হিসেবে ইউরিয়া দুই দফায় প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়। পাশকাঠি ছাড়ার সময়ে অর্থাৎ রোপণের ৩.৪ সপ্তাহ পর কানি প্রতি ৮.৭৫ কেজি ইউরিয়া প্রথম চাপান সার হিসেবে এবং দ্বিতীয় চাপান সার হিসেবে থোড় আসার সময়ে অর্থাৎ রোপণের ৬-৭ সপ্তাহ পর কানিপ্রতি ৮.৭৫ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সারের ৭৫ ভাগ মূলজমি তৈরি সময়ে এবং বাকি ২৫ ভাগ রোপণের ৬-৭ সপ্তাহ সময়ে দ্বিতীয়বার ইউরিয়া চাপানের সময় চাপান সার হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে।
অধিক ধান উৎপাদনে জিঙ্কের ভূমিকা অপরিসীম। তাই হাইব্রিড ধান চাষে জিঙ্কের ঘাটতি মেটাতে জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করা অত্যন্ত দরকার। ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে ১৫-২০ কেজি হারে (কানি প্রতি ২.৫ থেকে ৩ কেজি) জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। জিংক সালফেট জমি তৈরির শেষ চাষের সময়ে মাটিতে সরাসরি প্রয়োগ করতে হবে তবে লক্ষ্য রাখতে হবে জিংক সালফেট যেন অন্যান্য রাসায়নিক সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ না করা হয়।
রোপণ : উচ্চফলনশীল ধান অপেক্ষা হাইব্রিড ধান বেশি দূরত্বে লাগানো উচিত। হাইব্রিড ধানের ফলনে পাশকাটির অবদান ৭০-৭৫ শতাংশ। তাই রোপণের দূরত্ব এমন হওয়া দরকার যাতে গুছির চারপাশে অনুকূল পরিবেশে পাশকাঠি বাড়তে পারে।
* খারিফ মৌসুমে ৩০ জুলাইর মধ্যে রোপণের কাজ শেষ করতে হবে। * বোরো খন্দে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে রোপণ শেষ করতে হবে। * বোরো মৌসুমে ৩৫ দিনের, খারিফ মৌসুমে ৩০ দিনের বেশি বয়সের চারা রোপণ করলে আশানুযায়ী ফলন পাওয়া যায় না। * প্রতি গোছায় ১টি বা ২টি করে চারা রোপণ করতে হবে। * সারি থেকে সারি ২০ সেন্টিমিটার এবং গোছা থেকে গোছা ১৫ সেন্টিমিটার। ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে লাগাতে হবে।
পরিচর্যা : হাইব্রিড ধান পরিচর্যার মূল কথা হল আগাছামুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ। রোপণের পর মূল জমি স¤পূর্ণ আগাছামুক্ত করার পরেই চাপানসার প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের পর ৩০ দিন পর্যন্ত ২-৩ সেন্টিমিটার এবং তারপর দানা পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত ৩-৪ সেন্টিমিটার পানি জমিতে থাকা একান্ত প্রয়োজন।
পানি সেচ : রোপণের সময় জমিতে খুব অল্প পরিমাণ (আধা ইঞ্চি) অর্থাৎ ছিপছিপে পানি রাখাই ভাল। কারণ সে সময়ে বেশি পানি থাকলে চারা সঠিক গভীরতায় (২ ইঞ্চি) রোপণ না করে অধিক গভীরতায় রোপণ করা যেতে পারে, আর সেক্ষেত্রে পাশকাঠির সংখ্যা হ্রাস পেয়ে যাবে। রোপণের ২-৩ দিন পর থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত জমিতে ২ ইঞ্চি পর্যন্ত পানি দাঁড়িয়ে থাকা দরকার। তার পরবর্তী ১০ দিন ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত পানি থাকতে পারে।
রোপণের ৪০-৫০ দিনের সময়ে দুদিন অন্তর অন্তর দুবার জমি থেকে পানি বের করে আবার পুনরায় পানি ঢুকাতে হবে। শীষ মুকুলের সূচনাকালে হাইব্রিড ধানের পক্ষে পানি বিশেষ জরুরি নতুবা ফলনে চিটার সংখ্যা বেড়ে যায়। হাইব্রিড ধানের শীষ যেহেতু অধিক দানা বহন করে তাতে দানা পরিপূর্ণতার ক্রিয়াবলীতেও পানির ভূমিকা জরুরি। হাইব্রিড ধানের দানা পরিপূর্ণতার ক্রিয়াবলী সাধারণ উচ্চফলনশীলের তুলনায় একটু ভিন্ন ধরনের। এটা দুটি পর্যায়ে হয়। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ের দানা পরিপূর্ণতার কার্যাবলীর সময়েও পানির অভাব ঘটলে চিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই রোপণের ৫০-৫৫ দিন থেকে ধান কাটার ১০ দিন পূর্ব পর্যন্ত জমিতে পানি রাখা বিশেষ জরুরি। পাশকাঠি ছাড়ার কাজ রোপণের (৪৫-৫০ দিন) স¤পূর্ণ হওয়ার পরের একমাস (৩০ দিন) বিশেষত শেষের ১১ দিনকে হাইব্রিড ধানের ক্ষেত্রে পানির সংকটকাল হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। মোটামুটিভাবে বলা যায়, জমিতে সবসময় ২.৫-৩ ইঞ্চি পানি রোপণের পর থেকে ধান কাটার ১০ দিন পূর্ব পর্যন্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। মাঝে মধ্যে পানি বের করে এক দু’দিন জমিতে টান ধরিয়ে পুনরায় পানি ঢোকালে মাটিতে বায়ু চলাচল ইত্যাদির কাজও হয়।
রোগ পোকা দমন : স্থানীয় কৃষি প্রযুক্তিবিদের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ রোগ দমনে এডিফেনফস ৩৫ ইসি (১ মিলি/লিটার) অথবা কার্বেনডাজিম ৫০ ডব্লিউপি (১ গ্রাম প্রতি লিটার) হিসাবে ৮০-১২০ লিটার মিশ্রণ প্রতি কামিতে স্প্রে করতে হবে। জমিতে রোগ দেখা দিলে তা স¤পূর্ণ নিরাময় হওয়ার পরেই চাপানসার দেওয়া দরকার।
খোলা ধসারোগ/খোলা পচার রোগ : এ রোগ দমনে কার্বেনডাজিম ৫০ ডব্লিউপি (১ গ্রাম প্রতিলিটার) ব্যবহার করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ইউরিয়া চাপানসার হিসাবে প্রয়োগের পূর্বে নিকটস্থ কৃষি প্রযুক্তিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভূষারোগ : এ রোগ দমনে ম্যানকোজেব (ডাইথেন এম ৪৫) ৩ গ্রাম/প্রতিলিটার পানিতে বিকালের দিকে প্রয়োগ করতে হবে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত ধসা রোগ : এ রোগের জন্য ধান গাছের ডগা থেকে পাতা শুকিয়ে যায়। রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনবোধে স্থানীয় কৃষি চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এগ্রিমাইসিন ১০০, এক গ্রাম অথবা ব্যাকটিনল আধা গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মাঝরা পোকা : এ পোকা দমনে কার্বোফুরান ৩ জি ৩৩ কেজি অথবা দানাদার ফোরেট অথবা ডায়জনিন ১০ জি ১০ কেজি/হেঃ অথবা ফসফামিডন আধা মিলিলিটার অথবা ডায়মিথোয়েট ১ মিঃ লিঃ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
পাতা মোড়ানো পোকা : এ পোকার আক্রমণে মনোক্রটোফস ১ মিলি লিটার অথবা কুইনালফস ১.৫ মিলি লিটার অথবা ফসফামিডন আধা মিলিলিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সাদাপিঠ শোষক পোকা/শ্যামা পোকা/ভেঁপু পোকা : এ পোকাগুলোর আক্রমণে প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে করা প্রয়োজন।
ফসল তোলা : শীষের নিচের অংশের দানা পুষ্ট হবার সঙ্গে সঙ্গেই জমি থেকে পানি বের করে দিতে হবে। দানা ঝরে যাতে ফলন কমে না যায় এজন্য গাছ সামান্য কাঁচা থাকা অবস্থাতেই ফসল চয়ন করা দরকার। ধানে ফুল আসা ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা উচিত। দানায় আর্দ্রতার পরিমাণ যখন ২০-২৪ শতাংশ থাকে তখন ফসল কাটতে পারলে সব থেকে বেশি ধান ও চাল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাড়াইয়ের কাজটা যত শীঘ্র সম্ভব বিশেষত ফসল কাটার পরদিনই করা উচিত। ধান মিলে বা ঢেঁকিতে ছাটাই করার আগে ছায়ায় শুকিয়ে দানায় আর্দ্রতার পরিমাণ শতকরা ১২-১৪ ভাগে কমিয়ে নিতে হবে। তাতে চাল কম ভাঙ্গে ও বেশি চাল পাওয়া যায়।
শস্য সংরক্ষণ : শস্য গুদামজাত করার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। সাধারণভাবে শস্যকে শুকিয়ে ১২-১৪ শতাংশ আর্দ্রতায় গুদামজাত করা হয়। ধানের ফলন হেক্টর প্রতি ৭.৫-৮ মেঃ টন (কানি প্রতি ৩০-৩২ মন) পর্যন্ত পাওয়া যায়। রবি মৌসুমে স্বভাবতই ফলনের মাত্রা বৃদ্ধি হবে। রবি মৌসুমের হাইব্রিডের ধান চাষে প্রতি হেক্টর হিসাবে ১০ টন পর্যন্ত (কানি প্রতি ৪০ মণ) পাওয়া যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইব্রিড ধান : চাষ বাড়ছে বাড়ছে উৎপাদন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ