বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী যে সকল প্রথিতযশা আলেমেদীন, সত্যাশ্রয়ী মোজাহেদীন প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন, তাদের মাঝে হযরত মাওলানা শামছুল হক রহ. এর নাম একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে।
তিনি ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার এক ঐতিহ্যবাহী সংগ্রামী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মগ্রহণের পর তদীয় পিতা-মাতা আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তার শ্রদ্ধাস্পদ পিতা হযরত শহীদ সায়্যিদ আহমাদ রহ.-এর ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সক্রীয়ভাবে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাই ইসলামী জোশ ও খারুশ, উৎসাহ এবং উদ্দীপনা বালক শামছুল হক রহ.-এর মাঝে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান ছিল। ইসলামকে সম্যক ও প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করার অনুপ্রেরণায় তিনি কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যয়নকালে হযরাতুল আল্লামা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর দরবারে উপস্থিত হন এবং তার হাতে বায়আন গ্রহণ করেন।
এরপর থেকে তার জীবনের এক নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়। তিনি স্নাতক শ্রেণী সমাপ্ত করার পর হযরত থানবী রহ.-এর তত্ত্ববাধানে প্রথমে মাজাহিরুল উলুম সাহারানপুর মাদ্রাসায় এবং পরে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন।
তার বয়স যখন পয়ত্রিশ তখন ১৯৩০ খ্রি. হতে ১৯৩৫ খ্রি. পর্যন্ত এই পাঁচ বছর ব্রাহ্মণবাড়ীয়াস্থ ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাদান করেন। তারপর ১৯৩৬ খ্রি. হতে ১৯৫০ খ্রি. পর্যন্ত ঢাকার আশরাফুল উলুম মাদ্রাসায় কৃতিত্বের সাথে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের অধ্যাপনায় ব্যাপৃত ছিলেন।
ইসলামী জ্ঞান বিস্তারের জন্য তার হৃদয়মন সর্বদায় উদ্বেল ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ঢাকার লালবাগস্থ জামেয়া কুরআনিয়া মাদ্রসা এবং ফরিদপুরের গওহর ডাঙ্গায় খাদিমুল ইসলাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন বিদ্যুৎসাহী কর্মী পুরুষ। তিনি খাদিমুল ইসলাম নামে একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। যা এখনো পর্যন্ত ইসলামী সাংস্কৃতিক দিক দর্শনের ভ‚মিকা পালন করে চলেছে।
বস্তুত: হযরত মাওলানা শাসছুল হক ফরিদপুরী রহ. ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম, সুফী-সাধক, দীন ও মিল্লাতের একনিষ্ট খাদেম এবং স্বনামধন্য মুহাদ্দিস। তিনি প্রকৃতই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, মাতৃভাষা বাংলার মাধ্যমে ইসলামের মূল চিন্তাধারা এই দেশের জনগণের সামনে তুলে না ধরা পর্যন্ত এখানকার মুসলিম সমাজের সার্বিক ও সামগ্রিক সংস্কার মোটেই সম্ভব নয়। এরই ফলশ্রুতিস্বরূপ তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন।
তার প্রতিষ্ঠিত খাদিমুল ইসলাম জামায়াতের প্রকাশনী বিভাগ তার ছিয়াত্তুরটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এর অধিকাংশই অনুবাদগ্রন্থ। তার অনুদিত ও লিখিত গ্রন্থাবলীর কয়েকটির নাম হলো- তাফসিরুল কোরআন, তাফসিরে সূরা ইয়াসীন, সূরায়ে ফাতিহা ও পাঞ্জে সূরা। তাবলীগে দীন, ফারুউল ঈমান, বেহেশতী জেওর, হায়াতুল মুসলিমিন, বেদআত ও ইজতেহাদ, ব্রিটিশ শাসনের বিষফল, জিহাদের ফযিলত, তাসাওফ তত্ত্ব, জীবন্ত মসজিদ ইত্যাদি।
জীবন ও জগতের এই চিরচঞ্চল পান্থশালায় তিহাত্তুরটি বসন্ত অতিক্রান্তের পর দেশ বাংলার এই সূর্য সন্তান ও রাহবার ২২ জানুয়ারি ১৯৬৮ খ্রি. মোতাবেক ৭ মাঘ ১৩৭৫ বঙ্গাব্দে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি ওয়া রাজিউন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাকে কুরবত ও মানজেলাতের আ’লা হতে আ’লা দারাজাত এনায়েত করুন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।