পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দখিনা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় আশাজাগানিয়া তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। পায়রা সেতু, বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতু ও কালনা এ তিনটি সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের দৃশ্যপট। কুয়েত, জাপান এবং চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সেতুগুলো নির্মিত হলেও সর্বদক্ষিণে সাগর পাড়ের পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ছাড়াও দেশের ৩য় সমুদ্র বন্দর পায়রা এবং প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগকে নির্বিঘ্ন ও সহজতর করবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম-বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ছাড়াও মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমড়া স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগকেও অনেকটাই সহজতর করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সড়ক অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম।
পায়রা সেতু : বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-বরগুনা মহাসড়কের লেবুখালী এলাকায় এক হাজার ৪শ’ ৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ৪ লেনের ‘পায়রা সেতু’। সেতুটি নির্মাণে কুয়েত এবং ওপেক উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ১ হাজার ৪শ’ ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে।
২০১২ সালে একনেক-এ অনুমোদন পাওয়া সেতুটি নকশা পরির্তনের কারণে নির্মাণ ব্যয় তিন দফায় সংশোধন করা হয়েছে। এক হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাসন ও টোল প্লাজাসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় ৫০%। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড’।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আহমদ শরিফ সজিব জানান, সেতুটির ভায়াডাক্ট-এর টেস্ট পাইল, ওয়ার্কিং পাইল, পাইল ক্যাপ, পীয়ার ও পীয়ার ক্যাপ এবং ১নম্বর পিএসসি গর্ডারের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া ঐ অংশের ২৮টি ডেক ¯øাবের কাজও ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। স্থানীয়রা জানান, পায়রা সেতু নির্মিত হলে ঢাকাসহ সারা দেশের সাথে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগে সংযুক্ত হবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ৭ ঘণ্টায় যাওয়া যাবে কুয়াকাটা।
বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতু : চট্টগ্রাম-ভোলা-ল²ীপুর-বরিশাল-পিরোজপুর-মংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতু। প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটি নির্মাণে চীন সরকার অনুদান দিচ্ছে প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা। অবশিষ্ট প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে। সেতু’র নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৩৫ ভাগ শেষ হয়েছে।
চীনা আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও বরিশাল, ভোলা ও পিরোজপুরের সাথে সমগ্র খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল ও ভোমড়া স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে। এমনকি চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ২শ কিলোমিটার পর্যন্ত হ্রাস পাবে।
সর্বোচ্চ জোয়ারের চেয়ে ৬০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণাধীন সেতুটির নিচ দিয়ে চট্টগ্রাম ও বরিশাল থেকে মংলা সমুদ্র বন্দরসহ খুলনা নদী বন্দরের সাথে পণ্য ও জ¦ালানিবাহী বড় ধরনের নৌযানের চলাচলও নির্বিঘœ থাকবে। পাশাপাশি নৌ বাহিনীর ফ্রিগেটসহ যেকোন ধরনের যুদ্ধ জাহাজের চলাচলেও কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। কঁচা নদীর মধ্যভাগে সেতুটির তলদেশে সবচেয়ে বড় স্প্যানটিতে ১২২ মিটার এলাকা নৌযান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেতুটির ভৌত কাজ প্রায় ৩৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও পিরোজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন।
কালনা সেতু : বরিশাল-কোটালিপাড়া-গোপালগঞ্জ-ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল-ভাংগা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কালনাতে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ৬ লেনের ‘কালনা সেতু’। প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ সেতুটির জন্য জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৭৫৩ কোটি টাকা। বাকী ২০৬ কোটি টাকা বাংলাদেশর নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
৭’শ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটি নির্মিত হলে বেনাপোলের সাথে সংক্ষিপ্ত এ সড়ক পথে আর কোন ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা থাকবে না। এমনকি দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপালের সাথে বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের সড়ক পথে দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার থেকে দেড়শ কিলোমিটার পর্যন্ত হ্রাস পাবে। দেশের প্রথম ৬ লেনের এ সেতুটির চার লেনে ভারি থেকে মাঝারি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মূল সেতুটি ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার’ প্রযুক্তিতে নির্মিত হলেও মাঝের ১৫০ মিটার দৈর্ঘের মূল স্প্যানটি নির্মিত হবে ‘নিয়েলসান লোস আর্থ টাইপ স্টিল গার্ডার টাইপ’এ। ইস্পাতের এই অংশটি নির্মিত হচ্ছে জাপানে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর হয়ে নৌপথেই পৌঁছবে আগামী আগস্টের মধ্যে। সেতুটির কাজ আগামী বছরের মধ্যে শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাপানের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘টেককেন-এএমএল-ওয়াইডিসি জেভি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক ক্রস বর্ডার প্রজেক্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।