পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘদিনের পতনের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে বিরাট উত্থানে রয়েছে শেয়ারবাজার। আর এতে অনেক দিন পর দেশের শেয়ারবাজারে আস্থা বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং দীর্ঘদিন থেকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নানামুখী উদ্যোগে গত সপ্তাহের পাঁচ দিনের লেনদেনে প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৯১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। এই সময়ে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়; বেশ কিছুদন পর ঢাকার বাজারে লেনদেন পাঁচশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ও ব্যাংক খাতের ইতিবাচক উদ্যোগের প্রভাবে বাজারের এই উত্থান। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিপালন ও বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। আর তাতে বাজারের ইতিবাচক প্রবণতা টেকসই হবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া বেশ কিছু উদ্যোগের পর বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া উদ্যোগের ফলে শেয়ার বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। তবে বাজার সত্যিকার স্বাভাবিক করতে ও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে আস্থায় আনতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার জরুরি। তা না হলে কিছুদিন পর আবারও পতনের ধারায় ফিরবে বাজার।
প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরেছে বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, আর আস্থা বাড়লে বাজারে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তথ্য বলছে, বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম দিন রোববারে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকায়। আর শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯ কোটি ৪২ লাখ ২৪ হাজার টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২৫ হাজার ৬৯৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের সপ্তাহের বড় ধসের পর গত গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা নির্দেশনার পরই বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্থান হয় ডিএসইএক্স সূচকের। সেদিন বাড়ে লেনদেনও। তার ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায় পরের দিন সোমবারের বাজারেও। এরপর মঙ্গলবার সূচক খানিকটা পড়ে গেলেও বুধবার ফের বাড়ে। সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঢাকার শেয়ার বাজারের লেনদেন। এদিন ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৫১৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। সব মিলিয়ে এই সপ্তাহে ৩৬৪ পয়েন্ট বা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে ডিএসইএক্স।
প্রসঙ্গত, আগের সপ্তাহের বড় ধসের পর শেয়ারবাজার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠক থেকে শেয়ারবাজারের এই অবস্থার উত্তরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৯ টাকা। আগের সপ্তাহে ৫ কার্যদিবসে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার ৯২১ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ৯৪৮ টাকা বা ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এছাড়া, বেশ কিছুদন পর ঢাকার বাজারে লেনদেন পাঁচশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৫১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন বুধবার লেনদেন হয় ৪৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে গত সপ্তাহে ৯১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। পুরো সপ্তাহে (৫ দিন) ৩৬০টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বেড়েছে ৩২৮টি, কমেছে ২৩টি, অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টি এবং লেনদেন হয়নি ২টি কোম্পানির শেয়ার।
এদিকে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কমাতে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ শুরু করেছে সরকারি চার ব্যাংক। গত ১৪ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ে বিএমবিএর সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে শেয়ারবাজারের তারল্য সংকট নিরসনে সরকারি চার ব্যাংককে বিনিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনার পর সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। গত ১৬ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ত্রৈমাসিক বৈঠকে বিনিয়োগের তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ছয়টি নির্দেশনার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশার প্রতিফলন দেখা গেছে। এ কারণে শেয়ারবাজারের সূচক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এ ছাড়া শেয়ারের দরপতন হতে হতে এমন পর্যায়ে নেমেছে যে আর কমার সম্ভাবনা কম। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন এখন শেয়ার কেনার উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন তিনি।
২০১০ সালের ধসের পর থেকে এ পর্যন্ত সরকার একাধিকবার বড় আকারের তহবিলের জোগানের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে প্রণোদনা দিয়েছে। কিন্তু বাজারে কোনো টেকসই স্থিতিশীলতা আসেনি। আবার ১০ হাজার কোটি টাকা তহবিল চাওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা তো ঋণ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের দেয়া হচ্ছে। তারা এটা পরিশোধ করলে আবার ঋণ পাবে। আর প্রধানমন্ত্রীর ৬টি নির্দেশনার পাশাপাশি শেয়ারবাজারের মৌলিক কিছু সমস্যা যদি সমধান করা যায়, এবং ভালো কোম্পানির শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত করা গেলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়তে পারে। তাতে এই ইতিবাচক প্রবণতা টেকসই হতে পারে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।