বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
উট হত্যার উৎসব করল অস্ট্রেলিয়া। যুক্তি ছিল পানির অভাব। দুনিয়ার অনেকে প্রস্তাব করেছিল যেন প্রাণীগুলোর সদ্ব্যবহার করা হয়। হালাল উপায়ে গোশত সংরক্ষণ করে অভাবী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। পবিত্র হজের সময় যেমন লাখ লাখ কোরবানি নগদ ফ্রিজিং করে পরে জাহাজে সারা দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সে ‘নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ’ নীতির ফলে এখনই তারা এমন মানবিক প্রস্তাব মানা কিংবা নিজেরাই মানবিক চিন্তা করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমেরিকা ইউরোপেরও একই নীতি। তাদের অনুসারী নামধারী মুসলিম শাসকদের অবস্থাও অনেকটা তাই।
উটগুলো জবাই করা তাদের মাথায় আসেনি। অথচ, পশুদের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন তার রাসূলের মাধ্যমে পশুর জীবন হরণের সবচেয়ে কম কষ্টকর এবং মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর যে উপায়টি নির্দেশ করেছেন, সেটি হচ্ছে জবাই। পশুকে জবাইয়ের উদ্দেশে শোয়ানোর কিংবা তার মূল তিনটি রগ জবাইয়ের মাধ্যমে কেটে দেয়ার সাথে সাথে সে বোধ ও অনুভ‚তিহীন হয়ে যায়। তার মস্তিষ্ক কষ্ট অনুভব করার কমান্ড দেহকে আর দেয় না। এতে ক্ষতিকর রক্ত প্রবাহিত হওয়া পর্যন্ত পশুটি অস্ত্রোপচারের রোগীর মতো ঘোরের মধ্যে থাকে। এর গোশতও জীবাণু ও দূষণমুক্ত হয়ে যায়।
দুনিয়ার সব মানুষ জবাইকে এড়িয়ে চলে। যদিও তারা ইলেক্ট্রিক শক, বন্দুকের গুলি, হান্টারের আঘাতে মাথা চুরমার করে ফেলা, জীবন্ত অবস্থায় প্রসেসিং ইত্যাদি পন্থায় প্রতিদিন লাখ লাখ পশুহত্যা করে। এতে পশুর কষ্ট হয়। খাওয়া হারাম হয়। আল্লাহর বিধান অমান্য করা হয়। ইসলামের জবাই পদ্ধতি তাদের বোঝে আসে না। আল্লাহ বলেন, যারা সৎ পথের সন্ধান করে আমি তাদের বক্ষকে সত্য গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত করে দেই। আর যারা বিকৃত চিন্তার ধারক তাদের অন্তর বক্রতায় পূর্ণ থাকে। (আল কোরআনের মর্মার্থ)।
সারা দুনিয়ার যত মানুষ মুসলমানের কোরবানি নিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তোলেন, অস্ট্রেলিয়ার এ পশুহত্যার সময় তারা ভন্ডের মতো আচরণ করেছেন। চোখে ঠুলি ও মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিলেন তারা। ইসলামের আরেকটি অনন্য বিধান লাশ মাটিতে পুতে ফেলা। মৃত পশু তো অবশ্যই পুতে ফেলতে হয়।
হাজার হাজার উট খোলা আকাশের নিচে পচে গলে নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়। যে পানির জন্য উটগুলো মেরে ফেলা হলো, কয়েকদিন পরই সে পানি অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিপদ আকারে এসে উপস্থিত। বন্যায় ভেসে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার নানা অঞ্চল।
আল্লাহর দেয়া প্রকৃতি তিনি নিজে কুদরতের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। এর নিয়মের ভেতর মানুষ নিজেদের পরিকল্পনা সাজায়। প্রযুক্তি নিজে থেকে কোনো সমাধান দিতে পারে না। প্রকৃতি যদি মূল সাহায্যটি আল্লাহর হুকুমে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহই মানুষ অসহায়। আকাশ, ভূমন্ডল, আগুন, বাতাস, পানিরস্তর, প্রবাহ, সমুদ্রের স্তর, বরফ, সূর্যতাপ ইত্যাদি আল্লাহর হুকুমে সুনিয়ন্ত্রিত না থাকলে মানুষ বড় অসহায়।
এবারকার দাবানলে অন্তত দুনিয়ার মানুষ ভালো করে বুঝতে পারছে যে, তাদের ধারণার উন্নত ও সক্ষম অস্ট্রেলিয়া কত বড় অসহায় ও কতটুকু অক্ষম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।