Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আদালতের নির্দেশনা মানছে না

ইসির বিরুদ্ধে সুজনের গুরুতর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। আইনি নোটিশ পাঠিয়েও লাভ হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসির বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা কর্ণপাত করছে না ইসি। নির্বাচনী প্রার্থীদের তথ্য না দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে সুজন সম্পাদক বলেন, ইসি এবার তুঘলকি কান্ড ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, ইসি থেকে এর আগে সব সময় তথ্য পেয়ে এসেছি। এবার তারা তথ্য দিচ্ছে না। এটার কারণ কি, নাকি এটা তাদের অযোগ্যতা, তা আমরা বুঝতে পারছি না। ইসিকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। তাতেও কোন জবাব না পেয়ে সর্বশেষ আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি তা সত্তে¡ও তারা কোনো টু শব্দ করছে না।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তথ্য পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনে এ তথ্য জানা অপরিহার্য। তারপরও নির্বাচন ইসি কোনো কর্ণপাত করছে না। তারা আইন-কানুন, বিধি-বিধানের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ইসি’র এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ জানান তিনি। আইনি নোটিশের পরও ইসি তথ্য না দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও এক প্রশ্নের জবাবে জানান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ইসি’র অবস্থা অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানি। কেউ যেন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না। যাতে সরকারি দল বা সরকার তাদের উপর বিরাগভাজন হবে। এটা কিন্তু একটা অশনি সঙ্কেত। তার মানে অন্যায় আরও বেড়ে যাবে। ইভিএম ভোটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিজেই মেশিনকে অপারেট করে যাদের আঙ্গুলের ছাপ পড়ে না, তাদের ভোট দিতে পারতেন। এরকমভাবে তিনি ২৫ শতাংশ ভোট দিতে পারবেন। এখন এটি যদি চালু থাকে তাহলে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা তাদের ক্ষমতা বলে পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেয় তাহলে সেটি হবে ভয়ানক অবস্থা। আমরা জানিনা সিটি নির্বাচনে এ রকম এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে কিনা। ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়া হলে তাতে তো একটা ডকুমেন্ট থাকে। কিন্তু ইভিএমে কাকে ভোট দিয়েছেন তার কোনো ডকুমেন্ট থাকবে না। একজন ভোটার তার প্রার্থীকে ভোট দিলেন, কিন্তু কাউন্ট হলো অন্যপ্রার্থীর পক্ষে। এ ক্ষেত্রে অডিট করার কোনো সুযোগ নেই। ইসি যা বলবে তা-ই বিশ্বাস করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ও কমিশনাদের সম্পর্কে সুজন যে প্রতিবেদন তুলে ধরে তাতে বলা হয়, দুই সিটির প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা জনপ্রতিনিধিদের জনসেবামূলক ভ‚মিকার পরিবর্তে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিমূলক প্রবণতার প্রসার ঘটাতে পারে। এটা বিরাজনীতিকরণের ধারা শক্তিশালী হওয়ারও একটা লক্ষণ। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকলেও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থীদের দুজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ও তিন জনের বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল বলে জানানো হয়।
বিশ্লেষণ উত্থাপনের আগে সুজনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে সাত ধরনের তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করেছেন। আমরা সুজনের উদ্যোগে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তা গণমাধ্যমের সহযোগিতায় জনগণের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি। এর মাধ্যমে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

ঢাকা উত্তর : ছয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিন জন (৫০ শতাংশ) ব্যবসায়ী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপি’র তাবিথ আউয়াল ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের শাহীন খান। অন্যান্যদের মধ্যে কমিউনিস্ট পাটির আহাম্মদ সাজেদুল হক চিকিৎসক, ইসলামী আন্দোলনের শেখ ফজলে বারী মাসউদ শিক্ষক এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিসুর রহমান দেওয়ান সমাজসেবক। ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর চার পঞ্চমাংশেরও অধিকের (২০৩ জন বা ৮১.৮৫ শতাংশ) পেশা ব্যবসা। এছাড়াও ৯ জন (৩.৬৩ শতাংশ) তাদের পেশার কথা উল্লেখ করেননি।

উত্তরের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে (গতবারের ৬৭.২০ শতাংশের স্থলে এবার ৭২.৮১ শতাংশ)। ছয় মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন (৮৩.৩৩ শতাংশ) উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে দুজনের (৩৩.৩৩ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও তিনজনের (৫০ শতাংশ) স্নাতক। তবে একজন (১৬.৬৭ শতাংশ) প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তিনি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের শাহীন খান।

ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের ২৪৮ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর (১৫৬ জন বা ৬২.৯০ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। শুধু এসএসসসি’র নিচেই রয়েছেন ১২৩ জন (৪৯.৫০ শতাংশ)। উত্তরের সর্বমোট ৩৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২০৩ জন বা ৬১.৩২ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। শুধু এসএসসি’র নিচে ১৫৬ জন (৪৭.১৩ শতাংশ)। ২০১৫ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থীর হার বেড়েছে (৫৯.৪০ শতাংশের স্থলে ৬১.৩২ শতাংশ)। এবার উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর হার হ্রাস পেয়েছে (২৭.৪১ শতাংশের স্থলে ২৫.২৭ শতাংশ)।

ঢাকা দক্ষিণ : প্রার্থীদের সম্পর্কে বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ২০১৫ সালের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীর হার বৃদ্ধি পেয়েছে (৭১.২৮ শতাংশের স্থলে ৩.৫৯ শতাংশ)। ব্যবসায়ীদের মধ্যে নির্বাচন করার প্রবণতা বাড়ছে, যা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভ‚মিকার রূপান্তর ঘটাতে পারে; যার ফলাফল অবশ্যই নেতিবাচক। সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে তিনজন (৪২.৮৬ শতাংশ) উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে দুজনের (২৮.৫৭ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও একজন (১৪.২৯ শতাংশ) স্নাতক। তবে তিনজনের (৪২.৮৬ শতাংশ) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
ঢাকা দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশের (২৬৬ জন বা ৬৫.০৩ শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার নিচে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিতের হার সমান (৪২.৮৬ শতাংশ) হলেও, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিতের হার অনেক বেশি। ২০১৫ সালের নির্বাচনের প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, স্বল্পশিক্ষিতের হার সমান রয়েছে (৬৬.৭৪ শতাংশ)। উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে সামান্য কিছু অবনতি হয়েছে (১৯.৮৩ শতাংশের এর হলে বর্তমানে ১৯.৩১ শতাংশ)। ঢাকা দক্ষিণের সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দুই জনের (২৮.৫৭ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, তিনজনের (৪২.৮৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল। দক্ষিণের সর্বমোট ৪০৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জনের (২৬.৬৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে ও ৫০ জনের (১২.২২ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে মামলা ছিল।

ইভিএম নিয়ে বিতর্ক : আসন্ন সিটি নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে শুরু থেকেই আলোচনা আছে উল্লেখ করে সুজন বলছে, সব রাজনৈতিক দল একমত না হলেও এই নির্বাচনে ইসি ইভিএম ব্যবহারে বদ্ধ পরিকর। আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হচ্ছে ইসি’র কমিশনের নিরপেক্ষতা। ইসি’র ওপর যদি ভোটারদের আস্থা থাকতো, তবে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠতো না।
আচরণবিধি লঙ্ঘন : মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে আসছেন। তারা নিয়মবহির্ভ‚তভাবে মিছিল করে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নির্বাচন কমিশনকেও এ বাপারে কঠোর অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিলীপ কুমার সরকার। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ