পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের পুনরাবৃত্তি ঘটলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ছাত্রশিবিরের তকমা দিয়ে ৪ জন মেধাবী ছাত্রকে হলের গেস্টরুপে রাতভর পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। অথচ হলের আবাসিক শিক্ষক ও হল প্রশাসন নিরব দর্শকের মতোই সে নির্যাতনের পৈচাসিক দৃশ্য দেখেছে। অতপর তাদের থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হলে পুলিশ নির্যাতিত ছাত্রদের হাসপাতালে নেন। বুয়েটের আবরাকে হত্যার পর একই স্টাইলে ছাত্রলীগ ঢাবিতে রাতভর ছাত্র পেটানোয় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন। ডাকসুর ভিসি নূরুল হক নূর প্রশ্ন ছুঁড়ে জানতে চেয়েছেন ‘সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রশিবির তকমা দিয়েপেটানোর অধিকার ছাত্রলীগে কে দিয়েছে?’
এর আগে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ধরে এনে শেরেবাংলা হলে রাতভর পৈচাসিক কায়দায় পিঠিয়ে হত্যা করেছে। আবরার তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখে ভারতকে ফেনি নদীর পানি দেয়ায় চুক্তি করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে এই স্ট্রাটাস দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের দুই ডজন নেতা আবরারকে ‘শিবির’ তকমা দিয়ে রাতভর পিটিয়ে-খুটিয়ে হত্যা করে। ওই সময় বুয়েট প্রশাসন ছিল নীরব। আবরার হত্যাকান্ড ঘটনা দেশি-বিদেশী মিডিয়া হৈচৈ পড়ে যায়। ফুঁসে উঠে ছাত্রসমাজ। শিক্ষার্থীরা কুয়েটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি পালন করেন। বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তল হয়ে উঠলে কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অতপর মামলা এবং ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ ২৬ জন ছাত্রকে (সবাই ছাত্রলীগ নেতা) আজীবনের জন্য বহিস্কার করেন। এদের ২৫ জনই আবরার হত্যাকান্ড মামলার আসামী। লোমহর্ষক ওই ঘটনার পর ছাত্রলীগের ইমেজ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। সংগঠনটির নেতৃত্বে পরিবর্তন করে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ঘোষণা দেয়া হলেও বুয়েটের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সংগঠনটির নেতারা একই লোমহর্ষক পৈচাসিক কান্ড ঘটিয়েছে।
গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করেছে হল শাখা ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতারা। ওই রাতে হলের গেস্টরুমে নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটে। হলের আবাসিক শিক্ষকের সামনে নির্যাতন করা হলেও হল প্রশাসন নিরব দর্শকের ভ‚মিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এদিকে কোন শিক্ষার্থীকে মারধরের অধিকার ছাত্রলীগের নেই উল্লেখ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রুখে দিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাম্পাসে কর্মস‚চি পালন করেছে ১৩টি প্রগতিশীল সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র ঐক্য।
ছাত্রলীগের একটি স‚ত্রে জানা যায়, হলে থাকা ছাত্রদের ছাত্রলীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণে বাধ্য করে ছাত্রলীগ। এ রেওয়াজ বহুদিন থেকে চলে আসছে। ব্যতিক্রম হলেই জুলুম-নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় কর্মস‚চিতে অংশ না নেয়ায় শিক্ষার্থীদের জিঙ্গাসাবাদ করতে হলে গেস্টরুমে (ছাত্রলীগের জিঙ্গাসাবাদ সেল) ডাকা হয়। সেখান থেকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে আলাদা কক্ষে নেয়া হয়। এসময় পুলিশী রিমান্ডের মতোই ওই ছাত্রকে শিবির সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে নিতে ও শিক্ষার্থীকে গালাগালি করা হয়। স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে ছাত্রলীগ নেতারা। নির্যাতিত ছাত্রের চিৎকারে হলের অন্যান্য রুমের শিক্ষার্থীরা জেগে উঠেন। একপর্যায়ে আহত শিক্ষার্থীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে তার ফোনের কললিস্ট দেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে ও কক্ষে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। বেদম প্রহারের এক পর্যায়ে তারা উভয়ই মেঝেতে ঢলে পড়েন। এরপর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন এবং একই বর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে কক্ষে ধরে আনা হয়। সেখানে রাত ১টা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হায় পর্যায়ক্রমে।
স‚ত্র জানায়, মারধরে অংশ নেয় হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা। তারা রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে। রাতভর নির্যাতন ও মারধরে গুরুতর আহত হয়ে পড়েন ৪ শিক্ষার্থী। পরে রাত ২টার পর তাদের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেন আহত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের এ সংশ্লিষ্ট কোন প্রমাণ দিতে পারেনি ছাত্রলীগের ওই নেতারা।
নির্যাতনকারী হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা দম্ভোক্তি করে বলেন, তাদের কাছ থেকে শিবিরের দুটি বই উদ্ধার করেছি। তবে এরআগে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন হামলায় জড়িত আমির হামজা ৪ শিক্ষার্থীর শিবির করার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এরআগে আমির হামজা ঢাকা মেডিকেলে চাঁদা চেয়ে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে মারধরের কারণে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এর কিছুদিন পর ছিনতাইয়ের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে হল ছাড়তে নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগ। পরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের (চাঁদাবাজির দায়ে বহিস্কৃত) ছত্রছায়ায় আমির হামজা আবার হলে উঠে ত্রাস শুরু করে।
এদিকে শিবির সংশ্লিস্টতা প্রমাণ করতে পারেনি বলে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে স্বীকার করেন মারধরকারী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে বলেন, শালাদের অনেক মেরেছি। কিন্তু একটাও শিবির করার কথা স্বীকার করেনি। একজনের নামও বলেনি। নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা দুজনেই বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, শিবির সংশ্লিষ্টতা থাকায় চার ছাত্রকে থানায় দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের মারধর করা হয়েছে কি না, তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, কারও ওপর শারীরিক আঘাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে কোন অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বুধবার ৪ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ওই চার ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলমান থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতারা কিভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, এটা তো শৃঙ্খলা ভঙ্গ। যে বা যারাই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শিবির সন্দেহে বা ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের মারধরের অধিকার ছাত্রলীগের নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসু ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেছে ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের শিবির সন্দেহে মারার। ছাত্রলীগকে এই অধিকার কে দিয়েছে? তাদের কোন অধিকার নেই। দেশটি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের নয়। তিনি বলেন, তারা ভিপির উপর হামলা করে বলে জামাত-শিবির। এখন তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম রুখে দিতে আহবান জানাবো। নিরব থাকলে চলবে না। নিরব থাকলে ছাত্রলীগের হাতে মার খেতেই থাকবে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ১২টি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত সন্ত্রসবিরোধী ছাত্র ঐক্য। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে। ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ও জোটের সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন, ৪ শিক্ষার্থীকে মারধর ও বরিশালে আরেক ছাত্রকে পুলিশী হয়ারনীর প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। বৃহস্পতিবার ঢাবির ঘটনায় আমরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করব। হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে এক শিক্ষার্থীকে বিকেলে রাজু ভাষ্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মস‚চি পালন করতে দেখা গেছে। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঢাবি প্রক্টরকে ছাত্রলীগ থেকেও ভয়ঙ্কর দাবি করে ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন ভিপি নুরুল হক নুর। ভিপি নুর বলেন, দলকানা প্রশাসন ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনের পরেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জহুরুল হক হলে গতকাল রাতে চারজনকে ছাত্রলীগ নির্যাতন করে। তারা বেধড়ক পিটিয়েছে। যে নির্যাতন করেছে তা আমি শাহবাগ থানায় গিয়ে দেখেছি। তাদেরকে আবরারের মত পিটিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়েছে। হয়তো এই চারজনের মধ্যে কেউ একজনের আবরারের মতো পরিণতি হতে পারত।
এদিকে আবাসিক শিক্ষকের সামনে শিক্ষার্থীকে মারধর করা হলেও শিক্ষক নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে আহত এক শিক্ষার্থী। হলের আবাসিক শিক্ষক ড. বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন তিনি। আহত মুকিমুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের মারধর করার সময় স্যার ওখানে উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই আমাদেরকে মারধর করা হয়। তবে আবাসিক শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সামনে কোন মারধর করা হয়নি।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।