বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
৪টি হত্যাসহ ১৯ মামলার আসামী মীর হোসেন মীরুকে নিয়ে ফতুল্লা থানার ওসি আসলামের সমঝোতা বৈঠক নিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। কুতুবপুরের বহুল আলোচিত সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরুকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে তুমুল উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে মীরু এলাকায় প্রবেশ করলে স্থানীয়রা এতে বাধা দিলে মীরু বাহিনীর সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সম্প্রতি দুই যুবককে মধ্যযুগীয় নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আলাউদ্দিন হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়েই এলাকায় প্রবেশ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তথা-কথিত নেতা মীর হোসেন মীরু। এসপি হারুনের আমলে সে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে আত্মগোপন করেছিল। এরমধ্যে মাঝে একবার স্থানীয় একটি বাজার কমিটির নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজিতও হন।
এদিকে মীর হোসেন মীরু এলাকায় ঢুকলেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসার বেড়ে যাবে, এমন দাবি করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ মানুষদের একটি পক্ষ। এ নিয়ে যখন চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো তখন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ মীর হোসেন মীরু ও চাঁদ সিকদার সেলিম গ্রুপের লোকজনকে থানায় ডেকে আনেন। রাত পৌনে আটটা থেকে Í রাত ৯টা থানায় ওসির রুমে সমঝোতা বৈঠক চলছিলো। তবে, এসময় ওসির রুমে অন্য কাউকে ঢুকতে বাধা দেন দায়িত্বরত কনস্টেবল।
তবে, থানা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) আসলাম হোসেন মীরুকে তার পাশে একটি চেয়ার টেনে দিয়ে বসিয়েছেন। তিনি অনেকাংশেই মীরুর পক্ষও অবলম্বন করছেন বলে জানা গেছে। এসময় থানায় ওসির রুমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, আমরা খবর পেয়েছি মীরু এলাকায় গেলে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে। এ কারণে মীরুসহ এলাকার লোকজনকে থানায় ডেকে এনেছি যাতে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা কেউ না করে।
প্রসঙ্গত, মীর হোসেন মীরুর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় ৪টি হত্যা মামলাসহ ১৯ টি মামলা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। গেল বছরের ২১ জানুয়ারি ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ একটি চাঁদাবাজি মামলায় তকে গ্রেফতার করে। এর আগে তৎসময়কার পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ মীরুকে তার কার্যালয়ে ডেকে শাসিয়ে দিয়েছিলেন অপরাধ কর্মকা-ের জন্য।
এলাকাবাসী বলছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফাজ্জলের হাত ধরেই মুলত মীরুর সন্ত্রাসী জগতে আগমন। তাদের মূলত কাজ ছিল মানুষ খুন করা। এছাড়া চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ হেন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি। ২০০৯ সালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দল নেতা তোফাজ্জল খুন হওয়ার পর তার শুন্যস্থান দখলে নেয় মীরু। মীরুর নিজে একটি প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন। অতি সম্প্রতি এই বাহিনীর এক কিশোর সদস্য অস্ত্রের ট্রেনিং নিচ্ছে, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ফতুল্লা পুলিশের সন্ত্রাসী তালিকায় সে ১০ নং আসামী। তবে চলাফেরায় সমস্যা হওয়ার কারণে পুলিশও তাকে প্রথমে গ্রেফতার করতে ইতস্ত করতো। কিন্তু মীরুর অপরাধ কর্মকান্ড থেমে থাকতো না। জেলা আওয়ামী লীগের একধিক শীর্ষ নেতার প্রভাবে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে।
স্থানীয় লোকজন জানান, মীরুর রয়েছে একটি প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে থেকে শুরু করে ভূমিদস্যুতা ও মাদক ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণকর্তা সে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা হিসেবেই পরিচিত মীর হোসেন মীরু। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। এরমধ্যে হত্যা, বিস্ফোরক, চাঁদাবাজি, মারামারি, মাদক মামলা অন্যতম।
২০০৯ সালে সন্ত্রাসী তোফাজ্জলের মৃত্যুর পর এলাকার আধিপত্য বজায় রাখতে মুখোমুখি মীরু ও সজল বাবুর্চি বাহিনী। চলে তুমুল গোলাগুলি। এই গোলাগুলি চলাকালে একটা সময় বাবুর্চি বাহিনীর আক্রমণে পিছু হটতে শুরু করে মীরু বাহিনী। দলবল নিয়ে গুলি করতে করতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নিজ পিস্তলের গুলিতেই সে আহত হয়ে পরে পুঙ্গত্ববরণ করে। সে ঘটনার পর থেকে সজল বাবুর্চির আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার আগে মীর হোসেন মীরুকে ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর গ্রেফতার করেছিলো ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। ওই বছর ৭ অক্টোবর রাতে পাগলা রেলস্টেশন এলাকায় ৪ যুবককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত ও গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার ঘটনায় দায়ের করা মামলা তাকে গ্রেফতার করা হয়।
একই বছরের ৩ মার্চে মীরু বাহিনীর এক সদস্য হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার করে বিপাকে পড়েছিলো ফতুল্লা থানা পুলিশ। এদিন মীরু বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে সেই সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
একই বছর ১০ ফেব্রুয়ারি শাহী বাজার এলাকায় ডিস ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ হলে ডিস ক্যাবল কর্মচারী শাজাহান নামে একজনকে প্রকাশ্যেই কুপিয়ে হত্যা করে মীরু বাহিনী। এ সংঘর্ষে আরও ৬ জনকে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহতও করে তারা। এ ঘটনায় মীরুকে প্রধান আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।
একই বছর ৫ জানুয়ারি মীরু বাহিনীর ৩ সন্ত্রাসীকে অস্ত্র, গুলি ও এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনা পুলিশ বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানা অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি এবং সালাউদ্দিন হাওলাদার নামে এক ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে আরও একটি মামলা করে।
২০১২ সালের ৩ নভেম্বর রাতে নিজ বাসা থেকে মীরু এবং তার সহযোগী ইকবালকে ৫ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি পিস্তল ও ১৩ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে র্যাব-১০। এঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মীরুর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা হয়।
২০১৩ সালের ১৪ অক্টোবর এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মীরু ও তার ক্যাডাররা ভাঙ্গাপুল এলাকায় গিয়ে জাকের পার্টি নেতা হোসেনের বাড়ির সামনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
২০১৪ সালে মীরুর বিরুদ্ধে মিছিলে অংশ নেয়ার অপরাধে এই বছরের ২৮ এপ্রিল রাতে স্থানীয় দুই সহোদর আব্দুর রহমান ও সজলকে শাহী বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায় মীরু বাহিনী। পরে তাদের এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। এঘটনায় মামলা হলে মামলাটি তুলে নিতে মীরু তার শ্যালক আরিফ, শরিফ ও রিয়াজ, রাজিবসহ ১৫-২০ জনের একটি দল ওই বছরের ১২ মে রাত ১২টায় আব্দুর রহমান ও সজলদের বাড়িতে বোমা হামলা চালায় এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় আরও একটি মামলা দায়ের হয় মীরু ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
২০১৫ সালের ১০ জুন নূরুল হককে নামে এক ব্যবসায়ীকে তার মায়ের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। ফতুল্লা মডেল থানায় মীরুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়। একই বছরের ১৯ মার্চ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর অভিযোগে এক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী মীরুসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর দু’দিন আগে এক এএসসি পরীক্ষার্থীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় এলাকাবাসীর উপর হামলা চালায় মীরু বাহিনী। এ হামলায় ২০ জন নিরীহ এলাকাবাসী আহত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।