Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় হতাশ ৫ শতাধিক কৃষক

মিরসরাইয়ে করলার বাম্পার ফলন

প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে
‘‘করলা কখনো বাজার থেকে কিনে খাইনি, নিজে চাষ করে খয়েদেয়ে বাজারে বিক্রি করি এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও পাঠাই’’, হ্যাঁ এমনটাই বলছিলেন মিরসরাইয়ের দক্ষিণ আমবাড়ীয়া গ্রামের স্থানীয় কৃষক মাহফুজ। প্রতি মৗসুমেই বিভিন্ন রকমের ফসল আবাদ করেন নিজের জমিতেই। কখনো লাউ, কখনো কখনো টমেটো, কখনো শিম, কখনো শসা, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে থাকেন। এখন করছেন করলা চাষ। এই অঞ্চলে করলার চাষ কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে পানি জমেনা এরকম প্রায় সব মাটিতেই করলার চাষ ভালো হয়। স্থানীয় অপর একজন কৃষক হঞ্জু মিয়া বলেন, ‘প্রতি শতকে ১৫ থেকে ২৫ গ্রাম এবং প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। এর জন্য প্রথমে মাটি ঝুরঝুরে করি’। করলা বড় হতে কতদিন সময় লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে পাশের আরেকজন কৃষক বলেন, ‘বীজ, সেচ, চারা রোপণ থেকে শুরু করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত প্রায় দুইমাস সময় লাগে। স্থানীয় আরো দুইজন করলা চাষীর সাথে কথা বলে জানা গেল, করলা বর্ষাকালে মাটিতে চাষ করলে ফল একদিকে বিবর্ণ হয় বাজারমূল্য কমে যায় ও ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ণ কমে যাওয়ায় ফলনও কম হয়। উল্লেখ্য করলা তিতা হলেও পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে এটি কাজ করে। এদিকে, তীব্র রোদ, প্রবল বৃষ্টি কিংবা হাড় কাঁপানো শীত। আবহাওয়া যেমনই হোক না কেন চাষি জহিরের সারাদিন কাটে জমিতে। সেখানে রোপণ করা শাক-সবজি গাছগুলোকে পরম যতেœ বড় করে তোলাই তার একমাত্র কাজ। কারণ, এ গাছগুলো বড় হয়ে ফল দিলে তা বিক্রি করেই চলবে সংসার। গাছ যত ভালোভাবে বেড়ে উঠবে ক্ষেতে ফসলও ভালো হবে তত। ফলে ক্ষেত ও গাছের পরিচর্যায় কোনো গাফিলতি করেন না এই চাষি। কঠোর পরিশ্রমেও সবসময় মুখে হাসি ফোটে না। কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কখনো রোগের উপদ্রব আবার কখনো ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হয়ে কঠোর পরিশ্রম যায় বিফলে। তখন কিছুটা হতাশা গ্রাস করে বৈকি। তবে চাষাবাদ থেকে দূরে সরে আসেন না। কঠোর পরিশ্রমী কৃষক  জাহাঙ্গিরের বাড়ি আমবাড়িয়া গ্রামে। এই গ্রামেরই পাহাড়ের তলদেশে জাহাঙ্গিরের তিতা করলাসহ নানান সবজি ক্ষেত। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহের মধ্যেও তাকে নিজক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত দেখে তার চাষাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গির বলেন, আমার মতো চাষির কাছে ক্ষেতই ঘর-বাড়ি। তিনি জানান, মৌসুমভেদে প্রায় সবরকম সবজি চাষ করেন তিনি। এ মৌসুমে চাষ করেছেন করলা, শসা ও বেগুন। দুঃখের সাথে তিনি আরো বলেন, প্রতিকেজি করলা কিছুদিন আগে বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছিল ২০ টাকায়। এখন এক কেজি মাত্র ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থাৎ ২৫/৩০ টাকায়। লাভের অধিকাংশই চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারি ব্যবসায়ীদের পকেটে। সরকার এ বিষয়টি একটু নজর দিলে কৃষকদের পরিশ্রমের অধিকাংশ টাকা মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যেত না।   অপর এক কৃষক সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতি কেজি করলার পেছনে ৮/১০ টাকা কিংবা আরো বেশি খরচ পড়ে যায়। মৌসুমের প্রথম দিকে বিক্রি করতে পারলে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ সময় বিক্রি হয় এভাবে ১৪/১৫ টাকা কেজিতে। যার মানে কেজিতে গড়ে ৪/৫ টাকা লাভ করেই খুশি থাকতে হয় আমাদের। অথচ মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছু টাকা বিনিয়োগ করেই দ্বিগুণ, তিনগুণ লাভে বিক্রি করেন। সব সবজির ক্ষেত্রেই এ অবস্থায় পড়তে হয়ে কৃষকদের। তাই হাজার হাজার চাষি হতাশ।  এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, মিরসরাইতে এবার প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে ৫ শতাধিক কৃষক করলার চাষ করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেতে হাইব্রিড করলা চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষকরাও প্রচুর করলা নিয়ে যান বাজারে। কিন্তু দাম না পাওয়া নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় হতাশ ৫ শতাধিক কৃষক
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ